নতুন প্রজন্ম ভাবছে ‘আমিই ঠিক’, অভিভাবক বলছেন বেয়াদবি
Published: 29th, May 2025 GMT
নতুন প্রজন্ম নতুন ধরন
হালের প্রজন্মের নাম ‘জেন-আলফা’। অর্থাৎ এ প্রজন্মের শিশুদের জন্ম ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে। এর আগের প্রজন্ম, অর্থাৎ জেন-জিদের (১৯৯৭-২০১২) মধ্যে যারা সবচেয়ে কম বয়সী, তারাও এই লেখায় উল্লিখিত কিশোরদের মধ্যে পড়ে। আর উভয়ের মা-বাবাই সাধারণত মিলেনিয়াল প্রজন্মের।
এই শিশু ও কিশোরেরা ডিজিটাল যুগে বড় হয়েছে, হচ্ছে। অল্প বয়সেই হাতে পেয়েছে টাচ স্ক্রিন, বুঝতে শেখার আগেই ভক্ত হয়েছে ইউটিউবের। এমনকি করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসেও উপস্থিত থেকেছে ভার্চ্যুয়ালি। অর্থাৎ বোঝাই যায়, প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খুবই গভীর। সহজ কথায়, প্রযুক্তি ছাড়া এরা প্রায় অচল।
তবে যদি বৈচিত্র্য কিংবা অন্তর্ভুক্তির মতো বৈশিষ্ট্য খুঁজতে চান, এই প্রজন্মের মধ্যে তা সহজাত। পেছনের কারণ হিসেবে ডিজিটাল যুগের অবদানের সঙ্গে ধরা হয় করোনা মহামারিকেও। এ দুই বৈশ্বিক ঘটনা তাদের শৈশব–কৈশোরকে প্রভাবিত করেছে দারুণভাবে।
বুঝতে ভুল, নাকি ভুলভাবে উপস্থাপন
অনেকের ধারণা, জেন-আলফা ও জেন-জির একাংশ আগের যেকোনো প্রজন্মের চেয়ে অভদ্র। বড়দের শ্রদ্ধা করার ক্ষেত্রে তারা নাকি অনেকটাই পিছিয়ে। মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ড.
ক্যাথরিনের মতে, জেন-আলফা শিশু–কিশোরদের বড় হওয়ার সময়টা খেয়াল করলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়। এখন বৈশ্বিক বিভিন্ন ঘটনা সবার চোখের সামনে ঘটছে। শুধু তা–ই নয়, প্রযুক্তির আধুনিক প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে ছোটবেলা থেকেই তারা নিজের মতামত তুলে ধরে। একই বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে পারে সহজেই। সব শুনে মনে হতে পারে, কাউকে প্রশ্ন বা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া এবং নিজের মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে এই প্রজন্ম বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু এই নতুন ভঙ্গি তাদের মা-বাবা বা বড়দের খুব একটা পছন্দ নয়।
জেন–এক্স (১৯৬৫-১৯৮০) ও বেবি বুমার্স (১৯৪৬-১৯৬৪) প্রজন্মের মধ্যে মা–বাবা, দাদা–দাদিরা পড়েন। তাঁরা নতুনদের এই সাহসী, স্বাধীনচেতা ও স্পষ্টভাষী চরিত্রকে একটু অন্যভাবে দেখবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, মাথা নিচু করে কথা বলা, বিনা প্রশ্নে শ্রদ্ধা করার সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের এই আচরণ বেশ সাংঘর্ষিক।
শুরুতেই কঠোর সমালোচনা না করে সহানুভূতির সঙ্গে তাদের কথা শুনতে হবে। বিকল্প উপায় দেখিয়ে বোঝাতে হবে। বলা যেতে পারে, ‘যা করছ ঠিক আছে, কিন্তু এভাবেও তো করা যায়।’ তখন তারা এ বিষয়ে ভাবতে চাইবে।শারমিন হক, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জেন-আলফাদের এসব বৈশিষ্ট্য আদতে আশপাশের পরিবেশের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। অর্থাৎ তাদের একতরফা দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই।
এ ছাড়া আজকের পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশকে উৎসাহিত করা হয়। সবাই উদ্যাপন করে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাকে। প্রচলিত রীতিনীতিকে প্রশ্ন করাও খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ঠিক এ জায়গাতেই আগের প্রজন্মগুলো থেকে জেন–আলফা আলাদা। কাউকে বিনা বাক্যে মানার চেয়ে তার মুখোমুখি হয়ে যুক্তি শুনতেই বেশি পছন্দ করে।
যেকোনো প্রশ্নে ‘জি স্যার’, ‘জি ম্যাডাম’, ‘ঠিক আছে’ বা ‘যাহোক’ বলার রীতি এখন আর নেই। বরং এই প্রজন্ম জানতে চায়, ‘কেন আমাকে বুঝিয়ে বলা সম্ভব না?’ ইচ্ছা না হলে বলে, ‘না, আমি ওটা করব না। আমি এভাবে করব।’
তাই জেন-আলফার অবাধ্যতাকে ঠিক অসম্মান নয়, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে জেনেবুঝে তারপর কাজে জড়ানোর আকাঙ্ক্ষা বলা যেতে পারে। যখন এই বয়সীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ‘না’ বলে, অনেকে এটাকে ‘বিদ্রোহ’ ধরে ভুলভাবে উপস্থাপন করেন। অথচ বাস্তবে এটা তাদের সূক্ষ্ম চিন্তা এবং আরও ভালোভাবে বোঝার প্রমাণ। এটি বরং প্রচলিত প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করার ইচ্ছাকেই তুলে ধরে।
আরও পড়ুনবুলিং নিয়ে কি আগের চেয়ে অনেক বেশি সোচ্চার কিশোর–কিশোরীরা?১৬ এপ্রিল ২০২৫প্রযুক্তির সন্তান
এই প্রজন্মের সবাইকে প্রযুক্তির সন্তান বলা হয়। মুঠোফোন, ট্যাব ও কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। দুই যুগ আগে হয়তো কেউই এমনটা কল্পনা করেননি। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং শেখা, যোগাযোগ করা এবং নিজেকে প্রকাশ করার টুল হিসেবে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমেও বাড়ছে এর ব্যবহার। এই প্রযুক্তিনির্ভরতা তাদের আচরণ ও বিশ্বকে দেখার চোখকে প্রভাবিত করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যামিলি থেরাপিস্ট কেলি ওরিয়ার্ড বলেন, ‘ছোট বয়স থেকেই বেশি তথ্য জানা এবং ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়। ফলে তাদের ভেতরে তৈরি হয়েছে স্বাধীনচেতা মনোভাব ও বলিষ্ঠ কণ্ঠের মতো বৈশিষ্ট্য।’
কেলি আরও যোগ করেন, ‘মনে হতে পারে, এই ব্যবহার দ্বারা আদতে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটা আত্মবিশ্বাস ও সূক্ষ্ম চিন্তার মতো দক্ষতা থাকার লক্ষণ। এসব গুণ আমাদের লালন করা উচিত।’
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রযুক্তির সঙ্গে অল্প বয়সেই পরিচয় জেন–আলফা ও জেন–জিকে কিছু সুবিধা দিয়েছে। তাই বিভিন্ন সামাজিক ধারণা ও বৈশ্বিক বিষয়ে সবাই এখন যথেষ্ট সচেতন। মতপ্রকাশেও তারা দ্বিধা করে না। ফলে সব বিষয়ে নাক গলানোকেই অসম্মান ভেবে ভুল করা হয়।
আরও পড়ুনআলফা প্রজন্ম কি সম্পর্কের ব্যাপারে উদাসীন২৮ জানুয়ারি ২০২৫মুঠোফোন, ট্যাব ও কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্যউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রজন ম র জ ন আলফ ব যবহ র অর থ ৎ প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫