নতুন প্রজন্ম নতুন ধরন

হালের প্রজন্মের নাম ‘জেন-আলফা’। অর্থাৎ এ প্রজন্মের শিশুদের জন্ম ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে। এর আগের প্রজন্ম, অর্থাৎ জেন-জিদের (১৯৯৭-২০১২) মধ্যে যারা সবচেয়ে কম বয়সী, তারাও এই লেখায় উল্লিখিত কিশোরদের মধ্যে পড়ে। আর উভয়ের মা-বাবাই সাধারণত মিলেনিয়াল প্রজন্মের।

এই শিশু ও কিশোরেরা ডিজিটাল যুগে বড় হয়েছে, হচ্ছে। অল্প বয়সেই হাতে পেয়েছে টাচ স্ক্রিন, বুঝতে শেখার আগেই ভক্ত হয়েছে ইউটিউবের। এমনকি করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসেও উপস্থিত থেকেছে ভার্চ্যুয়ালি। অর্থাৎ বোঝাই যায়, প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খুবই গভীর। সহজ কথায়, প্রযুক্তি ছাড়া এরা প্রায় অচল।

তবে যদি বৈচিত্র্য কিংবা অন্তর্ভুক্তির মতো বৈশিষ্ট্য খুঁজতে চান, এই প্রজন্মের মধ্যে তা সহজাত। পেছনের কারণ হিসেবে ডিজিটাল যুগের অবদানের সঙ্গে ধরা হয় করোনা মহামারিকেও। এ দুই বৈশ্বিক ঘটনা তাদের শৈশব–কৈশোরকে প্রভাবিত করেছে দারুণভাবে।

বুঝতে ভুল, নাকি ভুলভাবে উপস্থাপন

অনেকের ধারণা, জেন-আলফা ও জেন-জির একাংশ আগের যেকোনো প্রজন্মের চেয়ে অভদ্র। বড়দের শ্রদ্ধা করার ক্ষেত্রে তারা নাকি অনেকটাই পিছিয়ে। মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ড.

ক্যাথরিন নোবিল ঠিক তেমনটা মনে করেন না। তাঁর বক্তব্য হলো, প্রজন্মের অন্তর্নিহিত বা তাদের ব্যাপারে উপসংহার টানার মতো বৈশিষ্ট্য এটা নয়। বরং সমাজের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের প্রভাবের ফলেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

ক্যাথরিনের মতে, জেন-আলফা শিশু–কিশোরদের বড় হওয়ার সময়টা খেয়াল করলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়। এখন বৈশ্বিক বিভিন্ন ঘটনা সবার চোখের সামনে ঘটছে। শুধু তা–ই নয়, প্রযুক্তির আধুনিক প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে ছোটবেলা থেকেই তারা নিজের মতামত তুলে ধরে। একই বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে পারে সহজেই। সব শুনে মনে হতে পারে, কাউকে প্রশ্ন বা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া এবং নিজের মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে এই প্রজন্ম বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু এই নতুন ভঙ্গি তাদের মা-বাবা বা বড়দের খুব একটা পছন্দ নয়।

জেন–এক্স (১৯৬৫-১৯৮০) ও বেবি বুমার্স (১৯৪৬-১৯৬৪) প্রজন্মের মধ্যে মা–বাবা, দাদা–দাদিরা পড়েন। তাঁরা নতুনদের এই সাহসী, স্বাধীনচেতা ও স্পষ্টভাষী চরিত্রকে একটু অন্যভাবে দেখবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, মাথা নিচু করে কথা বলা, বিনা প্রশ্নে শ্রদ্ধা করার সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের এই আচরণ বেশ সাংঘর্ষিক।

শুরুতেই কঠোর সমালোচনা না করে সহানুভূতির সঙ্গে তাদের কথা শুনতে হবে। বিকল্প উপায় দেখিয়ে বোঝাতে হবে। বলা যেতে পারে, ‘যা করছ ঠিক আছে, কিন্তু এভাবেও তো করা যায়।’ তখন তারা এ বিষয়ে ভাবতে চাইবে।শারমিন হক, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জেন-আলফাদের এসব বৈশিষ্ট্য আদতে আশপাশের পরিবেশের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। অর্থাৎ তাদের একতরফা দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই।

এ ছাড়া আজকের পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশকে উৎসাহিত করা হয়। সবাই উদ্‌যাপন করে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাকে। প্রচলিত রীতিনীতিকে প্রশ্ন করাও খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ঠিক এ জায়গাতেই আগের প্রজন্মগুলো থেকে জেন–আলফা আলাদা। কাউকে বিনা বাক্যে মানার চেয়ে তার মুখোমুখি হয়ে যুক্তি শুনতেই বেশি পছন্দ করে।

যেকোনো প্রশ্নে ‘জি স্যার’, ‘জি ম্যাডাম’, ‘ঠিক আছে’ বা ‘যাহোক’ বলার রীতি এখন আর নেই। বরং এই প্রজন্ম জানতে চায়, ‘কেন আমাকে বুঝিয়ে বলা সম্ভব না?’ ইচ্ছা না হলে বলে, ‘না, আমি ওটা করব না। আমি এভাবে করব।’

তাই জেন-আলফার অবাধ্যতাকে ঠিক অসম্মান নয়, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে জেনেবুঝে তারপর কাজে জড়ানোর আকাঙ্ক্ষা বলা যেতে পারে। যখন এই বয়সীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ‘না’ বলে, অনেকে এটাকে ‘বিদ্রোহ’ ধরে ভুলভাবে উপস্থাপন করেন। অথচ বাস্তবে এটা তাদের সূক্ষ্ম চিন্তা এবং আরও ভালোভাবে বোঝার প্রমাণ। এটি বরং প্রচলিত প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করার ইচ্ছাকেই তুলে ধরে।

আরও পড়ুনবুলিং নিয়ে কি আগের চেয়ে অনেক বেশি সোচ্চার কিশোর–কিশোরীরা?১৬ এপ্রিল ২০২৫

প্রযুক্তির সন্তান

এই প্রজন্মের সবাইকে প্রযুক্তির সন্তান বলা হয়। মুঠোফোন, ট্যাব ও কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। দুই যুগ আগে হয়তো কেউই এমনটা কল্পনা করেননি। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং শেখা, যোগাযোগ করা এবং নিজেকে প্রকাশ করার টুল হিসেবে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমেও বাড়ছে এর ব্যবহার। এই প্রযুক্তিনির্ভরতা তাদের আচরণ ও বিশ্বকে দেখার চোখকে প্রভাবিত করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যামিলি থেরাপিস্ট কেলি ওরিয়ার্ড বলেন, ‘ছোট বয়স থেকেই বেশি তথ্য জানা এবং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়। ফলে তাদের ভেতরে তৈরি হয়েছে স্বাধীনচেতা মনোভাব ও বলিষ্ঠ কণ্ঠের মতো বৈশিষ্ট্য।’

কেলি আরও যোগ করেন, ‘মনে হতে পারে, এই ব্যবহার দ্বারা আদতে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটা আত্মবিশ্বাস ও সূক্ষ্ম চিন্তার মতো দক্ষতা থাকার লক্ষণ। এসব গুণ আমাদের লালন করা উচিত।’

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রযুক্তির সঙ্গে অল্প বয়সেই পরিচয় জেন–আলফা ও জেন–জিকে কিছু সুবিধা দিয়েছে। তাই বিভিন্ন সামাজিক ধারণা ও বৈশ্বিক বিষয়ে সবাই এখন যথেষ্ট সচেতন। মতপ্রকাশেও তারা দ্বিধা করে না। ফলে সব বিষয়ে নাক গলানোকেই অসম্মান ভেবে ভুল করা হয়।

আরও পড়ুনআলফা প্রজন্ম কি সম্পর্কের ব্যাপারে উদাসীন২৮ জানুয়ারি ২০২৫মুঠোফোন, ট্যাব ও কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রজন ম র জ ন আলফ ব যবহ র অর থ ৎ প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

একটি দল ছাড়া কোনো দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না, তা সঠিক নয়: গণফোরাম

গণফোরাম বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাপান সফরে গিয়ে একটি দল ছাড়া আর কোনো দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা সঠিক নয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে বলেও উল্লেখ করেছে দলটি।

আজ শুক্রবার বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণফোরামের সভাপতি পরিষদের অন্যতম সদস্য এস এম আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, সভাপতি পরিষদের সদস্য সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মেজবাহউদ্দীন, মোশতাক আহমেদ, সুরাইয়া বেগম, সেলিম আকবর, শাহ নুরুজ্জামান প্রমুখ।

সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে গণফোরামের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং এর ফলে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

গণফোরামের নেতারা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সুফল পাওয়ার জন্য দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের রূপরেখা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এ দায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে দুঃখজনক।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনা এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের বৈঠক জাতিকে আরও হতাশ করেছে বলে উল্লেখ করেছে গণফোরাম। দলটি বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এবারের বৈঠকে গণফোরামকে আমন্ত্রণ না জানানোর ফলে সরকার ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

গণফোরামের নেতারা আরও বলেন, গত ৯ মাসে সরকার আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও জনপ্রশাসনের অস্থিরতা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার বা দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা এখনো লক্ষ করা যায়নি। ফলে সরকারের প্রতি জনসমর্থন যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ও জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে।

গণফোরাম সভাপতি পরিষদের সভায় অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে, সে ঐক্য যেন কোনো অশুভ শক্তি বিনষ্ট করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ