পটুয়াখালীতে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী মজিবুরকে (৫৫) মারধর করে বেঁধে রেখে বুথে চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেসময় আরো দুই দোকানে চুরির হয়। 

শনিবার (১৬ আগস্ট) ভোরে পৌর শহরের সদর রোডে এ ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে চোরের দল আদালতপাড়া সংলগ্ন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ফাস্টট্র্যাক এটিএম বুথে প্রবেশ করে নিরাপত্তাকর্মীকে বেধড়ক মারধর করে। পরে তাকে কম্বল দিয়ে বেঁধে একটি অন্ধকার কক্ষে ফেলে রেখে বুথের টাকার মেশিন ভাঙচুর ও ল্যাপটপ চুরি করে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর রাত ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে সদর রোডের ফ্যাশন অপটিক্যাল দোকানের তালা ভেঙে চোরেরা ভেতরে প্রবেশ করে। পরে তারা দোকানের মালামাল, মনিটর ও নগদ প্রায় ২ লাখ টাকা নিয়ে যায়। 

ভোর সাড়ে ৪টার সময় চোরের দল একই এলাকার শিকদার স্টোরের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে সিসি ক্যামেরার মনিটর, ক্যাশ কাউন্টারের টাকা ও রিচার্জ কার্ডসহ বিভিন্ন পণ্য চুরি করে নিয়ে যায়।

ফাস্ট ট্র্যাক এটিএম বুথের চ্যানেল অফিসার রিংকু বলেন, “চোরের দল আমাদের এটিম বুথ অফিসে প্রবেশ করে প্রথমে নিরাপত্তাকর্মীকে ব্যাপক মারধর করে। পরে বুথে টাকার মেশিন ভাংচুর করে এবং ল্যাবটপ নিয়ে যায়। নিরাপত্তাকর্মী মজিবুর গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথায়, মুখে ও চোখে আঘাত করা হয়েছে।”

ফ্যাশন অপটিক্যালের মালিক জাকির হোসেন বলেন, “আমার দোকানে নগদ দুই লাখ টাকা ছিল। চোরের দল দোকানের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে টাকাসহ সবকিছু নিয়ে গেছে।” 

সিকদার স্টোরের মালিক কামরুল ইসলাম জানান, ফজরের নামাজের সময় তালা ভেঙে দোকানে ঢুকে নগদ টাকা, রিচার্জ কার্ড, মনিটরসহ অনেক কিছু নিয়ে গেছে চোরের দল। 

পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। চোরদের আটকে পুলিশের অভিযান চলছে।”

ঢাকা/ইমরান/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ র র দল ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমি ভ্যান চালাই, আমার মেয়ে বিমানে চড়ে বিদেশে খেলতে যায়’

দারিদ্র্য, সামাজিক বাধা ও চারপাশের কটূ কথা—সবকিছুকে হারিয়ে দিয়েছেন অদম্য ফেরদৌসি আক্তার সোনালী। পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের ভ্যানচালক বাবার এই মেয়ে এখন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক। 

অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের খেলা শেষে লাওস থেকে দেশে ফিরেই এই ফুটবলকন্যা ছুটে এসেছেন জন্মভিটায়। দীর্ঘদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত বাবা ফারুক ইসলাম। গর্বের সুরে তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, “আমি ভ্যান চালাই, আমার মেয়ে বিমানে চড়ে দেশ-বিদেশে খেলতে যায়।”

সোনালী বেড়ে উঠেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রামে। বাবা ফারুক ইসলাম পেশায় ভ্যানচালক। মা মেরিনা বেগম গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সোনালী বড়। অভাবের সংসারে খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়া ছিল দুঃসাধ্য, কিন্তু ফুটবলকে ভালোবেসে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে এসেছেন ফেরদৌসি আক্তার সোনালী। জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের বাড়ি পর্যন্ত বাবার ভ্যানেই যান তিনি। সোনালী বাড়িতে পা রাখতেই জড়ো হতে থাকেন স্থানীয়রা। মেয়ের সাফল্যে বাবা ফারুক ইসলাম মিষ্টি খাওয়ান সবাইকে।

ফারুক ইসলাম জানান, সম্পদ বলতে তার আছে বসতভিটার ৭ শতক জমি। উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যান। এই ভ্যান চালিয়ে সংসার চালালেও মেয়ের স্বপ্ন পূরণে কখনো পিছপা হননি তিনি। অভাব-অনটনের সংসারে মেয়ের ফুটবল খেলা ছিল একসময় প্রতিবেশীদের কটাক্ষের কারণ। বাঁকা চোখে তাকাতেন গ্রামের মানুষজন, শোনাতেন কটূ কথা। তবে, কোনো বাধাই সোনালীর মনোবল ভাঙতে পারেনি।

সোনালীর বয়স এখন ১৮ বছর। ফুটবলের প্রতি তার আগ্রহ শুরু হয় স্থানীয় গইচপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়। সেখান থেকেই অংশ নেন বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। পরে ভর্তি হন হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ের হয়ে অংশ নেন আন্তঃবিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে। তখনই পঞ্চগড়ের টুকু ফুটবল একাডেমিতে শুরু করেন প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলন।

২০২৩ সালে তার ফুটবল প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ সুযোগ মেলে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি হওয়ার। বর্তমানে তিনি নবম শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি বিকেএসপিতে গোলরক্ষক হিসেবে কঠোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

ফেরদৌসি আক্তার সোনালী বলেছেন, “বিকেএসপিতে পড়াকালীন বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ মেলে। এরপর সিনিয়র টিমের সঙ্গে জর্ডানে খেলতে যাই। সেখানে বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন হই আমরা। সর্বশেষ এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে লাওসে খেলতে যাই। সেখানে রানার্স-আপ হয়েছি।”

বাবা ফারুক ইসলাম বলেন, “ছোটবেলা থেকেই সোনালীর ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল। অনেকেই নানা কথা বলত। আমার মেয়ে এসবে পাত্তা দিত না। অনেক সময় আমিও নিষেধ করতাম। তারপরও সে ফুটবল নিয়েই পড়ে থাকত। টানাপোড়নের সংসারে তাকে সেভাবে সাপোর্ট দিতে পারিনি। খেয়ে না খেয়ে অনুশীলনে যেত সোনালী। আজ আমার মেয়ে জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছে, দেশের হয়ে বিদেশে খেলছে— এটা আমার গর্ব।”

সোনালীর মা মেরিনা বেগম বলেছেন, “ফুটবল খেলে আমার মেয়ে অনেক পুরস্কার এনেছে। তার স্বপ্ন ছিল ফুটবলে ভালো কিছু করার। অনেক কষ্ট করে মেয়ে অনুশীলনে যেত। অনেক সময় টাকার অভাবে অনুশীলনে যেতে পারত না। মাঝে-মধ্যে আমরা নিষেধও করেছি, কিন্তু শোনেনি। এখন জাতীয় দলে ডাক পেয়েছে। আমার বিশ্বাস, সোনালী দেশের ফুটবলকে ভালো কিছু উপহার দেবে।”

সোনালী অনুশীলন করতেন পঞ্চগড় টুকু ফুটবল একাডেমিতে। একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান বলেছেন, “সোনালী দারুন সম্ভাবনাময় মেয়ে। ফুটবলে সফলতা পেতে অনেক কষ্ট করেছে সে। আমি তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলাম। সে আমার আশা পূর্ণ করেছে। সোনালীর মতো আরো অনেকেই এভাবে উঠে আসুক, এই প্রত্যাশা আমার।”

হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেছেন, “আমাদের ইউনিয়নের মেয়ে ফেরদৌসি আক্তার সোনালী। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা এই ফুটবলার আমাদেরও গর্বের। আমরা তার সাফল্য কামনা করি। সোনালী এবং তার দরিদ্র পরিবারের প্রতি প্রশাসন যেন সুদৃষ্টি রাখে, সে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

উল্লেখ্য, জাতীয় নারী ফুটবল দলের আরেক গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগমেরও বাড়ি পঞ্চগড়ের হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে। তারা দুজন পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দা। ইয়ারজানও অনুশীলন করেছেন টুকু ফুটবল একাডেমিতে।

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ