উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদ নিয়ে হবে ‘এসইএস’, পদোন্নতি হবে পরীক্ষায়
Published: 5th, February 2025 GMT
সব সার্ভিসের মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সচিবালয়ে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিয়ে একটি ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস)’ গঠনের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সব সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে ‘এসইএসে’ নিয়োগ পেতে পারবেন।
আজ বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তুলে দেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। পরে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ সাংবাদিকদের দেওয়া হয়।
বর্তমানে উপসচিব পদে পরীক্ষা ছাড়াই প্রশাসন থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ পদোন্নতি হয়। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রায় ও পর্যবেক্ষণ আছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বলছে, সব সার্ভিসের মধ্যে সমতা বজায় রাখতে ও জনপ্রশাসনের উচ্চপদে মেধাবীদের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত প্রশাসনিক সার্ভিসের (বর্তমান প্রশাসন ক্যাডার) ৭৫ শতাংশ কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার বিষয়টি অধিকতর যৌক্তিক হবে। বাকি ৫০ শতাংশ পদ অন্যান্য সার্ভিসের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলার রায় এবং পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তাই বিষয়টির আইনগত দিক পরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে সুপারিশে উল্লেখ করেছে কমিশন।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) পদোন্নতির পরীক্ষা নেবে এবং মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা শেষ করে চূড়ান্ত সুপারিশ সরকারের কাছে দেবে। প্রতিবছর একবার করে তিনটি পদের (উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব) জন্য আলাদাভাবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত। কেউ একবার উত্তীর্ণ হতে না পারলে তিনি পরের ব্যাচে আরেকবার পরীক্ষা দিতে পারবেন। কোনো কর্মকর্তা এসইএসে প্রবেশের পরীক্ষায় পরপর দুবার অকৃতকার্য হলে তিনি আর পুনরায় কোনো সুযোগ পাবেন না।
কমিশন বলছে, কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যেকোনো সার্ভিসের সিনিয়র স্কেল পাওয়া কর্মকর্তা ‘এসইএস’–এর উপসচিব পদের জন্য আবেদন করে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। পদোন্নতির লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর ৭০ শতাংশ। আর বার্ষিক পারফরম্যান্স প্রতিবেদনের জন্য ১৫ শতাংশ এবং বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ শতাংশ নম্বর নির্ধারণ করা হবে। ‘এসইএসে’ প্রবেশের পর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে সম্মিলিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মেধাক্রম অনুসারে। কোনো বিশেষায়িত সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তা একবার এসইএসে প্রবেশের পর তিনি আর তাঁর আগের সার্ভিসে ফেরত যেতে পারবেন না।
কমিশন তাদের সুপারিশে বলেছে, যেসব কর্মকর্তা বর্তমানে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে কর্মরত আছেন, তাঁরা সবাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসইএসে অন্তর্ভুক্ত হবেন। সচিব, মুখ্যসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসইএসের সদস্য হবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক পর ক ষ পর ক ষ য় উপসচ ব র জন য ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।