ইস্তাম্বুলের অলৌকিক রাত: ছয় মিনিটের ম্যাজিকে লিভারপুলের অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প
Published: 31st, May 2025 GMT
চ্যাম্পিয়নস লিগ তো বটেই, অনেকের কাছে ম্যাচটি ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসেই অন্যতম সেরা। বলা হচ্ছে, ২০০৪–০৫ মৌসুমে লিভারপুল–এসি মিলানের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের কথা। অবিশ্বাস্য সে ম্যাচটিকে ফুটবল বিশ্ব মনে রেখেছে, ‘মিরাকল অব ইস্তাম্বুল’ নামে। ইস্তাম্বুলে সেদিন ম্যাচের ৪৪ মিনিটের মধ্যে ৩–০ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল লিভারপুল। কিন্তু বিরতির পর ভোজবাজির মতো বদলে যায় সব। ৫৪ থেকে ৬০—এই ছয় মিনিটের মধ্যে ৩ গোল করে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচে সমতা ফেরায় লিভারপুল। এরপর টাইব্রেকারে গিয়ে রাফায়েল বেনিতেজের দল ফাইনাল জিতে নেয় ৩–২ গোলে। সেদিন ৩ গোলে পিছিয়ে পড়েও কীভাবে লিভারপুল প্রত্যাবর্তনের অবিশ্বাস্য গল্প লিখেছিল, তা উঠে এসেছে দলটির তখনকার অধিনায়ক কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ডের ‘জেরার্ড মাই অটোবায়োগ্রাফি’ বইয়ে। আজ আরও একটা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল সামনে রেখে লিভারপুলের সেই রূপকথার মতো প্রত্যাবর্তনের গল্প।দ্বিতীয়ার্ধে যা ঘটেছিল, কী লিখেছেন জেরার্ড
অবিশ্বাস্য! লিভারপুল ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে। কাকা ও ক্রেসপোয় বিধ্বস্ত। আমাদের সমর্থকেরা গাইছে ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’।
সব খেলোয়াড় একে অন্যের দিকে বিস্ময় আর গর্ব নিয়ে তাকালাম। আমি চিৎকার করে বললাম, ‘তারা এখনো আমাদের ওপর থেকে বিশ্বাস হারায়নি। তাই আমরাও হাল ছাড়তে পারি না। চলো তাদের উল্লাস করার মতো কিছু দেওয়া যাক। তারা অনেক টাকা খরচ করেছে। তারা আমাদের নামে ধরে গান গাইছে আর আমরা ৩ গোল খেয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছি। যদি আমরা একটা গোল দিতে পারি, তারা আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে আমাদের পাশে থাকবে। সেটা আমাদের আরও একটা দেওয়ার জন্য সাহস দেবে। চলো এগিয়ে যাই।’
অধিনায়ক হিসেবে ঘুরে দাঁড়ানোয় নেতৃত্ব দেওয়াটা আমার দায়িত্ব ছিল। যখন টানেল দিয়ে ঝড়ের মতো ছুটে আসছিলাম, চোখ ছিল মিলান খেলোয়াড়দের দিকে। ওদের বিভ্রান্ত মনে হলো। কারণ, ওরা যখন মাঠে ফিরছিল, শুধুই লিভারপুল সমর্থকদের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। এমনকি আমাদের প্রতি সমর্থনের গর্জন শুনে আমি নিজেও ধাক্কা খেয়েছিলাম। মিলানের সমর্থকেরাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল।
লিভারপুলের হাতে ছিল মাত্র ৪৫ মিনিট—তিনটা গোল করতে হবে। খেলা আবার শুরু হতেই আমি দলকে চিৎকার করে বললাম, ‘ঝাঁপিয়ে পড়ো!’
সঙ্গে সঙ্গে আমরা এটাও টের পেলাম যে চ্যালেঞ্জটা কত বিশাল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শেভচেঙ্কো একটা ফ্রি-কিক নিল, তবে জার্জি (ডুডেক) সেটা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফিরিয়ে দিল। আমি যেটাকে বলি ‘ক্যামেরা সেভ’, মানে টেলিভিশনে ভালো দেখায় এমন সেভ। ওটা কোনো দুর্দান্ত ফ্রি-কিক ছিল না। যেকোনো গোলকিপারই ওটা ঠেকাতে পারত।
লিভারপুল কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অব শ ব স য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ছাত্রসংগঠনগুলোর গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার, সহসভাপতি মনীষা ওয়াহিদ, স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক একরামুল হক জিহাদসহ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা–কর্মীদের বাড়িঘরে হামলার হুমকিদাতাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি তামজীদ হায়দার চঞ্চল। তিনি বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের এবং চট্টগ্রাম নগরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রশিবির হামলা করেছে। ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’–এর ব্যানারে জামায়াতে ইসলামী-ইসলামী ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতা–কর্মীদের এসব হামলায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্রায় ৩০ জন নেতা–কর্মী আহত হন। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত-শিবিরের নৃশংস হামলার ধারাবাহিকতায় গত ৩০ মে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকারের পরিবারকে, কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি ও সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদকে এবং কেন্দ্রীয় সংসদের স্কুল ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা সংসদের সভাপতি একরামুল হক জিহাদকে হুমকি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আপামর জনগণ ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর যে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা করেছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সেই আকাঙ্ক্ষাকে ছাত্রশিবির বিনষ্ট করেছে। ভিন্নমত দমনে নৈমিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্যাগিং, পেশিশক্তি, মব–সন্ত্রাস বেছে নিয়েছে ছাত্রশিবির, যা গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে প্রতিবন্ধকতা তৈরির পাশাপাশি পুরোনো ফ্যাসিস্ট–ব্যবস্থাকে জিইয়ে রেখেছে। জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রামে ও রাবিতে নৃশংস হামলা চালিয়েছে, নারী আন্দোলন কর্মীদের বর্বরোচিতভাবে আঘাত করেছে। এমন সন্ত্রাসী তৎপরতার পর জামায়াত-শিবির ক্ষান্ত না হয়ে একেক পর এক ছাত্র ইউনিয়নের নেতা–কর্মীদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
ছাত্রশিবিরের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ নজির এটাই প্রথম নয় উল্লেখ করে ছাত্র ইউনিয়নের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৮৪ সালে শিবির চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও মেধাবী ছাত্র শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে হত্যা করে। ১৯৮৮ সালে শিবিরের ক্যাডার বাহিনী ছাত্র মৈত্রীর নেতা ডাক্তার জামিল আক্তার রতনকে কুপিয়ে ও হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। একই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে হত্যা করে। তা ছাড়া শিবিরের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সঞ্জয় তলাপাত্র এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা তপন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরে ছাত্র ইউনিয়ন। দাবিগুলো হলো অবিলম্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। ’২৪–এর গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতার স্বার্থে চিফ প্রসিকিউটরকে পরিবর্তন করতে হবে। অবিলম্বে শিমুল কুম্ভকার, মনীষা ওয়াহিদ ও একরামুল হক জিহাদকে হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অনলাইনে ‘নাস্তিক’, ‘শাহবাগি’ ট্যাগ দিয়ে চরিত্রহনন এবং বট-মবভিত্তিক আক্রমণের মাধ্যমে গণ–আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের প্রান্তিকীকরণ করার চেষ্টা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে তৎপর ও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিমুল কুম্ভকারসহ ছাত্র ইউনিয়নের অন্য নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।