রাজশাহীতে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত রিকশাচালকের মৃত্যু
Published: 12th, March 2025 GMT
রাজশাহীতে গত শুক্রবার বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাতে আহত রিকশাচালক গোলাম হোসেন রকি (৫৮) মারা গেছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
রামেক হাসপাতালের ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, সংঘর্ষের সময় রিকশাচালক গোলাম হোসেন রকির বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। এ ছাড়া তাঁর মাথায় আঘাত ছিল। ঘটনার পর থেকেই তিনি অজ্ঞান ছিলেন। গতকাল সন্ধ্যার পর তিনি মারা যান।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক হাসান বলেন, আহত রিকশাচালক মারা গেছেন বলে শুনেছি। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা হত্যা মামলা নেব।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আগের দিন রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার ফ্ল্যাটে অভিযান ও তাঁর ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপির দুই গ্রুপ। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রিকশাচালক রকি ওই রাতে রিকশা রেখে হেঁটে ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। সংঘর্ষের সময় বিএনপির একটি গ্রুপের কর্মীরা প্রতিপক্ষ ভেবে তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। রকির গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার সাহেবপাড়ায়। রাজশাহী নগরীর দড়িখড়বোনা মহল্লায় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ স ঘর ষ র সময় ব এনপ র দ
এছাড়াও পড়ুন:
১০ টাকায় গোসল, তেল ও মাজন ফ্রি
দিনরাত ২৪ ঘণ্টা, সারা বছর খোলা। গোসল করলে তেল ফ্রি। কোথাও কোথাও সঙ্গে দাঁতের মাজনও সংযুক্ত। একুনে খরচ ১০ টাকা। যতক্ষণ মনে চায়, গায়ে–মাথায় পানি ঢালা যায়। আপত্তি করার কেউ নেই। গোসলের এই প্যাকেজ আছে কারওয়ান বাজারের গোসলখানায়।
রাজধানীর অন্যতম প্রধান কাঁচাবাজার হলো কারওয়ান বাজার। এখানে সকাল থেকে সারা দিন চলে খুচরা ও পাইকারি বেচাকেনা। রাত গভীর হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবজি, ফলমূলসহ অনেক রকম পণ্যবোঝাই ট্রাক একের পর এক এসে থামে এখানে। এসব শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্যই কারওয়ান বাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু গোসলখানা।
কারওয়ান বাজারের উত্তর প্রান্তে ফলের আড়তগুলোর পাশে টিনের ছাউনির পাইকারি বাজারটি হাসিনা মার্কেট নামে পরিচিত। এখানে আছে কিছু পরপর পাঁচটি গোসলখানা। এক দুপুরে শুঁটকি মাছ পট্টির গোসলখানার সামনে দেখা গেল গায়ে শর্ষের তেল মেখে গোসলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মো. মুসা। তিনি এই মার্কেটেই ‘পিতা-মাতা হোটেল’–এর কর্মচারী। হোটেলের ওপরে কাঠের পাটাতন। সেখানেই কর্মচারীদের বিনা খরচায় থাকার ব্যবস্থা। বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া। শৈশবে এখানে এসেছিলেন। এখন যৌবন। জীবনের বড় একটা সময় এই মার্কেটেই কেটে গেছে। জানালেন, এখানে গোসল করতে লাগে ১০ টাকা। শর্ষে ও নারকেল তেলের দুটি বোতল আর একটি দাঁতের মাজনের ডিব্বা রাখা আছে ম্যানেজারের টেবিলের সামনে। যার যা প্রয়োজন ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো গোসলের সঙ্গে ফ্রি।
এক দুপুরে শুঁটকি মাছ পট্টির গোসলখানার সামনে দেখা গেল গায়ে শর্ষের তেল মেখে গোসলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মো. মুসা। তিনি এই মার্কেটেই ‘পিতা-মাতা হোটেল’–এর কর্মচারী। হোটেলের ওপরে কাঠের পাটাতন। সেখানেই কর্মচারীদের বিনা খরচায় থাকার ব্যবস্থা।এই গোসলখানাটি সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ব্যবস্থাপক কলিম উদ্দিন জানালেন প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এখানে এই চাকরি করছেন। এখানেই বিনা খরচায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। বেতন প্রতিদিন দুই শ টাকা।
ফলপট্টির পাশের গোসলখানায় গিয়ে দেখা গেল, ব্যবস্থাপকের টেবিলের পাশে ছোট আকারের একটি কাঠের তাক। সেখানে লাল, সাদা, গোলাপি ও নীল রঙের অনেক সাবান সারি করে রাখা। সাবানগুলো কাগজ দিয়ে পেঁচিয়ে রাবার দিয়ে আটকে রাখা। প্রতিটি কাগজে ফরহাদ, কবির, ইয়াছিন, সফিক এমন অনেকের নাম লেখা। ব্যবস্থাপক মো. ওলিউল্লাহ জানালেন, যাঁরা নিয়মিত গোসল করতে আসেন এই সাবানগুলো তাঁদের। আলাদাভাবে চেনার জন্য প্রতিটিতে আলাদা করে নাম লেখা আছে। এই গোসলখানা সারা বছর দিনরাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। প্রতিদিন এখানে দুই থেকে তিন শ লোক গোসল করেন। তবে শীতকালে সংখ্যা কিছু কমে বলে জানালেন তিনি।
সারা দিন খাটুনির কাজ। ধুলাবালিতে থাকতে হয়। গোসল না করে থাকা যায় না। গা ভেজালেই শান্তি। আশপাশে গোসলের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। কারওয়ান বাজারের এই গোসলখানাগুলোর পানি যেমন ঠান্ডা, জায়গাও পরিষ্কার। তাঁদের মতো অল্প আয়ের মানুষের জন্য এটা অনেক উপকারী।চাঁদপুরের উত্তর তরপুরচণ্ডী গ্রামের খোরশেদ আলমকারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেল, কিচেন মার্কেটের উত্তর পাশের নিচের তলায়, ডিএনসিসি মার্কেটের ওপরে ও নিচের তলায়, কাঠপট্টি মার্কেটসহ এই এলাকার মার্কেটগুলোতে অন্তত ১৭টি গোসলখানা রয়েছে। এসব গোসলখানায় শৌচাগারও রয়েছে। এ ছাড়া গোসলখানা ছাড়া শুধু গণশৌচাগার আছে প্রায় ২০টির মতো।
এসব গোসলখানায় প্রতিদিন কত মানুষ গোসল করেন সঠিক বলা অসম্ভব। তবে গোসলখানার ব্যবস্থাপকদের ধারণা, প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ গোসল করেন। গরমের সময় সংখ্যা বাড়ে এবং শীতে গোসলের ব্যবসায় কিছুটা মন্দা। কবে থেকে এসব গোসলখানা চলছে জানতে চাইলে এক ব্যবস্থাপক বলেন, কেউ বলে পাকিস্তান আমল থেকে, কেউ বলে ব্রিটিশ আমল। আদতে গোসলখানাগুলো কবে থেকে চলছে তার নির্দিষ্ট কোনো সময় জানা যায়নি।
চাঁদপুরের উত্তর তরপুরচণ্ডী গ্রামের খোরশেদ আলম ৫ বছর ধরে কাজ করেন ফলের আড়তে। আড়তেই থাকেন। তিনি বললেন, সারা দিন খাটুনির কাজ। ধুলাবালিতে থাকতে হয়। গোসল না করে থাকা যায় না। গা ভেজালেই শান্তি। আশপাশে গোসলের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। কারওয়ান বাজারের এই গোসলখানাগুলোর পানি যেমন ঠান্ডা, জায়গাও পরিষ্কার। তাঁদের মতো অল্প আয়ের মানুষের জন্য এটা অনেক উপকারী।