এই দেশে আর আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় পথসভা কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বেঁচে থাকতে, আমাদের গায়ে এক বিন্দু রক্ত থাকতে এই দেশে আর আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে না। এই দেশে হাসিনার পুনর্বাসন হবে না। আওয়ামী রক্ত আছে, এমন কারও পুনর্বাসন হবে না। আওয়ামী সংবিধানকে চিরদিনের মতো এই বাংলাদেশে আমরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করব। নতুন সংবিধানের জন্য আমরা লড়াই করব। নতুন বাংলাদেশের জন্য আমরা লড়াই করব। ইনসাফের জন্য লড়াই করব।’

গত রোববার চট্টগ্রামে পথসভা ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচি শুরু করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দক্ষিণ জেলা, উত্তর জেলা ঘুরে আজ নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক জোবাইরুল আরিফ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠন ইমন সৈয়দসহ নেতা-কর্মীরা। মিনিট্রাকে ঘুরে ঘুরে এনসিপির নেতা-কর্মীরা প্রচারপত্র বিলি করেছেন।

বহদ্দারহাটের পথসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ পুলিশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘পুলিশ ভাইয়েরা এখন অমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। পুলিশ ভাইদের ওপর আমাদের অনেক রাগ, অনেক ক্ষোভ, তাই না? আপনারা এই রাগ আর ক্ষোভ রাইখেন না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে। অতীতে এই পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সরকার তার নিজের প্রয়োজনে পুলিশকে লীগ বানিয়েছে।’

প্রশাসনের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যাঁরা প্রশাসনে আছেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই। ছাত্র-জনতা আপনাদের বিপক্ষে নয়, প্রতিযোগী নয়, আপনাদের সহযোগী। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা দেশের পক্ষে থাকবেন, ততক্ষণ আপনাদের এই ইউনিফর্মকে আমরা সম্মান জানাই। প্রশাসকদের, সরকারি চাকরিজীবীদের আমরা সম্মান জানাই। কিন্তু যখনই আপনারা জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কোনো ফ্যাসিবাদকে সেবা করা শুরু করবেন, তখনই আপনারা জনবিরোধী অবস্থান নেবেন। যখনই জনবিরোধী অবস্থান নেবেন, তখনই ছাত্র-জনতা আপনাদের প্রতিরোধ করবে।’

শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে অতীতের শাসনব্যবস্থা এই বাংলাদেশে চলতে দিতে পারি না—এমন মন্তব্য করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে আওয়ামী সংবিধান বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে, দাড়িওয়ালা ধর্মভীরু মানুষদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মধ্য দিয়ে হত্যা করেছে, সেই আওয়ামী সংবিধান বাংলাদেশে থাকতে পারে না।

তাসনিম জারা তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যে স্বপ্ন নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই হবে। দেশটা সাধারণ নাগরিকের জন্য। দেশটা সব জনগণের। শুধু নির্দিষ্ট কোনো দলের বা গোষ্ঠীর জন্য এ দেশ নয়।’

‘আমাদের ভোট দিয়েন না’

চকবাজারে পথসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব থাকবেন। ক্ষমতাকে প্রশ্ন করবেন। যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।’

গত বছর নির্বাচনে একটা ভোটের দাম কত ছিল, এমন প্রশ্ন রেখে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘কত ছিল দুই হাজার? এবার কত করে নেবেন? আমাদের দেশের নেতারা রাস্তার টাকা খেয়ে ফেলেন, টেন্ডারবাজি করেন, গরিবের সম্পদ লুণ্ঠন করেন। আর আমাদের দেশের ভোটাররা ভোট বিক্রি করে দেয়। আমাদের দেশের ভোটাররা ভোটের আগের রাতে ভোট বিক্রি করে দেয়।’

যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে আগে যোগ্য ভোটার হওয়া উচিত বলে মনে করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা কি টাকার বিনিময়ে ভোট বিক্রি করব? এখানে যাঁরা শিক্ষার্থী রয়েছেন, আপনাদের মা-বাবা ও পরিবার যদি ভোট বিক্রি করতে চায়, তাহলে প্রতিবাদ করেন।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আগের রাতে যদি ভোট বিক্রি করে দিই, তাহলে পাঁচ বছর আমার নেতা আমাকে জুলুম ও নির্যাতন করবে। আমরা কিছু বলতে পারব না। সে জন্য আগে নিজেদের সৎ হতে হবে। আগামী নির্বাচনে যারা যোগ্য নেতৃত্ব, তাদের ভোট দেবেন। যদি দেখেন এনসিপি থেকে কোনো যোগ্য নেতৃত্ব নাই, তবে আপনাদের ভোট দেওয়ার প্রয়োজন নাই। মার্কা দেখে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন নাই। যে আপনার সেবা করবে, তাকে আপনারা ভোট দেবেন। যে জাতি ও দেশের কাছে কমিটমেন্ট করেছে, আপনারা তাদের ভোট দেবেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপন দ র র জন য এই দ শ আম দ র আওয় ম আপন র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ