সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন কণ্ঠশিল্পী রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ শ্লোগানে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন উপস্থিত দলের নেতাকর্মীরা।

পরে ‘স্যরি’ বলে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে রক্ষা পান কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। এ সময় অন্য নেতারা মাইক হাতে নিয়ে নেতাকর্মীদের শান্ত করেন। পরে তিনি বক্তব্য না দিয়েই মঞ্চে বসে থাকেন। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে নিজ প্রাইভেটকারে সভাস্থল ত্যাগ করেন তিনি। ওই সময় কনকচাঁপাকে লক্ষ্য করে আবারও ভুয়া ভুয়া দুয়োধ্বনি দিতে দেখা নেতাকর্মীদের।

এর আগে বুধবার দুপুরে আলম চৌরাস্তায় কাজিপুর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত সিরাজগঞ্জ-১ কাজিপুর সংসদীয় আসনের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা এই ধরনের মন্তব্য করেন। মন্তব্যের পর তার প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। 

সভায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান লেবু, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, রকিবুল করিম খান পাপ্পু, ভিপি শামীম খান এবং রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ভিপি শামীম খান বলেন, ‌বক্তব্যের একপর্যায়ে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা বেফাঁস একটি কথা বলেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক কমিটিকে পকেট বলে ফেলেন। এ সময় নেতাকর্মীরা তাকে ভুয়া ভুয়া শ্লোগান দেন। পরে নেতাকর্মীদের শান্ত করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নির্দেশে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির ওই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ফলে তার এই বক্তব্যের মানে হলো ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা। এই কারণেই কনকচাঁপার বক্তব্য শুনে নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কনকচ প ব এনপ স র জগঞ জ ন ত কর ম দ র ব এনপ র কম ট র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা