ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ৬৬টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব হিসাবে এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৬১ লাখ ৭ হাজার ২২১ টাকা রয়েছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। 

দুদকের পক্ষে কমিশনের উপপরিচালক মামলার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা তাহাসিন মুনাবীল হক এ আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সাবেক ডিএমডি মো.

আকিজ উদ্দিন (এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব) ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মর্জিনা আক্তার ও মো. সাদ্দাম হোসেনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এস.আলম গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের আত্মীয়-স্বজনের নামে বেনামে ভুয়া ঋণ ও বিনিয়োগ দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। 

তাদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করে মানিলন্ডারিং অপরাধ সংগঠন করে বিদেশে টাকা পাচার এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। 

অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এসব ব্যক্তিরা এবং তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাংক হিসাবের অর্থ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান নিষ্পত্তির পূর্বে বর্ণিত সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীতে এসব টাকা উদ্ধারকরণ দুরূহ হয়ে পরবে। এ কারণে এসব ব্যাংক হিসাবসমূহ অবরুদ্ধ করা একান্ত আবশ্যক।

ঢাকা/মামুন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এস আলম গ র প

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের সঙ্গে দেখা হলে অবশ্যই বিষয়টি জানতে চাইব

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালকে সম্প্রতি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ক্রিকেটে নিজের সেকাল-একাল, রাজনীতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, বিসিবিতে যুক্ত হওয়ার গুঞ্জনসহ নানা বিষয়ে সমকালের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তামিম ইকবাল। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সেকান্দার আলী। 

সমকাল : সম্প্রতি চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি তারুণ্য উৎসব মঞ্চে আপনাকে দেখা গেছে। এর পর অনেকে ভাবছেন, আপনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। আসলে কী?

তামিম ইকবাল : আমার একদমই রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা নেই। তাই বলে আমি রাজনীতিকে খারাপভাবে দেখি না। একজন সংগঠক বা ক্রিকেটারকে যেমন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ হতে হয়, তেমনি একজন রাজনীতিবিদকেও রাজনীতিতে প্রজ্ঞাবান হতে হয়। আমার রাজনীতিতে আসার সুযোগ ছিল, কিন্তু সম্পৃক্ত হওয়ার তাগিদ বোধ করিনি। আমার ওই রাজনৈতিক যোগ্যতা নেই। হ্যাঁ, চট্টগ্রামে বিএনপির তারুণ্য উৎসবে গিয়েছিলাম, তবে রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়। আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে, চট্টগ্রামের স্পোর্টস নিয়ে কথা বলার জন্য। আমি বক্তব্য দেওয়ার শুরুতেই বলেছিলাম, আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না। আমার বক্তব্যের পুরোটা জুড়ে তাই ছিল খেলা। ২০ বছর পরে গিয়ে কী হবে, কেউ বলতে পারে না। তবে এ মুহূর্তে রাজনীতি নিয়ে ভাবছি না। 

সমকাল : বিএনপি ঘরানার ক্রীড়া সংগঠকদের অনুষ্ঠানেও আপনাকে দেখা গেছে।

তামিম : ওখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চেয়ে খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকরা বেশি ছিলেন। যে কমিটি হয়েছে, দেখবেন সেখানে আমার নাম নেই। ক্লাব ক্রিকেট নিয়ে একটা কমিটি হতে পারে, সেখানে আমি থাকতেও পারি, নাও পারি। 

সমকাল : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্রীড়া সংগঠক হতেও তো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকতে হয়। 

তামিম : আমি আশা করব, এমন একজন রাজনৈতিক নেতা আসবেন, যিনি দেশের স্পোর্টসের স্বার্থে ক্রীড়াবিদদের বেছে নেবেন। স্পোর্টসের উন্নয়নে সঠিক মানুষ খুঁজে বের করবেন। আমি বলব না, আমিই সেই সঠিক মানুষ। তারা যাঁকে সঠিক মনে করবেন, তাঁকে খুঁজে নেবেন। আমি ওটার জন্য অপেক্ষা করব। 

সমকাল : আপনি যে ধরনের নেতার কথা চিন্তা করছেন, অদূর ভবিষ্যতে কি তাঁকে দেখা যাবে?

তামিম : এটি বলা কঠিন। আমি যেহেতু রাজনীতি করি না, তাই সব দলের কথাই বলব। নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের কথা কখনোই বলব না। নির্বাচন হলে কে জিতবে জানি না; তবে ধারণা করতে পারি। আমার কাছে মনে হয়, যারাই আসুক, তারা স্পোর্টসের লোকদের দিয়ে স্পোর্টস পরিচালনা করবেন। 

সমকাল : এত আগে আন্তর্জাতিক খেলা ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার কারণ কী?

তামিম : ২০২৩ সালে আমি যখন অবসরের ঘোষণা দিই তখন অনেক মিডিয়ার ধারণা ছিল, আবেগে ছেড়েছি। আসলে আমি ছয় থেকে আট মাস ধরে সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে কোনোরকম সহযোগিতা করা হচ্ছিল না। সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় অবসরের ঘোষণা দিই। হ্যাঁ, যেদিন ঘোষণা দিয়েছি, সেদিন আবেগাপ্লুত ছিলাম। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। 

সমকাল : তাহলে দলে কি আপনি একা হয়ে গিয়েছিলেন? 

তামিম : আমি সব সময় সবাইকে নিয়ে গল্প করতে পছন্দ করি। আড্ডা দিতে ভালোবাসি। এসব থেকে আমাকে একা করে দেওয়া হলে ভেঙে পড়া স্বাভাবিক। এর থেকে বেশি কিছু বলতে চাই না। 

সমকাল : ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের আগে সাকিবের একটি সাক্ষাৎকারে আপনার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তোলা হয়। সে বিষয়ে কিছু বলবেন?

তামিম : যা কিছু হয়েছে বা বলেছে, তা বলা কতটা উচিত ছিল, তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমার কাছে মনে হয়, জিনিসটা কেউই ভালোভাবে নেয়নি। ওই সময়ে যা কিছু হয়েছে, তা না হলে এখন আমরা আরও ভালো জায়গায় থাকতাম। 

সমকাল : সাকিবের মন্তব্যে কষ্ট পেয়েছিলেন?

তামিম : কষ্ট পাওয়ার চেয়ে বিস্মিত হয়েছিলাম বেশি। সে তার মতামত দিয়েছে। কিছু ভুল তথ্য দিয়েছে। ওখানে সাকিব একটা কথা বলেছে– আমি বেছে বেছে ম্যাচ খেলতে চেয়েছি। এটা সে কোথায় পেয়েছে? ফিজিও বলেননি, নির্বাচকরা বলেননি, আমিও বলিনি। কোনো দিন সাকিবের সঙ্গে দেখা হলে, আমরা আড্ডায় বসলে অবশ্যই বিষয়টি জানতে চাইব তাঁর কাছে। 

সমকাল : গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে নিউজ হয়েছে, আপনি সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে গালি দিয়েছিলেন। এটা কি সত্য?

তামিম : না, না। একদম মিথ্যা কথা। তাঁর সঙ্গে খুবই ক্রুদ্ধ আচরণ করেছি। আমি বেশি আক্রমণাত্মক ছিলাম। তাঁর দিক থেকে কোনো খারাপ কথা বা খারাপ জবাব আসেনি। আমি শতভাগ নিশ্চিত করতে চাই– কোনো বাজে শব্দ বা গালাগাল যাকে বলা হয়, ও রকম কিছু হয়নি। হ্যাঁ, অনেক শক্ত কথা বলেছি। যেভাবে বলেছি, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। হয়তো আরও ভালোভাবে বলতে পারতাম। তবে যা বলেছি, তার জন্য আমি দুঃখিত না। যেভাবে বলেছি, ওটার জন্য দুঃখিত হতে পারি। 

সমকাল : সাকিব-তামিমের সম্পর্কে বিভেদ তৈরি করে রাখা হয়েছিল। বিষয়টা কি এমন?

তামিম : যে মানুষগুলো এখন তাদের পদে নেই, তাদের নিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। কোনো দিন মুখোমুখি হলে অবশ্যই বলব। তবে সাকিব আর আমার ঝামেলার কথা মিডিয়া অনেক আগে থেকে জানত। খেলায় প্রভাব না পড়ায় মিডিয়া কিছু লিখেনি। বিসিবি সভাপতি (নাজমুল হাসান পাপন) প্রকাশ্যে বলে দেওয়ার পর থেকে মিডিয়া লেখা শুরু করে। ২০২৩ সালে কেন বিষয়টি সামনে এনে বিভেদ তৈরি করতে হলো? এ প্রশ্নের উত্তর তারা (পাপন) ভালো দিতে পারবেন। 

সমকাল : আপনাদের সম্পর্কের অবনতির কারণ কী ছিল? তারকা খ্যাতি?

তামিম : না। একদমই না। অনেকে বলে, কে কার চেয়ে সেরা। কার এনডোর্সমেন্ট বেশি। এগুলো কিছুই আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারেনি। আমি সব সময় বলেছি, বাংলাদেশের স্পোর্টসে সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব। আমি নিজেই যখন এটা বলি, তখন তারকা খ্যাতি সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে না। আমার মনে হয় না, সাকিবও কখনও এভাবে চিন্তা করেছে। বন্ধুত্বের মধ্যে দূরত্ব অনেক কারণেই হতে পারে। তবে আমাদের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব ঘোচাতে বিসিবি থেকে কেউ চেষ্টা করেননি। তারা আলাদাভাবে কথা বলেছেন, দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেননি।

সমকাল : আপনি নিজে উদ্যোগ নিয়েছেন?

তামিম : অধিনায়ক হিসেবে আমি সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা করেছি। কয়েকবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি। তবে ভবিষ্যতে হবে না, তা মনে করি না। 

সমকাল : আপনার অসুস্থতার সময়ে সাকিব তাঁর ফেসবুক পেজে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তাঁর বাবা-মা আপনাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন। 

তামিম : আমরা দু’জনই পরিণত। আমাদের দু’জনের প্রতি দু’জনের কিছু রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে আমরা কখনও সামনাসামনি হলে এবং নিজেরা কথা বলা শুরু করলে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে। 

সমকাল : ভারতে শেষ টেস্ট খেলেছেন সাকিব। ওই সিরিজে আপনি ছিলেন ধারাভাষ্যকার। তখন কি কথা হয়েছে?

তামিম : ওই সফরে ওর শেষ ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। তবে আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, ওটাই ওর শেষ ম্যাচ কিনা। ওটা শেষ ম্যাচ হলে আমি বক্তব্য দিতাম সাকিবের ক্যারিয়ার নিয়ে। আমি ম্যানেজারকে সেভাবে বলে রেখেছিলাম। ওকে যতটা কাছ থেকে আমি দেখেছি বা সে আমাকে যতটা দেখেছে, তা অনেকে দেখেনি। আমার মনে হয়, সবাই ‘ডিজার্ভ’ করে, সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য কী করেছে– সেটা আমার মুখ থেকে শোনার। আমি খেলোয়াড় সাকিবকে নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলছি। আমার অন্য কোনো মতামত দেওয়ারও প্রয়োজন নেই, নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। খেলোয়াড় সাকিব আমার কাছে অনেক বড়। 

সমকাল : বিদেশে সাকিবের সঙ্গে দেখা হলে কী করবেন?

তামিম : আমি জিজ্ঞেস করব, তুমি কেমন আছ। সব ঠিকঠাক আছে তো (হাসি)। আমি নিশ্চিত ও আমাকে জিজ্ঞেস করবে, কেমন আছি। পরিবার ভালো আছে কিনা। আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি– ও আমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেবে না, আমি তাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেব না। এটা সম্ভব না। 

সমকাল : তাহলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেগুলো দেখা যায়?

তামিম : যেগুলো দেখেন, সেগুলো নোংরামি। তার সঙ্গে বিমানবন্দর, প্লেন বা কোনো জায়গায় দেখা হলে অবশ্যই আমরা কুশল বিনিময় করব। ওই আত্মসম্মান বোধটুকু আমাদের আছে। 

সমকাল : মাশরাফির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বা হয়?

তামিম : মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে এবং যোগাযোগ আছে। আমি হাসপাতালে থাকার সময় তিনি ফোন করেছিলেন। আমার জন্য দুশ্চিন্তায় ছিলেন। দোয়া করেছেন। ক্রিকেটার হিসেবে একটা সম্পর্ক তো থাকেই। এই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার নয়। 

সমকাল : মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ এখনও ক্রিকেটে আছেন। আপনার পরিকল্পনা কী?

তামিম : আগামী মাসে সিঙ্গাপুরে আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষা আছে। ৪ জুলাই ওখানে যাব। ৫ ও ৬ জুলাই টেস্টগুলো হবে। রিপোর্ট ভালো হলে আশা করছি, চিকিৎসক খেলার অনুমতি দেবেন। যেহেতু একটি বড় ঘটনা ঘটে গেছে, তাই বুঝেশুনে কাজকর্ম করতে হবে আমাকে। আল্লাহ সুস্থ রাখলে বিপিএল খেলার ইচ্ছা আছে। প্রিমিয়ার লিগের ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। সবকিছুই নির্ভর করছে সিঙ্গাপুরের রিপোর্টের ওপর। 

সমকাল : আলোচনা আছে, আপনার ফোকাস এখন ক্রিকেট বোর্ড। আপনি কি বিসিবিতে যুক্ত হতে চান? 

তামিম : আমি যেভাবে চিন্তা করছি, সেটা একটু ভিন্ন। আমরা বোর্ডে গেলে ক্রিকেটের ভালো করার জন্যই যাওয়া উচিত। এখন যেভাবে বিসিবি চলছে, ওইভাবে যেতে হলে না যাওয়াই ভালো। এ ব্যাপারে আমি খুবই পরিষ্কার। অনেকে প্রতিশ্রুতি দেন এই করবেন, ওই করবেন। আমার কাছে মনে হয়, কেউ বলে পরিবর্তন করতে পারে না, চেষ্টা করতে পারে। আমিও তাই বলব, আমি গেলে ভালো করার চেষ্টা করব। তবে শুধু শুধু বোর্ডের পরিচালক হওয়া বা কোনো পদ নেওয়ার শখ আমার নেই। কারণ আল্লাহ খেলার মাধ্যমে আমাকে অনেক দিয়েছে। 

সমকাল : বড় পরিবর্তন আনতে হলে তো বিসিবির নির্বাচিত সভাপতি হতে হবে। সেটা কি সহজ?

তামিম : একদম সত্যি কথাই বলেছেন। নির্বাচনটা কীভাবে হয়, তা আমরা জানি। আমি যে সুন্দর একটা বোর্ডের চিন্তা করছি, বাস্তবে সে সুযোগ কম। পরিবর্তন করা না গেলে আমাদের মতো লোকজনের দরকার কী? যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলুক। 

সমকাল : কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে কি নির্বাচিত পরিচালক হবেন?

তামিম : অবশ্যই চিন্তা করব। বলেছিলেন ভালো কাজ করতে হলে বোর্ডের শীর্ষ কর্তা হতে হবে। বিসিবিতে ২৫ জন পরিচালক থাকে। সবার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো থাকবে না। সবার সঙ্গে সবার বোঝাপড়া ভালো থাকবে না। তবে সবাইকে একটি দল হিসেবে কাজ করতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা। ২৫ জনের ১০ জনের উদ্দেশ্য ব্যক্তিস্বার্থ দেখা হলে তা আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করবে। ওই রকম পরিবেশে কাজ করা কঠিন। 

সমকাল : দেশের ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থাকে কীভাবে দেখছেন?

তামিম : বর্তমানে জাতীয় দলের তিন সংস্করণে তিনজন অধিনায়ক। আমার কাছে জিনিসটা কার্যকর মনে হয় না। আমরা এমনিতেই ধুঁকছি। সেখানে যেভাবে শান্তকে সরানো হলো, তা দুঃখজনক। বিসিবি যে কাউকে অধিনায়ক করতে পারে। মিরাজ খুবই ভালো প্রার্থী। কিন্তু শান্তকে সম্মান দিয়ে সরাতে পারত। উচিত ছিল আগে শান্তর সঙ্গে কথা বলা, পরে নতুন অধিনায়কের সঙ্গে। সবকিছু চূড়ান্ত করে মিডিয়ায় জানাতে পারত। হয়েছে উল্টোটা।

সমকাল : পঞ্চপাণ্ডবের শূন্যতা পূরণে বিসিবির কী করা উচিত?

তামিম : পাঁচজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সরে গেছে, যাদের ১৫ থেকে ১৭ বছরের অভিজ্ঞতা। তারা হাজারের মতো ম্যাচ খেলেছে। তারা শীর্ষ পারফরমার ছিল। এই মানের ক্রিকেটার সরে গেলে যে কোনো দলে শূন্যতা তৈরি হবেই। কথা হচ্ছে বিসিবি কি ক্রান্তিকালের জন্য প্রস্তুত ছিল? বোর্ড সচেতন থাকলে এত সমস্যা হতো না। এখন যারা আছে, তাদের বেশির ভাগই ৭ থেকে ১০ বছর ধরে খেলছে। আমি বলব, জাতীয় দলকে সব সুবিধা দেন, সিরিজ বা টুর্নামেন্ট খেলতে থাক। কিন্তু ফোকাস দেন এইচপি, টাইগার্স এবং ‘এ’ দলে। এই জায়গাগুলোতে বেশি বিনিয়োগ না করলে, ভালো খেলোয়াড় তৈরি করা সম্ভব না হলে জাতীয় দল সব সময় ধুঁকতে থাকবে।

সমকাল : আগামী বছর টি২০ বিশ্বকাপ, ২০২৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এই দুই টুর্নামেন্ট নিয়ে বিসিবির পরিকল্পনা কেমন হলে ভালো হয়?

তামিম : আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেটারদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেশি। দল হিসেবে ভালো করতে পারছে না। বোর্ডের ভেতরে অস্থিরতা। অধিনায়ক পরিবর্তন হলো। জিনিসগুলো খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে হয়তো। বিসিবির জন্য এ মুহূর্তে করণীয় হলো– দলের ভেতরে আস্থা ফিরিয় আনা। খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস দেওয়া যে– যা কিছুই ঘটুকু বোর্ড তোমাদের সঙ্গে আছে। এই খেলোয়াড়রাই কিন্তু ২০২৬ ও ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে খেলবে।

সমকাল : তাহলে কি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ ঠিকভাবে চলছে না?

তামিম : আমার কাছে মনে হয়, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যানের সিলেকশন মিটিংয়ে বসা উচিত না। একাদশ নিয়ে নাক গলানো উচিত না। তাঁর অধীনে তিনজন নির্বাচক আছেন; কোচ, সহকারী কোচ আছেন। সবাইকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। এর পর দল ফেল করলে জবাবদিহি চাইবেন। নিজেই সবকিছুতে জড়িয়ে গেলে নির্বাচক, কোচিং স্টাফকে প্রশ্ন করবে কে?

সমকাল : আপনি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান হলে কী করবেন?

তামিম : আমি চেষ্টা করব খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে। নির্বাচক প্যানেল, কোচিং স্টাফকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে তাদের কাছ থেকে পারফরম্যান্স আদায় করতে। অফ সিজনে এক-দু’জন ক্রিকেটারকে হলেও কাউন্টিতে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া। কাউন্টি দলের সঙ্গে নিজেদের টাকায় হলেও দু’জন কোচকে প্রতিবছর জুড়ে দেওয়া, যাতে তারা উন্নত কোচিংটা শিখতে পারেন। তারা শিখলে তাদের কাছ থেকে দেশের অনেক কোচ শিখতে পারবেন।

সমকাল : আপনার চোখে দেশের ভবিষ্যৎ তারকা কে বা কারা? 

তামিম : বর্তমান দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই আমাদের সঙ্গে খেলেছে। অনেকের ভালো পারফরম্যান্স আছে। পেস বোলিং বিভাগে তাসকিন আহমেদ আছে, নতুন এসেছে নাহিদ রানা। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল খুবই ভালো একজন বোলার। তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলীরা ভালো করছে। তাদের ভেতর থেকেই কেউ কেউ বড় তারকা হয়ে উঠতে পারে।

সমকাল : শেষ প্রশ্ন– বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

তামিম : আমি খুবই আশাবাদী। আমরা হয়তো সাময়িকভাবে ভালো করছি না। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলে ফল দেখতে পাব। আমরা আসলে তিন সংস্করণে একসঙ্গে কখনোই ভালো খেলিনি। এই দলটাকেও এক বছর সময় দিলে ঘুরে দাঁড়াবে। আমি চাইব, বিসিবি ক্রিকেটারদের সর্বাত্মক সাপোর্ট দেবে, তারা যেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারে।

সমকাল : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

তামিম : সমকালকেও ধন্যবাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ