বাংলাদেশে জলবায়ু সংকট ও ঝুঁকি মোকাবিলায় সুশাসন জরুরি
Published: 6th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে পরিচিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতিরিক্ত বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড়, জলাবদ্ধতা, ভূমিধস ও লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। এই পরিবর্তনগুলোর ফলস্বরূপ, দেশের বৃহত্তর জনগণ বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনগণের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে। তবে জলবায়ু সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সুশাসনের অভাব, বৈষম্যপূর্ণ নীতিমালা এবং সঠিক পদক্ষেপের অভাব জলবায়ু সংকটকে আরো ভয়াবহ করে তুলছে, যা বাংলাদেশের জনগণের নাজুকতাকে আরো ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি করছে।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি মূলত বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা দেখে নিতে পারি।
২০২৪ সালে ফেনী জেলায় ভয়াবহ বন্যার কারণে বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বসতবাড়ি খাতে প্রায় ৭০ হাজার ৪১৫টি আধপাকা ও কাঁচা ঘর, আসবাবপত্র এবং বৈদ্যুতিক সামগ্রী পানিতে তলিয়ে গিয়ে আনুমানিক ৫৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, প্রায় ৬৭ হাজার ২৮৭টি কাঁচা-পাকা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সড়ক ও অবকাঠামো খাতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং সড়ক বিভাগের আওতাধীন সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্টে প্রায় ১৪০ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলার ৫৩৯টি সড়ক এবং ৬২টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মোট আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৮৮ কোটি টাকা।
কৃষি, মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ খাতে এই বন্যায় প্রায় ৯১৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ ক্ষতির পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৮ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ৪১৫ টাকা এবং আংশিক ক্ষতি ১৪ হাজার ৪৯ কোটি ৩১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৯ টাকা; যা মোট প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান। বন্যার কারণে ফেনী জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ জমি বন্যায় প্লাবিত হয়। ১৯৭০-২০০০ সাল পর্যন্ত ৩৪টি বড় বন্যার মধ্যে ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ, যেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ জমি প্লাবিত হয়েছিল। পাশাপাশি, ১৯৭০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে উপকূলে প্রায় ৫০টিরও বেশি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং হাজার হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২০০৭ সালের সিডর এবং ২০০৯ সালের আইলা ঘূর্ণিঝড়েও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
নদী ভাঙনও বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। প্রতি বছর নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমি নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর প্রায় ৩.
বৃষ্টিপাতের ধরনেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী শুষ্ক মৌসুম এবং অনিয়মিত বর্ষণের কারণে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ২০০৯ সালে বৃষ্টির অনিয়মিত প্যাটার্নের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যেও সমস্যা বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে গরম-জনিত অসুস্থতা, ডায়রিয়া, টাইফয়েডের মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগের বিস্তারও বেড়েছে।
সুশাসনের অভাব ও বৈষম্য
বাংলাদেশে সরকার ও প্রশাসন যখন জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে চায়, তখন প্রাসঙ্গিক নীতি ও কৌশলগুলো বেশিরভাগ সময় বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। প্রধানত তিনটি কারণ এখানে দায়ী: ১) দুর্বল শাসনব্যবস্থা, ২) বৈষম্যমূলক নীতিমালা এবং ৩) দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গ্রহণযোগ্য এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের ব্যর্থতা এটির অন্যতম প্রধান কারণ।
সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, সেগুলো জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না, বিশেষত প্রান্তিক জনগণের মধ্যে। উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা, যেমন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল, শহরের উন্নয়ন প্রকল্প এবং সড়ক সম্প্রসারণ প্রভৃতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সঠিক নজরদারি ও সম্পদ প্রাপ্তির অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে অনেক এলাকায় শাসনের গুণগতমান নেমে এসেছে এবং জনগণ সরকারের কার্যক্রমের সঙ্গে যথাযথভাবে যুক্ত হতে পারছে না।
উপকূলীয় অঞ্চলের সংকট
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষরা জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রথম শিকার। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং লবণাক্ততা এই অঞ্চলের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সরকার থেকে প্রাপ্ত সাহায্য ও নিরাপত্তা তহবিলের যথাযথ বণ্টন না হওয়ায় এবং প্রশাসনিক ত্রুটির কারণে স্থানীয় জনগণের দুর্দশা আরো বেড়ে যাচ্ছে। যেমন, সুন্দরবন এলাকায় পরিবেশগত অবক্ষয় এবং পশুর নদীর দূষণ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নজরদারির অভাবে এক ভয়াবহ সংকটে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় জনগণ, বিশেষত মৎস্যজীবী ও কৃষক সম্প্রদায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের জীবিকা হারাচ্ছে, অথচ তাদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে না। এই সকল মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হলেও তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়।
প্রান্তিক জনগণের প্রতি উপেক্ষা
বাংলাদেশে এমন জনগণের সংখ্যা অনেক যারা মূলধারার অর্থনীতি এবং শাসনব্যবস্থার বাইরে। আদিবাসী জনগণ, নারী, দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস প্রান্তিক মানুষের যারা রয়েছেন, তাদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরো মারাত্মক। তাদের জীবনে শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা এবং বৈষম্য আরো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
অনেক সময় এই জনগণের জন্য সঠিক অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি করা হয় না। বিশেষত, স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয় না। আদিবাসী জনগণের জলবায়ু অভিযোজনের জন্য তাদের নিজেদের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রার পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি উন্নত করা না হলে তাদের জন্য প্রকল্পগুলো তেমন ফলপ্রসূ হয় না। এছাড়া, নারীদের ভূমিকা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুযোগ সৃষ্টি না করলে তাও দুর্বল হয়।
সুশাসনের অভাব, দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তন
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অনিয়মিত বর্ষণ এবং জলাবদ্ধতার কারণে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রাপ্তির জন্য কৃষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং অর্থনৈতিক সহায়তা প্রায়শই ব্যাহত হয়। একদিকে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা এবং অন্যদিকে দুর্নীতির কারণে এসব জনগণের জীবনে অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং জীবনযাপনের অন্যান্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা সঠিকভাবে প্রদান করা না হলে, তারা আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই জনগণকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহনশীল হতে আরো বেশি সহায়তা প্রয়োজন।
সুশাসন ও সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কার্যকর শাসনব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবলমাত্র সরকারি উদ্যোগ নয়, বরং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই সফল হতে পারে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সরকারের প্রধান দায়িত্ব হল, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত কমিয়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া জরুরি।
বাংলাদেশে জলবায়ু সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে দুর্বল শাসনব্যবস্থা, বৈষম্য এবং প্রশাসনিক দুর্নীতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাসনব্যবস্থার গুণগত মান এবং কার্যকর নীতি প্রণয়নে ঘাটতি থাকার কারণে সমস্যাগুলো আরো জটিল আকার ধারণ করছে। যদি সরকার ও প্রশাসন জনগণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তবে এই সংকট ভবিষ্যতে দেশের জন্য বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠবে।
৫ আগস্ট-পরবর্তী বৈষম্যবিরোধের বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট কায়দার আমলাতন্ত্র থেকে সরে এসে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করা প্রয়োজন। এজন্য সরকারের শাসনব্যবস্থায় কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে, পাশাপাশি জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে এবং সুশীল সমাজকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সফল হওয়া সম্ভব। আর এই উদ্যোগ আমাদের এখনই গ্রহণ করতে হবে, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি নিরাপদ ও টেকসই পরিবেশে জীবনযাপন করতে পারে।
লেখক: পরিবেশকর্মী
ঢাকা/এনএইচ/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স থ ন য় জনগণ জনগণ র জ ঘ র ণ ঝড় সরক র র পদক ষ প ব যবস থ প গ রহণ বছর প র ক র যকর হয় ছ ল দ র বল র জন য পর ব শ ত হয় ছ র জ বন জলব য় জ বনয সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।
তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”
দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”
সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ