আবুল হাসনাত দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে সম্পাদনা করেন, তাঁর সম্পাদিত সংবাদের সাময়িকীতে আমার লেখা ছাপা হয়েছে ধারাবাহিকভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে। ২০০৪ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি সাহিত্যপত্রিকা কালি ও কলমের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন, সেই কালি ও কলম পত্রিকায়ও প্রথম থেকেই নিয়মিতভাবে তিনি ধারাবাহিকভাবে আমার কবিতা ও কিছু প্রবন্ধ ছাপিয়েছেন, আমার সৌভাগ্য যে তাঁর মৃত্যুর আগে, তাঁর সম্পাদিত কালি ও কলমের শেষ সংখ্যায়ও আমার একটি দীর্ঘ কবিতা ছাপিয়েছেন। আমার সাহিত্যজীবনে, আর কোনো সম্পাদকের কাছ থেকে এত দীর্ঘ সময় ও ধারাবাহিকভাবে এতটা অনুমোদন পাইনি! সাহিত্য পরিমণ্ডলে একটা ব্র্যান্ডিং চালু হয়েছিল যে আমাদের লেখা শ্রদ্ধেয় আবুল হাসনাত ছাপেন, আমরা সংবাদ ও কালি ও কলমের লেখক।

আমাদের সাহিত্যপরিমণ্ডলের অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়দাতা, যা–ই বলি না কেন, হঠাৎ তাঁর মৃত্যুসংবাদে আমরা যেন আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের গহ্বরে পড়ে গেলাম। স্বার্থপরের মতো আমরা তো মনে মনে ভেবেছিলাম, তাঁর হাত ধরে আমাদের সৃজনশীল স্পর্ধা আরও বহুদিন আমরা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে রাখতে পারব। সেটা আর হলো না। মনে হলো, আমরা খাদে পড়ে গেলাম।

আমাদের শ্রদ্ধেয় আবুল হাসনাতকে নিয়ে আমারও কিছু স্মৃতি রয়েছে—যা অনুরণিত হবে বেঁচে থাকা পর্যন্ত। আমি কতবার ভেবেছি, তাঁকে আমি একটি বই উৎসর্গ করব, কিন্তু পারিনি। পরমুহূর্তেই ভেবেছি, তিনি যদি ভাবেন, তোষামোদ করছি। সে কারণে তা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আরও ভেবেছিলাম, তাঁকে নিয়ে বা তাঁর কোনো বই নিয়ে লিখব। এমন ভাবনা থেকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘নির্বাচিত কবিতা’ বইটি কিনে নোটও করেছিলাম, কিন্তু সেই ইচ্ছাও অবদমিত রেখেছিলাম। তবে তাঁর সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’ নামের সংকলনটি নিয়ে একটি দীর্ঘ লেখা তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে লিখেছিলাম, তা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে প্রকাশিত ‘বই’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। তিনি দেখেছিলেন কি না, জানি না! সংকলনটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০০০ সালে, ঢাকার অবসর প্রকাশনা সংস্থা থেকে। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। ১২৬ জন কবির ২৭০টি কবিতা নিয়ে বইটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অলোকসামান্য কাব্য-দলিল হিসেবে পাঠক, লেখক, গবেষক ও ছাত্রদের কাছে সমাদৃত হচ্ছে। আমরা কজন তাঁর গুণগ্রাহী মাঝেমধ্যে আলাপও করেছি, তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, সে পথে আমরা যেতে পারিনি!

আমাদের সাহিত্যপরিমণ্ডলের অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়দাতা, যা–ই বলি না কেন, হঠাৎ তাঁর মৃত্যুসংবাদে আমরা যেন আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের গহ্বরে পড়ে গেলাম। স্বার্থপরের মতো আমরা তো মনে মনে ভেবেছিলাম, তাঁর হাত ধরে আমাদের সৃজনশীল স্পর্ধা আরও বহুদিন আমরা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে রাখতে পারব। সেটা আর হলো না। মনে হলো, আমরা খাদে পড়ে গেলাম।কালি ও কলমের অফিসে আবুল হাসনাত.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র স ও কলম র প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ