বগুড়ায় দুজনের মৃত্যু, মদ পানের কারণেই কিনা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসক
Published: 29th, March 2025 GMT
বগুড়ায় অতিরিক্ত মদপানে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে আরও দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শুক্রবার রাতে তাদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দীন।
নিহতরা হলেন, বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া হাজী পাড়ার মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের পালক ছেলে আওরঙ্গজেব চিনতু (৩৫) ও ঠনঠনিয়া বটতলা এলাকার আবু তালেবের ছেলে রাসেল (৩০)।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা হচ্ছেন, ঠনঠনিয়া বটতলার মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে পিলু (৫৬) এবং একই এলাকার জয়দেব দাসের ছেলে সনি দাস (৩০)।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পিলু জানান, গত ২৭ মার্চ বিকেলে শহর থেকে প্লাস্টিকের বোতলে মদ কিনে আনেন রাসেল। ওই দিন বিকেলেই চারজন একসঙ্গে মদ পান করেন। রাতেই সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশের ভয়ে হাসপাতালে ভর্তির সময় তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বলে ভর্তি হন।
বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা.
চিনতুর পরিবারের একজন জানান, চিনতু ও রাসেল অনেক আগে থেকেই মদ পান করতেন। মদ পান করে অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তাদের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে চিনতু কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। বিকেল ৫টার পর অসুস্থবোধ করলে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চিনতু মারা যান। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার পর রাসেল মারা যান।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, চিনতু ও রাসেল মারা যাওয়ার তথ্য আমাদের কাছে নেই। সম্ভবত তারা রাস্তাতেই মারা গিয়েছিলেন। আর সনি নামে একজন ভর্তি আছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তবে তার কি ধরনের সমস্যা রয়েছে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘অতিরিক্ত মদপানে’ দুজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। মারা যাওয়া দুজনের পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে কোনও তথ্য দেননি। বিকেল ৩টার মধ্যে দুজনের মরদেহ পরিবারের পক্ষ থেকে দাফন করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, হাসপাতাল থেকে এই দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশকে অবহিত না করায় আপাতত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মদপ ন ম ত য দ জন র ম ত য
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা