Samakal:
2025-11-02@15:37:58 GMT

মাকে নিয়ে সেরা ৫ সিনেমা

Published: 10th, May 2025 GMT

মাকে নিয়ে সেরা ৫ সিনেমা

পৃথিবীর আরও অনেক দেশের মতো আমাদের দেশে মে মাসের দ্বিতীয়  রোববার ‘মা দিবস’। এই বিশেষ দিনটিকে সামনে রেখে, মাভক্ত তরুণদের জন্য হাজির করা হলো মাকে নিয়ে বানানো সর্বকালের সেরা পাঁচটি সিনেমা। অনলাইন অবলম্বনে হাজির করলেন ইমাম হোসেন মানিক

ম্যাক্সিম গোর্কির উপন্যাস অবলম্বনে
মাদার
কিংবদন্তি রাশিয়ান সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কির বিখ্যাত উপন্যাস ‘মাদার’ বা ‘মা’ অবলম্বনে ১৯২৬ সালে একই শিরোনামে সিনেমাটি নির্মাণ করেন রাশিয়ান ফিল্মমেকার ভসেভোলোদ পুদোভকিন। জার শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ১৯০৫ সালে সংঘটিত রুশ বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে এগিয়েছে এর কাহিনি। শ্রমিক ধর্মঘটকে ঘিরে পিতা ও পুত্র পরস্পরবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করলে সংসার, সন্তান ও আদর্শ নিয়ে লড়াইরত এক মায়ের মহাকাব্যিক রূপায়ণ করা হয়েছে। উপন্যাসটি যাদের পড়া আছে, সিনেমাটি তাদের জন্য অনেক বেশি উপভোগ্য ও ভাবনা-জাগানিয়া হয়ে উঠতে পারে। বলে রাখি, সিনেমাটিতে মা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন কিংবদন্তি রাশিয়ান অভিনেত্রী ভেরা বারানোভস্কায়া। 

অলিভ হিগিংসের উপন্যাস অবলম্বনে
স্টেলা ডালাস
আমেরিকান সাহিত্যিক অলিভ হিগিংস প্রাউটির ‘স্টেলা ডালাস’ উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে ১৯৩৭ সালে এই ক্ল্যাসিক সিনেমাটি নির্মাণ করেন আমেরিকান ফিল্মমেকার কিং ভাইডোর। নাটকীয়তা ও রোমান্সে ভরপুর এই সিনেমাটি স্টেলাকে কেন্দ্র করে। 
কেন্দ্রীয় চরিত্রের অধিকারিনী অনেকটা 
পাগলাটে। এতে নাম ভূমিকায় প্রখ্যাত অভিনেত্রী বারবারা স্ট্যানউইকের অভিনয় এতটাই প্রাণবন্ত ছিল যে, প্রতিটি দৃশ্যে তাঁর আবেগকে মনে হয়েছে বাস্তব।
যারা ফিল্মপোকা, তারা পিসিতে হাইস্পিড ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে টরেন্ট 
বা অন্যান্য মুভি ডাউনলোডের ওয়েবসাইট 
থেকে ডাউনলোড করে এ সিনেমাটি দেখে 
নিতে পারেন। 

রাউল রুইজ পরিচালিত
কমেডি অব ইনোসেন্স
এ ছবির শুরুটাও নাটকীয়তা দিয়ে। সিনেমাজুড়ে একটি ছেলেকে নিয়ে দুই মায়ের কাড়াকাড়ি চলতে থাকে। দু’জনই ভালোবাসে ছেলেটিকে। পরবর্তী সময়ে ছেলেটি তার বন্ধুর সিদ্ধান্তে এক মায়ের ঘরে যায়। কেন সে বন্ধুর সিদ্ধান্ত বেছে নেয় এক মাকে? বন্ধুর সিদ্ধান্তটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ কি আর কোন মায়ের ঘরে যায়? আর অন্যমা-ই বা কী দোষ করলেন? যেই মায়ের ঘরে গেলো ছেলেটি সেই মাকে দেখতে চাইলে দেখে নিন ফরাসি এ সিনেমা। চিলিয়ান ফিল্মমেকার রাউল রুইজ পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ২০০০ সালে। এতে মা চরিত্রে ফরাসি অভিনেত্রী ইজাবেল হাইপারের অভিনয় অনেক দিন মনে রাখার মতো। আরেক মা চরিত্রে জ্যান বালিবাও করেছেন অনবদ্য অভিনয়।

প্যাট্রিক ডেনিসের উপন্যাস অবলম্বনে
আন্টি মাম
আমেরিকান সাহিত্যিক প্যাট্রিক ডেনিসের 
বেস্টসেলিং উপন্যাস সিরিজ ‘আন্টি মাম’ অবলম্বনে একই শিরোনামে ১৯৫৮ সালে এই কমেডি ফিল্মটি নির্মাণ করেন আমেরিকান ফিল্মমেকার মরটন ডিকস্টা। এতে অনাথ ভাতিজাকে ঘিরে মাতৃত্ব উথলে ওঠে এক মায়ের। তার প্রতি যে মমত্ব থাকে এই আন্টি মায়ের, তা যে কোনো কল্পকাহিনিকেও হার মানাবে। কিন্তু বাবা ছেলের প্রতি আন্টির ভালোবাসা দেখে শেষ পর্যন্ত কি নিজের কাছে ধরে রাখতে পেরেছেন ছেলেকে? আন্টি মামের কাছে কি এমন জাদুর কাঠি; যা দিয়ে সব কাবু করতে থাকেন তিনি? জানতে হলে দেখুন সিনেমাটি। সিনেমাটিতে আন্টি মামের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন আমেরিকান মঞ্চ ও চরচ্চিত্র অভিনেত্রী রোজালিন্ড রাসেল। এর জন্য অস্কার পুরস্কারে মনোনয়নও পান তিনি।

পেদ্রো আলমোদোভার
অল অ্যাবাউট মাই মাদার
সময়ের অন্যতম আলোচিত স্প্যানিশ-ফ্রেঞ্চ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন স্প্যানিশ 
ফিল্মমেকার পেদ্রো আলমোদোভার। এর কাহিনিও তাঁরই লেখা। 
আধুনিক জীবনের ব্যক্তি স্বাধীনতার নানা 
বিষয়আশয়কে ঘিরে এগিয়েছে এ সিনেমা। এর মা চরিত্রটি একজন সিঙ্গেল মাদার। একটি হাসপাতালে কাজ করেন তিনি। দেখভাল করেন লেখক হতে চাওয়া তাঁর কিশোর ছেলের। এক সময় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে ছেলেটি। ফলে বাড়ে নানাবিধ ঝামেলা। তা ধরেই এগোতে থাকে সিনেমাটির কাহিনি।
১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমায় মা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন আর্জেন্টিনার অভিনেত্রী সিসিলা রথ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর আম র ক ন চর ত র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অভ্যুত্থানের অনবদ্য দলিল

বাংলাদেশের সম্প্রচার সাংবাদিকতার পুরোধা ব্যক্তিত্ব সাইমন জন ড্রিংয়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল যমুনা টিভিতে। সে সময় কাজের ফাঁকে তিনি শুনিয়েছিলেন ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনাপ্রবাহ। সাইমন তখন বিবিসির প্রতিবেদক হিসেবে তেহরানে কর্মরত। তাঁর চোখের সামনেই ঘটেছিল সেই গণবিপ্লব। সাইমন বলেছিলেন, সাংবাদিকতা পেশার একটি বিশেষ সুবিধা আছে। একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইতিহাসকে রচিত হতে দেখেন।

ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদের উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং গ্রন্থটি হাতে পাওয়ার পর সাইমনের কথা খুব মনে হচ্ছিল। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বর্ষা বিপ্লবের ঘটনাগুলো খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন জীবন। নেত্রনিউজের সংবাদকর্মী হিসেবে তিনি শুধু এই অভ্যুত্থান কাছ থেকেই দেখেননি, পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন অভ্যুত্থানের অভূতপূর্ব সব মুহূর্ত।

গ্রন্থটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিল। জুলাই অভ্যুত্থানের শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের সংবাদ, ছবি ও স্মৃতিকথা। একথা সত্য যে সাংবাদিকের ক্যামেরা ও কলমে কোনো অভ্যুত্থানেরই পুরো চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়। নিশ্চিতভাবেই ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের বহু আত্মত্যাগের অনবদ্য গল্প এখনো অজানা। গ্রন্থটির ভূমিকায় ছবিশিল্পী জীবন আহমেদ লিখেছেন, জুলাই আন্দোলন চলাকালে ঢাকার রাজপথে, অলিতেগলিতে এমন সব দৃশ্যের জন্ম হয়েছে, যা কোনো ভিজ্যুয়াল মিডিয়া বা ফটোগ্রাফির সব সক্ষমতা দিয়েও ধারণ করা সম্ভব নয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের আবেগ, ব্যাপকতা ও মাহাত্ম্য উল্লেখ করে নিজের অক্ষমতার কথা তুলে ধরলেও ফটোসাংবাদিক জীবন তাঁর ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে ঠিকই এক জরুরি দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৭৬টি সংবাদছবিতে জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত ঘটনাগুলোকে চিরযৌবন দান করেছেন। পুলিশের সাঁজোয়া যান, গুলি, কাঁদানে গ্যাস, আগুন বা প্রতিবাদের বহ্নিশিখা ধারণ করেছেন ক্যামেরার লেন্সে। মৃত্যু, আর্তনাদ, অভিশাপ, প্রতিবাদ, প্রত্যাখ্যান ও পতন জীবন্ত হয়ে উঠেছে বইটির পাতায় পাতায়।

গ্রন্থটি যে কাউকে এক পরাবাস্তব জগতে নিয়ে যেতে পারে। প্রতিটি ছবিই যেন একেকটি গল্প। নির্যাতন-নিপীড়ন-বলপ্রয়োগ–হত্যাযজ্ঞের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। যে ইতিহাসের ধারাক্রম শুরু মধ্য জুলাই থেকে। ৩৬ পৃষ্ঠায় স্থান পাওয়া ১৪ জুলাইয়ের একটি ছবি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। যাকে বলা যায় আইকনিক, মোড় পরিবর্তনকারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিরো পয়েন্টে যাওয়ার পথে পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙে ফেলার এক অসাধারণ মুহূর্ত যে কাউকে স্পর্শ করবে। খুব সম্ভবত এটাই ছিল প্রতিরোধ ভাঙার সূচনা। এ ছাড়া ১৪ জুলাইয়ের স্মৃতিকথাতেও জীবন আহমদ এক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে শামসুন্নাহার হলের মেয়েরা থালাবাসন দিয়ে আওয়াজ করতে শুরু করে, তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার! পরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলেও এই থালাবাসন দিয়ে বিভিন্ন আওয়াজ ও স্লোগান শুরু হয়। (পৃষ্ঠা: ৩৪)

পরের দিনগুলো অগ্নিগর্ভ, শ্বাসরুদ্ধকর। রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বর্বর আক্রমণ, গায়েবানা জানাজা, শিক্ষার্থীদের জোর করে হল ত্যাগ করানো আর সংঘাতের জীবন্ত বিবরণ। মাঝখানে কয়েক দিন বিরতির পর আবার গণবিস্ফোরণ। তখন দিন-রাত এক করে ক্যামেরা হাতে ঢাকার রাজপথে ছিলেন জীবন। কখনো তাঁর ক্যামেরা ধারণ করেছে অগ্নিদগ্ধ যানবাহন, উত্তরার রাজপথ বা ঢাকা মেডিকেলে লাশের সারি। মাঝেমধে৵ আছে কয়েকটি হৃদয়বিদারক মৃত্যুর এপিটাফ। রিকশার পাদানিতে গোলাম নাফিজ, স্ট্রেচারে লাল-কালো চাদরে ঢাকা রিয়া গোপের মরদেহ, সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের আঘাত–জর্জরত পিঠ ও অন্যান্য। এই ছবিগুলোর প্রতিটিই মৌষলকালের একেকটি মর্মান্তিক গল্প।

৫ আগস্ট বিজয়ের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের ছবিটি অনবদ্য। এই সংবাদছবিটির দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকা যায়। লাল-সবুজের পতাকায় ছাত্র-জনতার উল্লাস, পটভূমিতে পতিত স্বৈরাচারের ক্ষতবিক্ষত অবয়ব। যেন এই একটা ছবিই ৩৬ দিনের আন্দোলনের সব কথা বলে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে নৈরাজ্য ও অরাজকতার এক খণ্ডচিত্রও ধরা পড়েছে জীবন আহমদের চোখে। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সামনে এক নারীকে নির্যাতন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, পরের দিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার স্থিরচিত্রও স্থান পেয়েছে বইটিতে, যা একজন সাংবাদিকের পেশাদারত্ব ও দলনিরপেক্ষতার প্রমাণ দেয়।

উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং
জীবন আহমেদ

প্রকাশক: ইউপিএল
প্রকাশ: আগস্ট ২০২৫
প্রচ্ছদ: জীবন আহমেদের ছবি অবলম্বনে সুবিনয় মোস্তফি ইরন
পৃষ্ঠা: ৩২৩
মূল্য: ২৫০০ টাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অভ্যুত্থানের অনবদ্য দলিল