মাদারীপুরে পৌর শ্রমিক দলের একাংশের সভাপতি শাকিল মুন্সিকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার নতুন মাদারীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাকিল ওই এলাকার মোফাজ্জেল মুন্সির ছেলে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে মূল সন্দেহভাজন যুবলীগ থেকে শ্রমিক দলে যোগ দেওয়া লিটন হাওলাদারকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

সূত্র জানায়, মাদারীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আক্তার হাওলাদারের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা লিটন হাওলাদারকে সম্প্রতি মাদারীপুর পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি করা হয়। এ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা শ্রমিক দলের একাংশের সভাপতি শাকিল মুন্সির সঙ্গে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় লিটন হাওলাদারের। লিটন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি চাঁদাবাজি, লুটপাট, হত্যা, সংঘর্ষসহ একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় এ কমিটির বিরোধিতা করেন শাকিল মুন্সি। 

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলায় লিটনের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আক্তার দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে। তাঁর মামলার জামিন শুনানি ছিল রোববার। সমর্থকদের ধারণা ছিল, মামলায় কারাবন্দি আক্তার হাওলাদার জামিনে মুক্তি পাবেন। তাঁকে বরণ করে নিতে তারা আদালত চত্বরেও জড়ো হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে রোববার দুপুরে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ সংঘর্ষ ঘটে। বিকেলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। রাত ৯টার দিকে লিটন সমর্থক উপজেলা শ্রমিক দলের একাংশের সভাপতি শাকিল মুন্সিকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাকিল।

এ ঘটনায় রোববার রাতে শাকিলের লাশ নিয়ে থানার সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁর সমর্থকরা। সোমবার বিকেলে জানাজা শেষে তারা কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সেলিম মুন্সি ও হায়দার হাওলাদারের ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

নিহত শাকিলের পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটন হাওলাদার, আল আমিন হাওলাদার, জাহাঙ্গীর হাওলাদারসহ বেশ কয়েকজন হামলা করে শাকিলকে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিলে সেখানেই তিনি মারা যান। এ ঘটনায় শহরে বিক্ষোভ করেন বিএনপি সমর্থকরা।

মাদারীপুর জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কামরুল হাসান বলেন, মাদারীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আক্তার হাওলাদার। তাঁর এক ভাই জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। আরেক ভাই লিটন যুবলীগ নেতা। তারাই শাকিলকে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।

জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেমায়েত হোসেন বলেন, শাকিলকে আওয়ামী লীগের দোসররা খুন করেছে। এ হত্যার সঙ্গে লিটন হাওলাদার, আনোয়ার হাওলাদার, আলাউদ্দিন নপ্তী ও আকমল হোসেন খান জড়িত।

নিহত শাকিলের ভাই মাদারীপুর পৌর বিএনপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হাসান মুন্সি বলেন, ‘আমার ভাই শাকিলকে প্রতিপক্ষ লিটন, আল আমিন, জাহাঙ্গীরসহ বেশ কয়েকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো.

সাইফুজ্জামান বলেন, শাকিল মুন্সি নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। চারজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক প য় হত য এ ঘটন য় য বল গ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত পাঁচ বিএনপিকর্মী

নোয়াখালীর হাতিয়ায় হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপির পাঁচ কর্মী। তাদের মধ্যে চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার তমরদ্দি বাজারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ জন্য একই দলের অন্য নেতার অনুসারীদের দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা। 

আহত ব্যক্তিরা হলেন– সোহেল উদ্দিন (৩০), রুবেল (২৫), মো. রনি (২৬), এরশাদ (৩৫) ও পায়েল (২৫)। তাদের বাড়ি তমরদ্দি ইউনিয়নের আঠারোবেকী গ্রামে। আহত সবাই ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তানভীর হায়দারের কর্মী-সমর্থক।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে তমরদ্দি বাজারের একটি চা দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন। এ সময় কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পাঁচজন আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শিহাব উদ্দিনের ভাষ্য, সবার শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর চিহ্ন রয়েছে। কিছু আঘাত অনেক গভীর। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অনেকের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ জন্য চারজনকে রাতেই হাতিয়ার বাইরে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। 

ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তানভীর হায়দারের ভাষ্য, মঙ্গলবার ইউনিয়ন বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে আসার পথে হামলায় তাঁর কয়েকজন কর্মী আহত হন। এ ঘটনায় দুটি মামলা হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। ওই আসামিরাই বৃহস্পতিবারের হামলায় জড়িত। তারা সবাই উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের লোক।

তবে আলমগীর কবিরের দাবি, হামলায় তাঁর কোনো নেতাকর্মী জড়িত ছিলেন না। এমন অভিযোগ সত্য নয়। 

হাতিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খোরশেদ আলম বলেন, বিএনপি নেতা তানভীর হায়দার ও আলমগীর কবিরের লোকজনের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের বিরোধ অনেক পুরোনো। আগের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত পাঁচ বিএনপিকর্মী