Samakal:
2025-08-01@13:10:29 GMT

তিন ফসলি জমি এখন জলাশয়

Published: 5th, April 2025 GMT

তিন ফসলি জমি এখন জলাশয়

ঠিক এক বছর আগে উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন সাতকানিয়ায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কাটায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে। একই সঙ্গে কেটে নেওয়া মাটি দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সেই জমি ভরাটের আদেশও দিয়েছিলেন আদালত। তবে ৯ মাসেও আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং এখন মাটিখেকো সিন্ডিকেট অস্ত্রের মহড়া দিয়ে দিবারাত খননযন্ত্র দিয়ে কৃষিজমির মাটি কাটছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। 
জানা যায়, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া  ইউনিয়নের মনেয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা আবদুল মুনাফ সাতকানিয়ায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কাটার বিষয়ে ‘ইটভাটা মালিকদের জোরপূর্বক মাটি উত্তোলন, হুমকিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন ও গ্রামীণ অবকাঠামো’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৯ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে একটি ইটভাটার মাটিকাটার কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেন। আদেশের পরও সংশ্লিষ্ট কৃষিজমির টপসয়েল কাটা অব্যাহত থাকায় বিষয়টি গত বছরের ২২ এপ্রিল বিচারপতি মোস্তাফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো.

আতাবুল্লাহর আদালতের নজরে আনেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী। শুনানি নিয়ে আদালত অবস্থান ব্যাখ্যা করতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সাতকানিয়া থানার ওসিকে ২৩ এপ্রিল দুপুরে ভার্চুয়ালি আদালতে যুক্ত হতে তলব করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ। পরে কৃষিজমি নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না জানিয়ে টপসয়েল কেটে কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপযোগী করার ঘটনায় যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়া কৃষিজমির উপরিভাগের কাটা মাটি (টপসয়েল) ৩০ দিনের মধ্যে বাইরে থেকে পলিমাটি এনে ভরাট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সাতকানিয়ায় ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন থেকে কত দূরে মাটি কাটা হচ্ছে এবং এতে করে রেললাইন হুমকির মুখে পড়ে কিনা তা-ও অনুসন্ধান করে রিপোর্টে উল্লেখ করতে হাইকোর্ট আদেশ দেন।
আদালতের নির্দেশের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত মাটিখেকো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, ভরাট করা হয়নি খননকৃত কৃষিজমিও। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমির মালিক ও সাধারণ কৃষকদের হাইকোর্টের এসব নির্দেশনা প্রশাসন যথাযথভাবে অবহিত করেনি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক মাসে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী ১০ বার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন  ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস। এতে ১০টি খননযন্ত্র জব্দ করা হয়। অন্যদিকে, এসিল্যান্ড ফারিস্তা করিম সাড়ে ৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং এক ব্যক্তিকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার পরপর যারা মাটি কেটেছিল তাৎক্ষণিক তাদের দিয়ে অধিকাংশ জলাশয় ভরাট করে দেওয়া হয়েছিল। হঠাৎ বর্ষা চলে আসায় পুরো বিল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে; ফলে বড় জলাশয়গুলো ভরাট করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে মাটিকাটা বন্ধে দিনরাত অভিযান চলমান রয়েছে। মাটি খেকোদের কোনোমতেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কেঁওচিয়া, কালিয়াইশ, পশ্চিম ঢেমশা, এওচিয়া, ছদাহা, কাঞ্চনা, নলুয়া, মাদার্শা ও ধর্মপুর ইউনিয়নে নির্বিচারে টপসয়েল কাটা হচ্ছে। কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহানী ও পাঠানিপুল এলাকা সংলগ্ন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশের তিন ফসলি জমি বিশালাকৃতির জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এসব কৃষিজমি থেকে ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর করে মাটি খনন করা হয়েছে। মাটিখেকোরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে ডাম্পার ট্রাকে কৃষিজমির মাটি পরিবহন করেন। এতে মহাসড়ক

 ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম (পূর্ব) এর প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো.মাহবুবুল করিম বলেন, ‘রেল লাইন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা হবে,  রেললাইনের কতদূর থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসকসহ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
স্থানীয়রা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় পদবীধারী এবং নামধারী অনেক নেতা কৃষিজমির টপসয়েল কাটার কাজে জড়িত ছিলেন। তাদের সাথে যুক্ত ছিল অন্য দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও। এখন প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এই অপকর্ম চলছে।
সরেজমিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মৌলভীর দোকান থেকে  কেঁওচিয়া ইউনিয়নের কেরানিহাট রেলক্রসিং এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একসময়ের তিন ফসলি কৃষিজমির মাঠ এখন বিরাট জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়াখাল, পাঠানিপুল ও আঁধার মানিক দরগাহর পশ্চিমে ঢেমশা এলাকায় সৃষ্ট জলাশয় থেকে পুনরায় মাটি কাটার জন্য পাম্প বসিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। এতে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মিটারবিহীন পানির পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছৈ দোহাজারী বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে দোহাজারী বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘জলাশয়গুলো থেকে মাছ ধরার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে, শুকিয়ে মাটি কাটার জন্য নয়।’ তবে, মোটা অংকের লেনদেনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
ঢেমশা বারি সিকদার পাড়ার কৃষক আবু জাহের সিকদার বলেন, ‘২০১৪ সালে রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে এক টাকাও না দিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার পাঁচ কানি জমির মাটি কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তখন অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হুমকির কারণে জায়গায় যেতে পারিনি। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরও আগের মতো একই কায়দায় চলছে ফসলি জমির মাটি কাটা। কোন জায়গায় বিচার পাচ্ছি না।’
কেঁওচিয়া ইউনিয়নের আবু সৈয়দ বলেন, ‘রেললাইন সংলগ্ন আমার মালিকানাধীন কৃষিজমির মাটি রাতের অন্ধকারে কেটে নিয়ে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। প্রথম দিকে মহাসড়কের দক্ষিণ পাশের জমির মাটি কেটে জলাশয়ে পরিণত করেছে। বর্তমানে উত্তর পাশের কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। একই অভিযোগ করেছেন কালিয়াইশ ইউনিয়নের রসুলাবাদ এলাকার মো. ওসমান। 
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মোস্তফা কামাল খান বলেন, ‘আমি নিজে গিয়ে মাটি কাটা বন্ধে অবস্থান নিয়েছি।’ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে মাটিকাটা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ কেউ করেননি, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ফসল উৎপাদনের জন্য টপসয়েল খুবই উপযোগী। মাটি কাটার কারণে প্রতিবছর আবাদি জমির পরিমাণ কমছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.ইকবাল সরোয়ার বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে মাটি সবচেয়ে মূল্যবান। টপসয়েলের ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চির মধ্যেই জৈব পদার্থ ও অনুজীবের ঘনত্ব সর্বাধিক এবং পৃথিবীর জৈবিক মাটির কার্যকলাপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ অংশে ঘটে থাকে। জমির জৈব উপাদান হ্রাস পেলে তা ফিরিয়ে আনতে ১৮ থেকে ২০ বছর সময় লাগে।’
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখে থাকে। মাটি কাটার ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সচেতন।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম বলেন, ‘মাটি কাটা বন্ধে ইউএনও ও এসিল্যান্ড দিন-রাত অভিযান চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেককে শাস্তির আওতায়ও আনা হয়েছে।’ হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কাটা জমি ভরাট করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। ইউএনও’র সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন ‘আপনার কাছে হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়ে কাগজ থাকলে দেন, দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সাতকানিয়ার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘মাটি কেটে কৃষি জমি ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় বন্ধে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ 
জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃষিজমির মাটি কাটার সম্পূর্ণ বিরোধী। পরিবেশ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে চট্টগ্রামের একটি সভায় জলাবদ্ধতার একমাত্র কারণ হিসেবে আমি মাটি কাটাকে চিহ্নিত করেছিলাম। আমি ডিসি সাহেবকে বলেছি, অবৈধ ইটভাটা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। আমি এজন্য পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করছি। প্রশাসন যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমার কর্মী দিয়ে হলেও ক্ষতিকর মাটি কাটা বন্ধ করা হবে।’
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘কৃষিজমির টপসয়েল কেটে যারা জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জন্য আমি ডিসি ও ইউএনওকে বলে দেব। কোন অবস্থাতেই কৃষকের ক্ষতি করা যাবে না।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ব যবস থ পর ব শ ন বল ন র জন য ন ত কর ম বল ন র ট কর উপজ ল ইটভ ট ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির সাবেক নেতার হুমকি, সরিয়ে ফেলা পোস্টার ইউএনওকেই লাগাতে হবে
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • মেঘনায় নদীতে অবৈধ বালু তোলায় ব্যবহৃত ৭টি খননযন্ত্র ও ১টি বাল্কহেড জব্দ