বিশ্ববাণিজ্যে শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন
Published: 3rd, April 2025 GMT
বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করেছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব হবে বিপুল।
এই শুল্ক কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আয়ের চার্টের দিকে তাকালে। চার্টের শুল্ক নির্দেশক রেখাগুলো এক ধাক্কায় এতটা ওপরে উঠেছে, যা বিগত এক শতকের মধ্যে দেখা যায়নি। এমনকি এই রেখাগুলো গত শতকের ত্রিশের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উচ্চ সংরক্ষণবাদের সময়কেও ছাড়িয়ে গেছে।
ট্রাম্পের আরোপ করা এই বাড়তি শুল্কের প্রভাব এরই মধ্যে পড়া শুরু করেছে। রাতারাতি শেয়ারবাজারে পতন দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোয়। তবে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা বৈশ্বিক বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য যেসব পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে, সেগুলোই হবে এই শুল্কের প্রকৃত প্রভাব।
ট্রাম্পের নতুন নীতির কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে সর্বজনীন শুল্ক। আগামীকাল শুক্রবার রাত থেকে এই শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। এরপর কয়েক ডজন দেশের ওপর অতিরিক্ত হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওই দেশগুলোর উদ্বৃত্ত রয়েছে।
এশিয়ার দেশগুলোর ওপর যে পরিমাণে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা সত্যিকার অর্থেই চমকে দেওয়ার মতো। এই শুল্ক বৃদ্ধি হাজার হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং সম্ভবত পুরো দেশের ব্যবসায়িক কাঠামো ভেঙে দেবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গড়ে তোলা কিছু সরবরাহব্যবস্থা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়বে। অনিবার্য এই প্রভাব নিশ্চিতভাবে তাদের চীনের দিকে ঠেলে দেবে।
এটা কি শুল্ক ও করের মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরির প্রচেষ্টা? যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন দৃশ্যত দাবি করছে, এই শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে কর কমানোর লক্ষ্যে। তবে এই দুইয়ের মধ্যে দ্রুতই তাল মেলানোর সুযোগ সীমিত। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘এটা সামঞ্জস্য তৈরি নয়, এটা একটি জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি।’
কথিত এই ‘পাল্টা শুল্কের’ পেছনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের যে সূত্রটা রয়েছে, তা হলো তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে যেসব দেশের বেশি পরিমাণ উদ্বৃত্ত রয়েছে, সেসব দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা। এর অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির চেয়ে ওই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বেশি রপ্তানি করেছে। যখন কোনো দেশের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকছে না, তখন সেই দেশের পণ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে।
এর মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়। এই নীতির লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি শূন্যে নামিয়ে আনা। এটা বিশ্ববাণিজ্যের গতিপথ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য এবং বিশেষ করে এশিয়ার ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
দ্বিতীয়ত, এটা স্পষ্ট যে দ্বিপক্ষীয় দর–কষাকষি তেমন একটা তফাত তৈরি করেনি অথবা প্রকৃতপক্ষে কোনো তফাতই তৈরি করেনি।
ঘাটতি ও উদ্বৃত্ত বাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি স্বাভাবিক বিষয়, যেখানে একেক দেশ একেক জিনিস তৈরিতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে। যুক্তরাষ্ট্র এখন দৃশ্যত এই যুক্তিকে নাকচ করছে।
কিন্তু কারখানা সরিয়ে নিতে বছরের পর বছর লেগে যাবে। এশিয়ায় এই মাত্রায় শুল্ক আরোপ, বিশেষ করে ৩০ বা ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কারণে দ্রুতই পোশাক, খেলনা ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে বাকি বিশ্ব কীভাবে সাড়া দেয়।
ইউরোপ এখন যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলোর ভোগ্যপণ্য না কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর যে একচ্ছত্র আধিপত্য, সেটা ধাক্কা খেতে পারে।
আর যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষগুলোকে অবশ্যম্ভাবী মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সুদের হার বাড়াতে হতে পারে।
একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানো যাবে না বলেই মনে হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই শ ল ক ব যবস র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি জমিতে সস্তায় সচিবদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ তদন্তে কমিটি, কার্যক্রম স্থগিত
সরকারি জমিতে সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হককে। অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব।
তদন্ত কমিটি গঠনসংক্রান্ত আদেশ আজ রোববার প্রকাশ করা হয়েছে। ১৪ জুন প্রথম আলোয় ‘সরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নেন সচিবেরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান উল্লিখিত ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণ এবং হস্তান্তর কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য সেতু বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। এ ছাড়া সচিবসহ কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে সেতু বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, সেতু বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন ও তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশে কমিটির কার্যপরিধি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কী পদ্ধতিতে, কিসের ভিত্তিতে এবং কাদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে, তা তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। এ ছাড়া যাঁদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কিংবা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো জমি বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন কি না, তা–ও যাচাই করবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবে।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য আবাসন নির্মাণের জন্য কেনা ৪০ একর জমি থেকে ১ দশমিক ১৫ একর জমি নিয়ে ৪টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে আমলা ও কর্মচারীদের জন্য। এর মধ্যে তিনটি ভবন সচিব ও বড় আমলাদের জন্য। তাতে ১৬৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয়ে গেছে। বাকিগুলো ভবিষ্যতে সচিব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বরাদ্দের চিন্তা রয়েছে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। চারটির মধ্যে একটি ভবন রাখা হয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য, যেখানে ফ্ল্যাট রয়েছে ১১২টি।
ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে উত্তরা মডেল টাউনে (তৃতীয় ধাপ), যা দিয়াবাড়ি এলাকা নামে পরিচিত। সেখানে বিভিন্ন সময় সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদে থাকা সচিবেরা ফ্ল্যাট নিয়েছেন। ফ্ল্যাট পেয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রভাবশালী আমলারা। ফ্ল্যাট পাওয়া সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা ৩২। তাঁদের মধ্যে চারজন চাকরিতে রয়েছেন, দুজন অবসরের পর বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন, বাকিরা অবসরে গেছেন। সচিবদের বাইরে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা পেয়েছেন ফ্ল্যাট।
সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ ঘনিষ্ঠরাও পেয়েছেন পানির দামের ফ্ল্যাট। যেসব কর্মকর্তা সচিব পদে থেকে এসব ফ্ল্যাট নিয়েছেন, তাঁদের অনেকের আবার রাজউকের প্লট রয়েছে। সরকারি পদে থেকে তাঁরা ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট—দুটোই নিয়েছেন।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এর আওতায় বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি।
আরও পড়ুনসরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নিয়েছেন সচিবেরা, তালিকায় কারা রয়েছেন১৪ জুন ২০২৫