অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতে চলতি অর্থবছরের চেয়ে কম বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের খসড়া এডিপি অনুসারে, শিক্ষা খাতে ৯১টি প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা চলতি এডিপির বরাদ্দ থেকে ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।

একটানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার অনেক অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প করে জনগণের ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার যে অনেক বড় প্রকল্প বাদ দিয়েছে, সেটা সঠিক বলেই মনে করি। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমানো কোনোভাবে কাম্য নয়। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারব না। আর একটি সুস্থ ও সবল জাতি গড়ে তুলতে হলে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই।

নতুন খসড়া এডিপিতে সর্বোচ্চ ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে শিক্ষা খাত। এই খাতের আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ থাকছে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। আর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমছে আড়াই হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোয় লেখা নিবন্ধে বলেছেন, ‘এবারের বাজেটে বরাদ্দের যে বিন্যাস দেখছি, সেটা প্রথাগত ঐতিহ্যেরই প্রতিফলন।’

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, যাঁরা এখন নীতিনির্ধারকের দায়িত্বে, তাঁরা এত বছর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতেন। অথচ আগামী বছরের বাজেট প্রস্তাবে তার প্রতিফলন নেই। অর্থাৎ গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকারও পুরোনো পথে হাঁটছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, পৃথিবীর যে ১০টি দেশ অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়, বাংলাদেশ তার একটি। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকেরা নিজেরা ব্যয় করেন।

বাজেট কেবল আর্থিক হিসাব–নিকাশ নয়। সরকারের অর্থনৈতিক দর্শনেরও প্রতিফলন। অতীতে ক্ষমতায় থাকা সব সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে অবহেলা করার অভিযোগ ছিল। বিগত সরকারগুলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বাজেটকে মূলত শিক্ষা অবকাঠামো ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো বাজেটে পরিণত করেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছে, এমন প্রমাণ নেই। সরকার গঠিত স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন যেখানে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের সুপারিশ করেছে, সেখানে সরকার মাত্র ৫ শতাংশের ঘর পার হতে পারেনি। উন্নত দেশের তুলনা বাদ দিলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষায় বরাদ্দের হার সর্বনিম্ন। সর্বনিম্ন বরাদ্দ দিয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা আশা করা যায় না।

আশা করি, অর্থ উপদেষ্টা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর দ দ র বছর র ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন