যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য আলোচনায় বড় অগ্রগতি, জানালেন ট্রাম্প
Published: 11th, May 2025 GMT
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় অগ্রগতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থাৎ চীনের বিপুল হারে শুল্ক আরোপ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, তা প্রশমিত হয়েছে।
নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘সুইজারল্যান্ডে আজ চীনের সঙ্গে ভালো বৈঠক হয়েছে। অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে; অনেক ক্ষেত্রেই ঐকমত্য হয়েছে। বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক পদ্ধতিতে পুরো বিষয়টি নতুন করে সাজানো হয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের কল্যাণে আমরা দেখতে চাই, মার্কিন ব্যবসার-বাণিজ্যের জন্য চীন দুয়ার খুলে দিচ্ছে। বড় অগ্রগতি হয়েছে।’
গত কয়েক দিন ধরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চলছে। এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির প্রমুখ। এই বৈঠক সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, এই বৈঠক চলবে।
তবে মার্কিন অর্থমন্ত্রী গত সপ্তাহেই বলেছেন, এই বৈঠক থেকে যে বড় ধরনের চুক্তি হয়ে যাবে, এটা আশা করা ঠিক হবে না। যদিও তিনি বলেছেন, বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার পথে এটা বড় পদক্ষেপ। চীনের সহকারী প্রধানমন্ত্রী হি লিফেং চীনের পক্ষে এই আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি এই সংবাদ দিয়েছে।
অন্যদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক সমস্যা সমাধানের পথে বড় পদক্ষেপ। যদিও চূড়ান্ত সমাধান পেতে আরও ধৈর্য ধরতে হবে; সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন লাগবে।
২ এপ্রিল ঘোষিত ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক বিশ্বের সব দেশের জন্য ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হরেও চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক অব্যাহত আছে। এর জবাবে চীন মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই বাস্তবতায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত কমে যাচ্ছে।
এখন যে পরিস্থিতি, তাতে শুল্ক হার কমিয়ে এক ধাক্কায় অর্ধেক করা হলেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হবে না। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, শুল্কের হার ৫০ শতাংশ হলেই কেবল দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য একরকম স্বাভাবিক পর্যায়ে যেতে পারে।
শুক্রবার ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, তিনি চীনের পণ্যে শুল্কের হার ৮০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ভাবছেন; সেই সঙ্গে শর্ত দেওয়া হবে, চীনকে বাজার খুলে দিতে হবে। ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, চীনের পণ্যে ৮০ শতাংশ শুল্ক ঠিক বলেই মনে হয়; এখন বাকিটা অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের ওপর।
এদিকে ১৪৫ শতাংশ শুল্কযুক্ত চীনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আসতে শুরু করেছে, যদিও পরিমাণে কম। পরিমাণে বেশি বা কম হোক, এসব পণ্যের দাম, ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। গোল্ডম্যান স্যাক্সের বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তামূল্য সূচক চলতি বছর ৪ শতাংশে উঠতে পারে। এই মুহূর্তে বাণিজ্য চুক্তি হলেও পণ্যের দাম কমবে না, কারণ ১৪৫ শতাংশ শুল্কযুক্ত ইতিমধ্যে মার্কিন বন্দের চলে এসেছে।
বাস্তবতা হলো, মার্কিনিরা যে বিপুলসংখ্যক চীনা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল, শুধু এ কথা বলাটাই যথেষ্ট নয়। তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে এসব পণ্যের প্রভাব কতটা ব্যাপক, এই কথা দিয়ে তা বোঝানো সম্ভব নয়। জুতা, পোশাক, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, মাইক্রোচিপ, শিশুদের জিনিসপত্র, খেলনা, খেলার সরঞ্জাম, অফিসের যন্ত্রাংশের মতো আরও অনেক কিছুই চীন থেকে বিপুল পরিমাণে আসছে যুক্তরাষ্ট্রে।
কিন্তু এখন সেই আমদানি কমছে। ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের মতে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি অন্তত ২০ শতাংশ কমবে। চীন থেকে আমদানি আরও বেশি হারে কমবে। বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান ধারণা করছে, চীন থেকে আমদানি কমবে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ।
অর্থনৈতিক প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক চীনের উৎপাদন খাতে বড় প্রভাব ফেলেছে। এপ্রিল মাসে চীনের কারখানার উৎপাদন গত ১৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকুচিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে আবারও প্রণোদনা দেওয়ার বাস্তবতা তৈরি হয়েছে বেইজিংয়ের সামনে।
স্কট বেসেন্ট শুক্রবার জেনেভায় গেছেন। এই খবরে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হবে, এমন আশা তৈরি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যথাক্রমে বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। তারা কতটা বড় সেটা বোঝাতে বলা দরকার, পরবর্তী ২০টি অর্থনীতির সম্মিলিত জিডিপির চেয়েও তারা বড়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আল্লাহর সেনাবাহিনী: ফিল্ড মার্শাল মুনির
আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে স্থান পাওয়া পাকিস্তানের সেনাপ্রধান চিফ অব স্টাফ ও ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেছেন, “পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আল্লাহর সেনাবাহিনী। এই বাহিনীর সেনারা আল্লাহর নামে লড়াই করে।”
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বাসভবনে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ইবন আল হুসেইনের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজের সময় দেশটির ‘ডেইলি জং’ নামে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
১৩ নভেম্বরকে ঘিরে কক্সবাজারে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
নির্বাচন পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়ল
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কোনো আগ্রাসন এলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আসিম মুনির। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে কোনো রকম আগ্রাসন হলে ক্ষিপ্রতা ও কঠোরতার সঙ্গে দাঁতভাঙা উত্তর দেওয়া হবে।”
ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে আকাশের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ইশারা করেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের বিজয়ের পথে আমি নেতৃত্ব দিইনি; আল্লাহ দিয়েছেন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে গত মে মাসে পাকিস্তানের শত্রুরা নিহত হয়েছিল। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আল্লাহর সেনাবাহিনী। আল্লাহর নামে লড়াই করে এই বাহিনীর সেনারা।”
গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়। ভারত শুরু করে হামলা। ৫ ও ৬ মে রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ভারত। তবে সমানে সমান জবাব দেয় পাকিস্তান। ভারতের সাতটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ছয় দিনের লড়াইয়ের পর ১০ মে ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধবিরতি হয়।
এই যুদ্ধে পাকিস্তান নিজেদের বিজয়ী দাবি করে। জয়ের পুরস্কার হিসেবে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘ফিল্ড মার্শাল’ খেতাব দেয় দেশটির সরকার।
এই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতাকারীর কৃতিত্ব দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে। অবশ্য পাকিস্তান পুরো কৃতিত্ব ট্রাম্পকে দেয়। শুধু তাই নয়, কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করে পাকিস্তান সরকার।
সেই থেকে ট্রাম্প ও ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মধ্যে সখ্য তৈরি হয়। দুইবার ট্রাম্প তাকে হোয়াইট হাউসে ডেকে নিয়ে একসঙ্গে খেয়েছেন, রুদ্ধদ্বার বৈঠকও করেছেন। বিদেশি একজন সেনাপ্রধানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের এমন বৈঠক সাধারণত বিরল।
ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠা আসিম মুনির পাকিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন। সংবিধান সংশোধন করে তাকে আমৃত্যু আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইচ্ছামতো মেয়াদে পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অসীম ও নজিরবিহীন সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল জিও নিউজের অনলাইন সংস্করণে লেখা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে রবিবার (১৬ নভেম্বর) পবিত্র কোরআনের আয়াত মনে করিয়ে দিয়ে আসিম মুনির বলেন, “আল্লাহ ইমানদারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, বিশ্বাসের সঙ্গে লড়লে তারা যেকোনো শত্রুকে পরাজিত করতে পারবে, সেখানে শত্রুরা যত শক্তিশালীই হোক না কেন। পাকিস্তান এই দৃষ্টান্ত গত মে মাসেই দেখিয়ে দিয়েছে।”
পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীর পর নতুন আইন অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান হিসেবে যেকোনো অপরাধ বা অভিযোগের ক্ষেত্রে আজীবন আইনগত দায়মুক্তি ভোগ করবেন তিনি। নজিরবিহীন এই ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পর তিনি বললেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আল্লাহর সেনাবাহিনী।
ঢাকা/রাসেল