শুক্রবারেও রাস্তায় পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা
Published: 19th, April 2025 GMT
সরকারের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার সারাদেশে কাফনের কাপড় পরে ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। বরিশালে মহাসড়ক অবরোধ এবং চট্টগ্রামে কফিন মিছিল হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
এদিকে আজ শনিবার সারাদেশে ‘রাইজ ইন রেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল জুমার নামাজের পর ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কাফন মিছিল বের করেন। তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকের পরনে ও মাথায় ছিল কাফনের কাপড় বাঁধা। মিছিল থেকে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। স্লোগানের মধ্যে ছিল– ‘মামা থেকে মাস্টার, মামাবাড়ির আবদার’, ‘এক হও এক হও, পলিটেকনিক এক হও’, ‘ষড়যন্ত্রের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দাও’।
পরে মিছিলসহ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম বলেন, সচিবালয়ে বৈঠক করে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। কিন্তু সেসবের কোনো বাস্তবায়ন নেই। বৃহস্পতিবার আমাদের কর্মসূচি শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বানে শিথিল করা হয়। কিন্তু বৈঠকে গিয়ে দেখি শিক্ষা উপদেষ্টাও নেই, সচিবও নেই। তাই আমরা দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ না হয়, এমন কঠোর কর্মসূচিতে যাব।
গত বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে বৃহস্পতিবার তারা সারাদেশে ‘রেল ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তবে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের ঘোষণায় কর্মসূচি শিথিল করেন তারা। বৈঠকে সন্তুষ্ট না হতে পেরে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ
বরিশাল ব্যুরো জানায়, ছয় দাবিতে গতকাল দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনরত কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েক শিক্ষার্থী কাফনের কাপড় পরে সড়কের ওপর শুয়ে পড়েন।
দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা নগরের সরকারি হাতেম আলী কলেজসংলগ্ন চৌমাথায় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। ফলে কুয়াকাটাসহ দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচ জেলায় দূরপাল্লা রুটের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে যান।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছয় দফা দাবিতে কফিন মিছিল করেছেন চট্টগ্রামের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
আজকের কর্মসূচি
দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটক অনির্দিষ্টকালের জন্য লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে আজ। একযোগে বেলা ১১টা ৩০ মিনিট থেকে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। পাশাপাশি ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে সড়কের দুই পাশে বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধন করবেন।
.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি