ভারত-পাকিস্তানকে অবিলম্বে সংঘাত ধামাতে বললেন ট্রাম্প, প্রয়োজনে সহায়তার আশ্বাস
Published: 8th, May 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতকে ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে তা অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, উভয় দেশের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং প্রয়োজনে সংঘর্ষ নিরসনে তিনি সহায়তা করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্প বলেন, ‘অবস্থা সত্যিই খুব ভয়াবহ। আমি উভয় দেশকে ভালোভাবে চিনি। উভয়ের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক আছে। আমি চাই তারা বিষয়টি মিটিয়ে নিক। আমি চাই তারা থামুক।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘তারা পাল্টাপাল্টি হামলা চালাচ্ছে। অন্তত এখন তারা থামবে বলে আশা করছি। উভয় দেশের সঙ্গেই আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমি চাই, এটা (সংঘাত) বন্ধ হোক।’
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যদি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি, তাহলে অবশ্যই করব।’।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ ইরানও এই উত্তেজনা নিরসনে এগিয়ে এসেছে। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন। ইরানি সংবাদমাধ্যমের বরাতে আল জাজিরা খবরটি নিশ্চিত করেছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে আরাকচি পাকিস্তান সফর করেন। দুই দেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে ইরান জানিয়েছে, তারা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। তেহরান বলেছে, তারা দুই দেশের সঙ্গেই ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখবে।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। এ হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এখন তা পাল্টাপাল্টি হামলায় রূপ নিয়েছে।
ভারতের হামলার পর পর এ ঘটনাকে ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দেশের মধ্যে চলমান সংকট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেছেন, ট্রাম্প বলেন, ‘এটা হতাশার। ওভাল অফিসের দরজা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমরা এ খবর শুনেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, অতীতের ইতিহাসের ভিত্তিতে মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তারা (ভারত-পাকিস্তান) দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু হত্যার নেপথ্যে ফ্রি ফায়ার গেম
নাটোরের বড়াইগ্রামে শিশুর লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রহস্য উদ্ঘাটনের তথ্য দিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে মিনহাজ হোসেন আবির (১০) নামে ওই শিশুটির লাশ উদ্ধার হয়। মহিষভাঙ্গার বনপাড়া পাটোয়ারী ফিলিং স্টেশনের কাছে নির্মাণাধীন মসলা মিলের ফাঁকা মাঠে পড়ে ছিল তার লাশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল ফোনে ফ্রি ফায়ার গেম নিয়ে দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে শিশুটিকে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে তারই বন্ধু।
মিনহাজ হোসেন আবির মহিষভাঙ্গার কাতার প্রবাসী মিলন হোসেনের একমাত্র সন্তান। সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো বনপাড়া আদিব ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। অভিযুক্ত শিশুটিও (১২) একই গ্রামের বাসিন্দা। সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আবিরের স্বজনরা জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে আবির তার বাবার স্মার্টফোন ও বাইসাইকেল নিয়ে বের হয়। সন্ধ্যার পরও সে না ফেরায় বড়াইগ্রাম থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা মিলন হোসেন। পরে রাতেই শুকনো পাতা দিয়ে লুকিয়ে রাখা মরদেহ পাওয়া যায়।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) শোভন চন্দ্র হোড় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আবির তার ওই বন্ধুর (১২) সঙ্গে বসে মোবাইল ফোনে ফ্রি ফায়ার গেম খেলছিল। খেলাকে কেন্দ্র করে দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ওই শিশুটি রেগে উঠে পাশে থাকা ইট দিয়ে আবিরের মাথায় বারবার আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় আবির। এ সময় পাশেই থাকা শুকনা গাছের পালার নিচে মরদেহ লুকিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায় ওই শিশু। শুক্রবার সকালে পুলিশ তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে আবিরকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
আবিরের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বনপাড়া পৌরসভার মহিষভাঙ্গা কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। আবিরের বাবা মিলন হোসেন ঈদের ছুটিতে দেশে ফিরেছিলেন। এভাবে একমাত্র সন্তান হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন তিনি। মিলন বলেন, ‘বছরখানেক পর ছেলেকে জড়িয়ে সময় কাটানোর জন্য দেশে ফিরেছিলাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে সে আমার মোবাইল ফোন আর সাইকেল নিয়ে বের হয়েছিল। ভাবিনি, এটাই হবে আমাদের শেষ দেখা।’ মিলন বলেন, ‘মোবাইলের আসক্তি থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করা এখনই সবচেয়ে জরুরি। সন্তানকে সময় দিন, ভালোবাসুন। কারণ সুযোগ হারালে কিছুই আর ফিরে আসে না।’