সাগরের পাশে বিশাল পাহাড়। সেই পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়েছে শীতল পানির ঝরনা। পাহাড়-ঝরনার নাম—হিমছড়ি। তবে পাহাড়টি আগে পরিচিত ছিল ‘হিমপরির পাহাড়’ নামে। স্থানীয় মানুষের কাছে প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, একসময় উঁচু পাহাড়টির চূড়ায় সময় কাটাতেন সাগর থেকে উঠে আসা পরিরা। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে টেকনাফের দিকে ১২ কিলোমিটার এগোলোই দেখা মেলে এই পাহাড়ের। এলাকাটির নামই এখন হিমছড়ি। এলাকায় অবস্থিত সমুদ্রসৈকতও পরিচিত হিমছড়ি সৈকত নামে।

প্রায় ২৮০ ফুট উঁচু হিমছড়ি পাহাড়ের চূড়ায় বসে দেখা যায় চারপাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য। উপভোগ করা যায় সমুদ্রের গর্জন। ঝরনার শীতল জলে শরীর ভিজিয়ে নেওয়ার সুযোগ তো আছেই।

সড়কপথে হিমছড়ি পৌঁছানোর পরই চোখে পড়ে দুপাশে শতাধিক দোকানপাট। সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, জিপ-মাইক্রোবাসসহ নানা যানবাহনের ভিড়। অনেক পর্যটকের কাছে অস্বস্তিকর ঠেকে এই দৃশ্য। তবে হিমছড়িতে পাহাড়-সাগর আর ঝরনার দৃশ্য দেখার আনন্দ যেন এসব ভুলিয়ে দেয়।

দেখা যায় ঝরনার আশপাশে কয়েকটি বিশ্রামাগার। ঝরনায় যাতায়াতের রাস্তাতে বসানো হয়েছে রকমারি পণ্য বেচাবিক্রির ২০ থেকে ২৫টি দোকান। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ পর্যটকেরা বিশ্রামাগারে বসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ দোকানে গিয়ে সেরে নিচ্ছেন কেনাকাটা। শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্য, ফলমূল, আচার, ডাব, চিনাবাদামসহ নানা খাবারদাবার রয়েছে এসব দোকানে। ঝরনার আশপাশে ১০ থেকে ১২ জন ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রীকে ছবি তোলার জন্য পর্যটকদের পিছু নিতে দেখা যায়।

গত শুক্রবার সকাল ১০টা। সরেজমিনে দেখা যায় হিমছড়ি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রে শতাধিক নারী-পুরুষের ভিড়। কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে পর্যটকেরা ভেতরে ঢুকছেন। টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৩৫ টাকা। এক টিকিটেই ঝরনা দেখা ও পাহাড়চূড়ায় ওঠার সুযোগ। ভেতরে ঢুকেই দেখা গেল, পর্যটকদের বেশির ভাগ ছুটছেন ঝরনার দিকে। কেউ ঝরনার হিমশীতল পানিতে গা ভাসাচ্ছেন। কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকজন তরুণকে হিমছড়ি ঝরনায় পানি কম থাকা নিয়ে আক্ষেপ করতে দেখা যায়।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ঝরনা দেখতে এসেছেন শিক্ষক কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রী-সন্তানেরা বলে রাখেন, কক্সবাজার পৌঁছে সমুদ্রসৈকতের লোনাপানিতে গোসল সেরে তাঁদের হিমছড়ির ঝরনা দেখাতে নিয়ে যেতে হবে। তাই ঝরনায় নিয়ে এলাম।’ কামরুল ইসলাম আরও বলেন, ১১ বছর আগে তিনি প্রথমবার যে হিমছড়ি ঝরনা দেখে গেছেন, এখন যেন তার অনেক কিছুই নেই। পাহাড়ের ওপর থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে খুবই কম। তাঁর দাবি, অযত্নে-অবহেলায় এই পাহাড়-ঝরনা সৌন্দর্য হারাচ্ছে।

কক্সবাজারের হিমছড়ির ঝরণা। অযত্ন-অবহেলায় ম্লান পানিপ্রবাহ। সম্প্রতি তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঝরন হ মছড় ঝরন র

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত

নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।

সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাট

আজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • আগামী বছর নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা: ধর্ম উপদেষ্টা
  • শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
  • শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • পাহাড়, সমুদ্র, চা–বাগান—একসঙ্গে দেখা যায় যে উপজেলায়
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা