ফেনীতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ভাঙচুর, নিজাম হাজারীর বাড়ির প্রধান ফটকে আগুন
Published: 17th, November 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর ফেনীতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ভাঙচুর এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর বাড়ির প্রধান ফটকে আগুন দিয়েছেন জুলাই যোদ্ধারা।
আজ সোমবার রাতে শহরের পৌরসভা প্রাঙ্গণের রাজাঝি দিঘিরপাড়ের দেয়ালে টাইলসে খোদাই করা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই যোদ্ধারা। পরে তাঁরা শহরের মাস্টারপাড়া নিজাম উদ্দিন হাজারীর বাগানবাড়ির প্রধান ফটাকে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয় মুহাইমিন তাজিম বলেন, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর উচ্ছ্বসিত ছাত্র–জনতা শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর করে। পরে দুই দিন আগে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর বাড়ির সামনে অগ্নিসংযোগ করেছে।
আরও পড়ুনজুলাই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন ট্রাইব্যুনাল৫ ঘণ্টা আগেঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তিনি অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্তে যাবে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ক্ষতি হলে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও তদন্ত করতে পারে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা কোথায় কী করেছে, এ বিষয়ে পুলিশের কোনো তথ্য নেই।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের দিনও বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ভাঙচুর এবং মাস্টারপাড়ায় নিজাম উদ্দিন হাজারীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
আরও পড়ুনযেসব কারণে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায়২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। তবে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
আজ সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন রাভিনা শামদাসানি।
ওএইচসিএইচআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে আমরা নির্দেশদাতা ও নেতৃত্বের অবস্থানে থাকা ব্যক্তিদেরসহ দোষীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছি। ভুক্তভোগীদের কার্যকর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করারও আহ্বান জানিয়েছি।’
রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘যেহেতু এই বিচারপ্রক্রিয়ার কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না, তাই আমরা সব জবাবদিহিমূলক কার্যক্রম, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগগুলো যেন প্রশ্নাতীতভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে, সে জন্য ধারাবাহিকভাবে বলে এসেছি। এটি বিশেষভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যখন, এ মামলার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ডের শান্তি দেওয়া হয়েছে।’
মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাভিনা শামদাসানি। তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের রায়ের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সব পরিস্থিতিতে এর বিরোধিতা করি।’
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ সত্য প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য ও ক্ষত কাটিয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে যাবে। এ প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা খাতের অর্থবহ ও রূপান্তরমূলক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। আর এ সংস্কার হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, যেন আর কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনা না ঘটে। এসব প্রচেষ্টাগুলোয় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সহায়তা দিতে প্রস্তত রয়েছে ওএইচসিএইচআর।