শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শেষ
Published: 17th, November 2025 GMT
রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে প্লট নিজেদের নামে করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে করা মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শেষ হয়েছে। ২৩ নভেম্বর এ মামলার যুক্তিতর্কের শুনানি হবে।
আজ সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ-৫–এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালত এই তারিখ ঠিক করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর তরিকুল ইসলাম জানান, এই মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি খুরশিদ আলম শেখ হাসিনার মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে তিনি সাফাই সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি।
এ ছাড়া আজ শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়ার জেরা সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মামলার বাদী রাশেদুল ইসলামের জেরাও সম্পন্ন হয়েছে। জয় ও পুতুলের মামলায়ও খুরশিদ আলমের পক্ষে আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম জেরা করেছেন। অন্য আসামিরা পলাতক থাকায় নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের পক্ষে জেরার সুযোগ নেই। ২৩ নভেম্বর জয় ও পুতুলের মামলার আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ঠিক করেছেন আদালত।
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ নেওয়া প্লটের বিষয়ে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত ১০ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলায় অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয় দুদক। গত ৩১ জুলাই শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহেনা পরিবারের পৃথক ছয়টি মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকার সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তাঁরা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হলেও পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পে ২৭ নম্বর সেক্টরে ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আরিফুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনার মামলায় মোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৯ জন, জয়ের মামলায় ২৮ ও পুতুলের মামলায় ২৩ জন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। তবে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
আজ সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন রাভিনা শামদাসানি।
ওএইচসিএইচআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে আমরা নির্দেশদাতা ও নেতৃত্বের অবস্থানে থাকা ব্যক্তিদেরসহ দোষীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছি। ভুক্তভোগীদের কার্যকর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করারও আহ্বান জানিয়েছি।’
রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘যেহেতু এই বিচারপ্রক্রিয়ার কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না, তাই আমরা সব জবাবদিহিমূলক কার্যক্রম, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগগুলো যেন প্রশ্নাতীতভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে, সে জন্য ধারাবাহিকভাবে বলে এসেছি। এটি বিশেষভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যখন, এ মামলার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ডের শান্তি দেওয়া হয়েছে।’
মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাভিনা শামদাসানি। তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের রায়ের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সব পরিস্থিতিতে এর বিরোধিতা করি।’
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ সত্য প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য ও ক্ষত কাটিয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে যাবে। এ প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা খাতের অর্থবহ ও রূপান্তরমূলক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। আর এ সংস্কার হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, যেন আর কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনা না ঘটে। এসব প্রচেষ্টাগুলোয় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সহায়তা দিতে প্রস্তত রয়েছে ওএইচসিএইচআর।