বাণিজ্যযুদ্ধ কী ও কেন, এই যুদ্ধে কে জেতে
Published: 8th, March 2025 GMT
ট্রাম্প ২.০ জমানার শুরু। এর সঙ্গে আবারও শুরু হয়েছে বাণিজ্যযুদ্ধ। ইতিমধ্যে চীনের পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। মেক্সিকো ও কানাডার সব পণ্যেও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই দেশগুলোও বসে নেই, তারা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।
কিন্তু ট্রাম্পের এই ‘ট্যারিফোনমিক্স’ কি এত সহজ হবে? শুল্ক বাড়লে আমদানি করা জিনিসের দামও বাড়বে। সেই কারণে লোকে বিদেশি পণ্য কেনা তাৎপর্যপূর্ণ হারে কমালে শুল্ক বাবদ রাজস্ব কমেও যেতে পারে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এখনকার দিনে অর্থনীতি ও উৎপাদনপ্রক্রিয়া এমনভাবে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে এক দেশের পক্ষে আরেক দেশকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
বাণিজ্যযুদ্ধ কীবাণিজ্যযুদ্ধ বলতে মূলত বোঝানো হয় এমন এক অবস্থাকে, যেখানে একটি দেশ আরেকটি দেশের ক্ষতি করতে পণ্যের ওপর বিভিন্ন শুল্ক আরোপ ও কোটা সীমাবদ্ধতা প্রয়োগ করে। ফলে একসময় শুরু হয় রাজনৈতিক টানাপোড়েন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, একটি দেশ প্রথমে অন্য আরেকটি দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে। তারপর সেই দেশ শুল্ক আরোপ করা দেশটির পণ্যেও একই ধরনের শুল্ক আরোপ করে—এভাবেই ‘ইটের বদলে পাটকেল নীতি’র বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাণিজ্যযুদ্ধ। মূলত বাণিজ্যযুদ্ধের উদ্দেশ্য অনেক রকম হতে পারে। যেমন কোনো দেশ অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে বা শত্রুরাষ্ট্রের অর্থনীতির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে কোনো রাষ্ট্র আরেকটি রাষ্ট্রের সঙ্গে এই যুদ্ধের সূচনা করতে পারে।
শিল্পবিপ্লবের পর থেকে যতই সময় অতিবাহিত হয়েছে, ততই অস্ত্র আর বোমার বিধ্বংসী শক্তিকে পরাস্ত করে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের নানা প্রান্তের দেশগুলো মনোযোগ দিয়েছে শিল্প-বাণিজ্যভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশে। একটি বিষয় সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে। সেটা হলো, যে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি যত শক্তিশালী, পৃথিবীজুড়ে তার প্রভাবও তত বেশি। বর্তমান যুগে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে তার অর্থনীতির উত্থান ঠেকিয়ে দেওয়ার চেয়ে বড় হাতিয়ার আর কিছুই হতে পারে না। এ ছাড়া যুদ্ধ হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় উভয় পক্ষকে। সেই তুলনায় সামরিক যুদ্ধে না জড়িয়ে শত্রুরাষ্ট্রকে শায়েস্তা করার অন্যতম কার্যকর মাধ্যম হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি