নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা ক্রিকেট পিচ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। বাজেট বাড়লেও মাটি ভরাটের অভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ায় খেলার সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় মাঠে পিচের এক পাশে পড়ে আছে মাটি সমান করার রোলার। কৃত্রিমভাবে লাগানো উন্নতমানের ঘাসগুলো হলুদ হয়ে আছে। উঠেছে বিভিন্ন ধরনের আগাছাও। আশপাশের মাটি থেকে উঁচুতে পিচ হওয়ায় খেলার সুযোগ নেই। মাঠের একপাশে শিক্ষার্থীদের ফুটবল খেলতে দেখা গেলেও ক্রিকেট থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, বিগত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন্দ্রীয় মাঠ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এতে মাঠের চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ক্রিকেট প্র্যাকটিস নেট ও ক্রিকেট মাঠ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু শুরু থেকেই নিম্নমানের কাজের অভিযোগ ওঠে। মান খারাপ হওয়ায় প্র্যাকটিস নেট ও ক্রিকেট পিচ প্রথমবারের পর আবার পুনরায় তৈরি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ক্রিকেট পিচ তৈরির জন্য প্রথমবার বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭৭ হাজার ২৮৮ টাকা। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় পরবর্তীতে ক্রিকেট পিচ তৈরির বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসে বিগত প্রশাসন। নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০ লাখ ১৮ হাজার ১৬৮ টাকা। এর মধ্যে নলকূপ স্থাপন, কৃত্রিম ঘাস লাগানো, মাটি ভরাট, জিট্যাক্সটাইল ফ্যাব্রিক্সসহ উন্নত মানের বিভিন্ন উপকরণ স্থাপন করা হয়। শুধু কৃত্রিম টার্ফ ঘাস লাগাতেই ব্যয় করা হয় প্রায় ৯২ হাজার টাকা। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তদারকি না থাকায় তা ইতোমধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে ব্যয় করা হয় ২০ লাখ ৯২ হাজার ৮৩৭ টাকা। তবে সেটিও মাঠের চারপাশে নির্মাণ করা হয়নি। বাউন্ডারি চিহ্ন হিসেবে মাঠের চার কোণায় নির্মাণ করা হয়েছে। ক্রিকেট প্র্যাকটিস নেট তৈরিতে ব্যয় হয় ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৩ টাকা।
বাকি দুটি কাজ শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হলেও পরিপূর্ণ হয়নি ক্রিকেট মাঠ তৈরি। শুধু ক্রিকেট পিচ তৈরি করেই ফেলে রাখা হয়েছে। করা হয় না পরিচর্যা, পিচের আশপাশে মাটি না থাকায় যাচ্ছে না খেলা। ফলে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে সেটি। মাটি ভরাট ছাড়া সেখানে ক্রিকেট খেলা আয়োজন করা সম্ভব না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রিকেট দলের বোলার আব্দুল্লাহ ইউসুফ বলেন, “আমাদের সমসাময়িক বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ক্রিকেট পিচ আছে, শুধু আমাদের নেই। ফলে আমাদের ম্যাচ খেলতে হয় নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অথবা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। আমরা প্র্যাক্টিস করি মাত্র ২ মাস।”
তিনি বলেন, “এ অল্প প্রস্তুতি নিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ এমন সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে খেলি, যাদের নিজস্ব মাঠ আছে। তারা অধিক ম্যাচ খেলার ও নিজেদের প্রস্তুত করার সুযোগ পায়।”
ফয়েজ আহমদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতাগুলো ক্রিকেট বলেই অনুষ্ঠিত হয় এবং আমরা নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে থাকি। কিন্তু নিজস্ব পিচ ও গ্রাউন্ড না থাকায় নোবিপ্রবি ক্রিকেট টিম বছরে সর্বোচ্চ দুই-তিনটি প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে। এতে করে আমাদের অনেক ভালো খেলোয়াড় থাকলেও তারা নিজেদের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ইভেন্টের জন্য প্রস্তুত করতে পারছে না।”
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি শরীরচর্চা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সঞ্জীব কুমার দে বলেন, “আমরা মাঠ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়ার পর প্রথমবার যাদের দিয়ে কাজ করিয়েছি, তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ বুঝে পাইনি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর ওই কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়। সেখানে সেন্ট্রাল পিচের সঙ্গে মাটি ভরাটের বিষয়টি ছিল। কিন্তু তারা কেন সেটি না করে শুধু পিচ তৈরি করেছে, আমার তা জানা নেই।”
পিচের পরিচর্যা না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু মাঠ তৈরি পুরোপুরি হয়নি, তাই পরিচর্যা করলেও তা কাজে আসবে না। যখন মাঠ প্রস্তুত হয়ে যাবে, তখন পরিচর্যা স্বাভাবিকভাবেই হবে। আর আমাদের গ্রাউন্ডম্যান নেই তাই কাজ করাও সম্ভব না।”
শরীরচর্চা বিভাগের পরিচালক ড.
মাটি ভরাটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জামাল হোসাইন বলেন, “শরীরচর্চা বিভাগকে প্রথমে দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্রিকেট মাঠ নির্মাণের। তারা যখন সেটি করতে পারেনি, তখন আমাদের দেওয়া হয়। আমরা সেটা করে দিয়েছি। আমাদের শুধু পিচ তৈরির বাজেট হয়েছে, আমরা ঐটা করেছি। মাটি ভরাট করার জন্য কোন অর্থ দেওয়া হয়নি।”
তিনি শরীরচর্চা বিভাগের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “তারা একটি মাঠ রোলার দিয়ে সমান করবে সেটাও পারে না। একটা ক্রিকেট পিচ তৈরি করতে পারে না। তাহলে তাদের কাজ কি?”
নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর মাধ্যমে মানসিক বিকাশ ঘটে। ক্রিকেট পিচের বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। বিগত প্রশাসন কাজটি সম্পূর্ণ করেনি। সেটি আমি ইতোমধ্যে শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি। পিচের আশপাশে মাটি ভরাটের জন্য ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। আশা করি মাটি ভরাট হয়ে গেলে ক্রিকেট মাঠটি পরিপূর্ণতা পাবে এবং শিক্ষার্থীরা খেলতে পারবে।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র র জন য ২০ ল খ
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩
ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ মূল্যমানের ৯ টন রড নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা থেকে অভিযুক্ত প্রতারক চক্রের তিন সদস্য কে গ্রেপ্তার করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। এ সময় প্রতারনা করে নিয়ে যাওয়া ৯ টন রড উদ্ধার করে পুলিশ।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কুমিল্লা জেলার হোমনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারনা করে নিয়ে যাওয়া রডসহ প্রতারক চক্রের তিন সদস্য কে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন নবী হোসেন মাসুম(২৫), শফিকুল ওরফে বেল্লাল (৪৭) এবং শেখ ফরিদ (৩৫)।
এর আগে প্রতারনা করে রড আত্মসাৎ করার অভিায়োগ এনে পাগলাস্থ চাকদা স্টীল এন্ড রি-রোলিং মিলস প্রাঃ লিঃ নামীয় প্রতিষ্ঠানে এজিএম কো-অর্ডিনেটর (সেলস্ এন্ড একাউন্স) মোঃ রাশেদ হোসেন বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় উল্লেখ্য করা হয়,মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাদীর প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি আল আমিনের সাথে পরিচয় হয় প্রতারক চক্রের মূল হোতা হোসেন তালুকদারের।
এক পর্যায়ে প্রতারক হোসেন তালুকদার ঢাকা বনানীর রহমান এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বাদীর প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে রড ক্রয় করার আলোচনা করে।
পরবর্তীতে চলতি মাসের ৮ তারিখ বিকেলে হোসেন তালুকদার তার মোবাইল ফোন ০১৩১৩১৫১৫১২ হতে বাদীর প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি মো: আলআমিন আরমানের মোবাইলে ফোন করে ১৫ লাখ টাকার মালামাল অর্ডার করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত আসামি হোসেন তালুকদার অপর আসামী সাহিদের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক নিকুঞ্জ উপ শাখা হইতে মিজানুর রহমান নামের প্রাইম ব্যাংকের একাউন্ট নং-২১৬৫২১৫০১৪৩৮৮ এর চেকের পাতা ৪২৬৯৬১৮ এর মাধ্যমে ১টি ক্লিয়ারেন্স চেক ও ডিপোজিট স্লিপ প্রদানের প্রেক্ষিতে বাদীর প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে ১৫ লাখ টাকা এসেছে বলে জানিয়ে রাত ১১ টার দিকে তার প্রতিষ্ঠান থেকে একটি ট্রাকে করে ১৫ লাখ টাকা মূল্যমানের (১৯,৪১০ কেজি রড) রড নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট ব্যালেন্স যাচাই-ছাইয়ের পর টাকা না পাওয়ায় একদিন পর ৯ সেপ্টেম্বর হতে একাধিকবার বার বার ফোন করলে সে নানা তালবাহানা করে। আজ দিব, কাল দিব বলিয়া টাকা না দিয়া প্রতারণার আশ্রয় নিয়া কালক্ষেপন করে ঘুরাইতে থাকে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নন্দন সরকার এ বিষয়ে জানান, প্রতারণামূলক আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়েরর পর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারকচক্রের অবস্থান নিশ্চিত জয়ে সোমবার সকালে কুমিল্লার হোমনায় অভিযান চালিয়ে রড সহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতারের পর গ্রেপ্তারকৃতদের একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।