সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করা এবং তার সঙ্গে সাংবাদিকদের বাহাস ঘিরে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “ম্যাস মার্ডার ডিনায়ালের একটা সুক্ষ্ম চেষ্টা থেকে কালকের প্রেস কনফারেন্সে যে কথাগুলা বলেছেন তিন জন সাংবাদিক, সেই কথাগুলা জুলাই দেখেছে এমন যেকোনো সেনসেটিভ মানুষকেই আহত করতে পারে। যে মা তার সম্তান হারিয়েছে মাত্র আট মাস আগে, যে সম্তান খুনির গুলিতে আহত হয়েছে, যে বোন-যে ভাই শহীদ হওয়ার হাত থেকে বেঁচে এসেছে, তাদের বুকে শেলের মতো বিঁধেছে সাংবাদিক তিন জনের কথা।”

জুলাইকে নাই করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঘটনা থেকে মাত্র আট মাস দুরে দাঁড়িয়ে আমরা, খুনির বিচার হয় নাই এখনো। পশ্চিমে বিচার হওয়ার পরেও এখনো হলোকাস্ট ডিনায়াল মানুষের বুকে লাগে। আর কালকে যখন প্রশ্ন করা হলো, একজন খুনিকে খুনি বলা যাবে কিনা- এই প্রশ্ন জনতার জুলাইকেই বেমালুম নাই করে দেয়ার একটা চেষ্টা হিসাবেই দেখেছে সবাই।”

“প্রেস কনফারেন্সে তাদের কথাগুলা আমাকে বিস্মিত করলেও ধৈর্য নিয়ে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। তারপর মানুষ তাদের ক্ষোভ জানিয়েছে। এবং আজকে সন্ধ্যায় জানলাম চ্যানেলগুলা তাদের চাকরীচ্যুত করেছে। প্রত‍্যেক চ‍্যানেলেরই নিজস্ব এডিটোরিয়াল পলিসি থাকে। তারা সেই পলিসির আলোকে কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাদের ব‍্যাপার। তারপরও অনলাইনে কাউকে কাউকে একটা কথা বলার চেষ্টা করতে দেখছি যে আমাকে প্রশ্ন করায় চাকরী গেছে তাদের।হাস্যকর কথা। বিষয়টা যে আমি না, বিষয়টা যে জুলাই এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পলিসির ব্যাপার- এটাও তারা বুঝতে পারছে না।” 

সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, “সবার উদ্দেশ্যে ফর দ্য রেকর্ড বলে রাখছি, তাদের চাকরীর ব্যাপারে আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নাই। এই বিষয়ে সংশয় থাকলে ওই চ্যানেলগুলার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই সবাই সত্য জানতে পারবেন। অনুমানে দুইয়ে দুইয়ে চার না মেলানোই ভালো।”

কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসরে ‘আলী’ নামে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের যাওয়া উপলক্ষে ২৮ এপ্রিল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি এবং ওই চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে নানা বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।

সেখানে সাংবাদিকদের থেকে প্রশ্ন আসে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে আয়োজিত বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার ইউনেস্কো স্বীকৃতি, শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মুখাকৃতির আদলে মুখোশ এবং জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানের নিহতের সংখ্যা নিয়ে।

পাল্টাপাল্টি কথায় প্রশ্নোত্তরের এই পর্ব অনেকটা বাহাসে পরিণত হয়। শুরুতে বসে উত্তর দিলেও এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েও কথা বলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।

সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্ন ঘিরে ওই তিন টেলিভিশন সাংবাদিকের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের ছবিসহ পোস্ট করা হয় ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স-জেআরএ’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজে।

এর মধ্যে দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ এবং তিন সাংবাদিকে বরখাস্ত বা অব্যাহতি দেওয়ার খবর আসে। জেআরএ এর ফেইসবুক পেইজেও বরখাস্ত বা অব্যাহতির চিঠি প্রকাশ করা হয়।

পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, এক সাংবাদিক গণহত্যার পক্ষ নিয়ে প্রশ্ন করার প্রেক্ষিতে দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে, সরকার এখানে কিছু বলেনি, কাউকে কলও দেওয়া হয়নি।

ওই ঘটনার জেরে দীপ্ত টিভির সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট মিজানুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বীকে বরখাস্ত করার কারণ হিসেবে সংস্কৃতি উপদেষ্টার ব্রিফিং নিয়ে করা অভিযোগের কথা এটিএন বাংলা কর্তৃপক্ষ বললেও বরখাস্তের চিঠিতে অতীতে ‘অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি’ কাজের উদাহরণ টানা হয়েছে।

এছাড়া, চ্যানেল আই অনলাইনের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে ‘পেশাদারিত্ব প্রদর্শন না করার অভিযোগের’ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক অর্থাৎ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিকুল বাসারকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বরখ স ত উপদ ষ ট সব ক প

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ