ফটিকছড়িতে দল বেঁধে জমির টপসয়েল সাবাড়
Published: 15th, February 2025 GMT
রীতিমতো দল বেঁধে ফটিকছড়িতে টপসয়েল (জমির উপরিভাগ) কাটা হচ্ছে। মাটিখেকোরা ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করছে ইটভাটায়। কয়েকটি ইউনিয়নে মাটি ব্যবসায় জড়িতদের একটি অংশ রাজনৈতিক দলের পরিচয় ব্যবহার করেন। সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
পাইন্দংয়ে বশর-দিদার-সরোয়ার গ্রুপ, কাঞ্চননগরে মোবারক রাজামিয়া নজরুর গ্রুপ, দাঁতমারায় রানা গ্রুপ, হাসনাবাদে ইব্রাহীম-জসিম গ্রুপ, বাগানবাজারে আলমঙ্গীর-ফারুক-সুমন গ্রুপ, নারায়ণহাটে বেলাল-রমজান-বোরহান সওদাগর-আলতাব মেম্বার গ্রুপ মির্জারহাটে আলম গ্রুপ রাতে টিলা, পাহাড় ও ধানিজমির টপসয়েল কাটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সন্ধ্যা নামতেই মাটি কাটার তৎপরতা শুরু হয়। রাত গভীর হলেই খননযন্ত্র দিয়ে শুরু হয় মাটি কাটা। নির্বিচারে মাটি কাটার ফলে জমি ক্রমশ চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা জানায়, মাটিখেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও তাতে কাজ হচ্ছে না।
সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদ, ভূমি অফিস, নাজিরহাট পৌরসভার পুরোনো হালদা সেতুর পাশে, ফটিকছড়ি ও ভূজপুর থানায় যাতায়াতের বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাটিখেকোরা সোর্স লাগিয়ে রাখে। তাদের কাজ হচ্ছে প্রশাসনের গতিবিধির ওপর নজরদারির মাধ্যমে অভিযানের আগাম তথ্য জানিয়ে মাটি কাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া।
সরেজিমন দেখা যায়, নাজিরহাট পৌরসভার মন্দাকিনি বিল, পাইন্দংয়ের ফটিকছড়ি বিল ও যুগীনিঘাটা, পাট্টিলাকুল, শ্বেতকুয়া, দাঁতমারার শাদীনগর, রত্নপুর কাট্টাইল্যে টিলা, ভূজপুরের রাবার ড্যাম ও পুকিয়া বিল, সুয়াবিলের হাজিরখিল, হারুয়ালছড়ির লম্বাবিল ও মহানগর, শান্তিরহাট, কাঞ্চননগরের চমুরহাট, চেঙ্গেরকুল এলাকায় ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম্প ট্রাক, মাহেন্দ্র গাড়িতে করে ইটভাটাসহ জমি ভরাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নাজিরহাট মন্দাকিনি বিলটি এখন আর বিল নেই, বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখানে মোর্শেদ ও রুবেল নামে দু’জনের সিন্ডিকেট রাত-দিন মাটি কাটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাশের জমিতে গভীরভাবে মাটি কাটায় তাদের জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের জমির মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে। জমির ওপর দিয়ে মাটি বহনকারী গাড়ি নিতে বাধ্য করেন।
জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘ফসলি জমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। কয়েকদিন আগে সমন্বিতভাবে অভিযান চালানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি খননযন্ত্র আটক করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে। জড়িত কয়েক জনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ফটিকছড়ি বিশাল এলাকা তাই মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে এলাকার জনগণকে সচেতন হতে হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি জমিতে সস্তায় সচিবদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ তদন্তে কমিটি, কার্যক্রম স্থগিত
সরকারি জমিতে সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হককে। অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব।
তদন্ত কমিটি গঠনসংক্রান্ত আদেশ আজ রোববার প্রকাশ করা হয়েছে। ১৪ জুন প্রথম আলোয় ‘সরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নেন সচিবেরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান উল্লিখিত ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণ এবং হস্তান্তর কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য সেতু বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। এ ছাড়া সচিবসহ কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে সেতু বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, সেতু বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন ও তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশে কমিটির কার্যপরিধি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কী পদ্ধতিতে, কিসের ভিত্তিতে এবং কাদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে, তা তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। এ ছাড়া যাঁদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কিংবা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো জমি বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন কি না, তা–ও যাচাই করবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবে।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য আবাসন নির্মাণের জন্য কেনা ৪০ একর জমি থেকে ১ দশমিক ১৫ একর জমি নিয়ে ৪টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে আমলা ও কর্মচারীদের জন্য। এর মধ্যে তিনটি ভবন সচিব ও বড় আমলাদের জন্য। তাতে ১৬৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয়ে গেছে। বাকিগুলো ভবিষ্যতে সচিব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বরাদ্দের চিন্তা রয়েছে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। চারটির মধ্যে একটি ভবন রাখা হয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য, যেখানে ফ্ল্যাট রয়েছে ১১২টি।
ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে উত্তরা মডেল টাউনে (তৃতীয় ধাপ), যা দিয়াবাড়ি এলাকা নামে পরিচিত। সেখানে বিভিন্ন সময় সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদে থাকা সচিবেরা ফ্ল্যাট নিয়েছেন। ফ্ল্যাট পেয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রভাবশালী আমলারা। ফ্ল্যাট পাওয়া সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা ৩২। তাঁদের মধ্যে চারজন চাকরিতে রয়েছেন, দুজন অবসরের পর বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন, বাকিরা অবসরে গেছেন। সচিবদের বাইরে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা পেয়েছেন ফ্ল্যাট।
সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ ঘনিষ্ঠরাও পেয়েছেন পানির দামের ফ্ল্যাট। যেসব কর্মকর্তা সচিব পদে থেকে এসব ফ্ল্যাট নিয়েছেন, তাঁদের অনেকের আবার রাজউকের প্লট রয়েছে। সরকারি পদে থেকে তাঁরা ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট—দুটোই নিয়েছেন।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এর আওতায় বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি।
আরও পড়ুনসরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নিয়েছেন সচিবেরা, তালিকায় কারা রয়েছেন১৪ জুন ২০২৫