শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বাতকুচি টিলার ঢালে গতকাল শুক্রবার রাতে ৩০টি বাড়িতে হানা দিয়েছে ৩৫ থেকে ৪০টি বন্য হাতির পাল। এ সময় ঘর ভেঙে ঘরে থাকা ধান-চাল খেয়ে আসবাব তছনছ করেছে হাতির পালটি।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে একই এলাকায় হাতির আক্রমণে সুরতন নেছা (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পাশের কায়াটাবাড়ি এলাকায় বন বিভাগের বিট কার্যালয়সহ ছয়টি ঘর ভেঙে তছনছ করে হাতির দল।

বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার দাওধারা-কাটাবাড়ি পাহাড়ের টিলায় এক সপ্তাহ ধরে ৩৫ থেকে ৪০টি বন্য হাতি দল বেঁধে অবস্থান করছে। গত কয়েক দিনে হাতির আক্রমণে বাতকুচি বিট কার্যালয়, দাওধারা-কাটাবাড়ি ছয়টি বসতঘরে হামলার পাশাপাশি গত বুধবার রাতে মধুটিলা ইকো পার্কের ক্যানটিনে হামলার ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে বৃষ্টির মধ্যে হাতির পালটি বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় সুরতন নেছার ঘরে হানা দেয়। এ সময় হাতির আক্রমণে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে হাতির পালটি বাতকুচি পাহাড়ের টিলায় অবস্থান করছে।

আরও পড়ুনগভীর রাতে লোকালয়ে ফিরে এল হাতির পাল, বাড়িতে হামলায় নারীর মৃত্যু৩০ মে ২০২৫

গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে হাতির পালটি জঙ্গল ছেড়ে বাতকুচি এলাকায় নেমে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তা, এলাকাবাসী ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা রাত ১১টা পর্যন্ত মশাল জ্বালিয়ে হইহুল্লোড় করে হাতির দলকে বাতকুচি জঙ্গলের দিকে ফিরিয়ে দেয়। পরে হাতির দলটি বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় হানা দেয়। এ সময় হাতির আক্রমণের ভয়ে পরিবারের লোকজন নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়েন। এ সময় ৩০টি বসতঘর ভেঙে ঘরে থাকা ধান-চাল খেয়ে আসবাব তছনছ করে দেয়। শেষ রাতে দলটি বাতকুচি জঙ্গলে ফিরে যায়।

আরও পড়ুননা‌লিতাবাড়ী সীমান্তে ৬ বসতঘ‌র ভে‌ঙে ধান-চাল খে‌য়ে গে‌ল বন‌্য হা‌তির দল২৭ মে ২০২৫

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হোসেন আলী (৪৫) বলেন, ২৩টি পরিবারের ৩০টির বেশি বসতঘর ও আসবাব ভেঙে তছনছ করেছে বন্য হাতির দল। ঘরে থাকা ধান-চাল খেয়ে সাবাড় করেছে। এখন ধান-চাল দূরের কথা একমুঠো শর্ষেও ঘরে নেই। হাতির আক্রমণে পরিবারগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুনশেরপুরে বন বিভাগের কার্যালয়ে বন্য হাতির হানা, আসবাব তছনছ২৭ মে ২০২৫

বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মশাল জ্বালিয়ে হাতির দলকে বাতকুচি জঙ্গলের দিকে ফেরাতে তাঁরা রাত ১১টা পর্যন্ত চেষ্টা করেন। পরে রাত ১২টার দিকে হাতির দল বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় বসতঘর ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, হাতির দলটি এখন বাতকুচি এলাকার জঙ্গলে অবস্থান করছে। এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুনহাতির আক্রমণে মৃত্যু: উপার্জনক্ষম দুজনকে হারিয়ে দিশেহারা দুটি পরিবার২৪ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র বন য হ ত র হ ত র দল ঘর ভ ঙ পর ব র এল ক য় এ সময় আসব ব

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে হামলার ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার: পুলিশ

রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামে ধর্ম অবমাননাকে কেন্দ্র করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

আজ বুধবার সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ কথা জানানো হয়।

আরও পড়ুনরংপুরে হামলার দুই দিন পরও মামলা হয়নি, প্রশাসনের উদ্যোগে বসতবাড়ি মেরামত২২ ঘণ্টা আগে

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় গঙ্গাচড়া মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন একজন ভুক্তভোগী। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পরে যৌথ অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আলদাদপুর গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। এটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের সীমানা লাগোয়া। গঙ্গাচড়া থানা সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার গ্রামটির এক কিশোর ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর লেখা ও ছবি পোস্ট করেছে, এমন অভিযোগ পায় পুলিশ। পরে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটক করে শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে থানায় আনা হয়। সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে পরদিন রোববার দুপুরে ওই কিশোরকে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুনগঙ্গাচড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা মানবাধিকারের লঙ্ঘন, বিচার দাবি১৪ ঘণ্টা আগে

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই কিশোরকে থানায় নেওয়ার পর তার বিচারের দাবিতে মিছিলসহ উত্তেজিত লোকজন শনিবার তার বাড়ির সামনে যায়। রাত ১০টার দিকে দ্বিতীয়বার আরেকটি মিছিল এসে কিশোরের এক স্বজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। পরে রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আরও পড়ুন২২টির মধ্যে ১৯টি পরিবার বর্তমানে নিজেদের বাড়িতে আছে: জেলা প্রশাসক২৯ জুলাই ২০২৫

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উত্তেজিত জনতা আবারও বাড়িঘরে হামলা শুরু করলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। এতে পুলিশের একজন কনস্টেবল গুরুতর আহত হন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে, এ ঘটনায় ১৫টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

আরও পড়ুনরংপুরে হামলার শিকার পরিবারগুলো আতঙ্কে, বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে২৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রংপুরে হামলার ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার: পুলিশ
  • রংপুরে হামলার দুই দিন পরও মামলা হয়নি, প্রশাসনের উদ্যোগে বসতবাড়ি মেরামত