যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা ঘিরে মার্কিন সমর্থন হারানোর শঙ্কায় ইউক্রেন
Published: 23rd, November 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের তৈরি শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব বক্তব্য থেকে একটি ইঙ্গিত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা যদি ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা মেনে না নেয়, তাহলে তাদের পরিত্যাগ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রায় চার বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে সম্প্রতি ২৮ দফা ওই পরিকল্পনার বিষয়টি সামনে আসে। দফাগুলোর মধ্যে রয়েছে সংঘাত থামাতে ইউক্রেনকে নিজেদের পূর্বাঞ্চলের কিছু অঞ্চল রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হবে। এ ছাড়া নিজেদের সামরিক বাহিনীর আকার কমাতে হবে কিয়েভকে। দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তাও কমবে।
এই পরিকল্পনা নিয়ে গত শুক্রবার ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনা ‘মেনে নিতে হবে’। কারণ, তিনি আলাপ-আলোচনার মানসিকতায় এখন নেই। এই পরিকল্পনাই চূড়ান্ত নয়—এমনটা উল্লেখ করার পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, পরিকল্পনা না মানলে জেলেনস্কিকে একাই লড়তে হবে।
বিষয়টি নিয়ে শুক্রবারই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন জেলেনস্কি। সেখানে তিনি কঠিন এই বাস্তবতা স্বীকার করেন। একে উভয় সংকট হিসেবে উল্লেখ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। এর এক দিকে রয়েছে মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে হারানোর ঝুঁকি; অপর দিকে রাশিয়ার কাছে নতি স্বীকার করা। কারণ, ২৮ দফার অনেকগুলোই মস্কোর দাবির সঙ্গে মিলে যায়।
ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারায়, তাহলে এর পরিণতি হতে পারে গভীর। কারণ, দেশটিকে অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে বড় সহায়তা করে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। এসব সহায়তা বন্ধ হলে সেনা ঘাটতি, নড়বড়ে অর্থনীতি এবং মনোবল কমে যাওয়া সামরিক বাহিনী নিয়ে আরও সংকটের মধ্যে পড়তে পারে কিয়েভ।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, পরিকল্পনাটি নাকচ করা মানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটানো। এতে কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্ররাও কৌশলগত সংকটে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দেওয়া নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থেকে সরে যেতে পারে। শুধু জেলেনস্কিকেই নয়, ইউরোপীয় মিত্রদেরও ওয়াশিংটন বলতে পারে—তোমরা নিজেদের দেখভাল নিজেরাই করো।
আলোচনায় ইউক্রেন-ইউরোপএমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আজ রোববার জেনেভায় আলোচনায় বসার কথা ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্রদের। এই আলোচনায় যোগ দিতে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জেনেভায় পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউক্রেনের জন্য সুবিধাজনক একটি চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করতে চূড়ান্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর সুরাহা করা হবে বলে আশা করছি আমরা।’ ট্রাম্প ও জেলেনস্কির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘দুই প্রেসিডেন্ট একত্রে না বসা পর্যন্ত কোনো বিষয়েই ঐকমত্য হবে না।’
আজ সকালে জেনেভায় বৈঠক শুরুর আগে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে একাধিক বৈঠকের কথা ছিল বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিভিন্ন কাঠামোয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে। এসব আলাপ গঠনমূলক ও ইতিবাচক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউরোপের খসড়া পরিকল্পনাএসব বৈঠকে যোগ দিতে আজই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জেনেভায় পৌঁছান। ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন জেলেনস্কি। ই-৩ জোটের তিন সদস্য—ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদেরও বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে জেনেভায় যান ইতালির প্রতিনিধিরা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরিকল্পনাকে যুদ্ধ থামানোর একটি ভিত্তি বলে উল্লেখ করেছেন ইউরোপ ও পশ্চিমা নেতারা। তাঁরা বলছেন, এই পরিকল্পনা উন্নত করার জন্য আরও আলাপ-আলোচনার দরকার। এমন পরিস্থিতিতে জার্মান সরকারের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনাকে ভিত্তি করে ইউরোপের তৈরি আরেকটি পরিকল্পনা ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ও য ক তর ষ ট র র ইউর প য় ম ত ইউক র ন র কর মকর ত র পর ক
এছাড়াও পড়ুন:
টেকনাফে ১ লাখ ইয়াবা উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ পাচারকারী এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ও র্যাব-১৫ এর যৌথ টহল দল।
গভীর সাগরপথে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢোকার আগে চালানটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান।
আরো পড়ুন:
টেকনাফে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আটক ৪
রামুতে ৬০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক ১
গ্রেপ্তার হোসেন আহমেদ (৩৫) টেকনাফ উপজেলার উত্তর লম্বরি এলাকার নূর আহমেদের ছেলে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, রবিবার (২৩ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে গভীর সাগরে একটি নৌযানের সন্দেহজনক গতিবিধি ধরা পড়ে। তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি ও র্যাবের যৌথ টহল দল কচ্ছপিয়া, দরগাছড়া ও মিঠাপানিছড়া এলাকাজুড়ে কৌশলগত অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর নৌযানটি কচ্ছপিয়া ঘাটের কাছে অবস্থান নিলে পাচারকারীরা সাগরে নেমে ইয়াবা হস্তান্তর কার্যক্রম চালাতে থাকে।
এ সময় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে এক লাখ পিস ইয়াবাসহ একজন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে। তবে দুইজন পাচারকারী উত্তাল সাগরে নৌযান নিয়ে পালিয়ে যায়।
২ বিজিবির অধিনায়ক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হোসেন আহমেদ দীর্ঘ দিন ধরে মিয়ানমার থেকে মাদক সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাচারে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
হোসেন আহমেদ ও উদ্ধারকৃত ইয়াবা টেকনাফ থানায় সোপর্দ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।
ঢাকা/তারেকুর/বকুল