ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের জিল বাংলা চিনিকলের পাশে দিঘলকান্দি রেলসেতুটির কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। সেতু নির্মাণকাজের চুক্তির মেয়াদ ছিল ৯ মাস। 
অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের রেলসেতুর কাজ। তবে ঠিকাদার বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষ সময়মতো গার্ডার সরবরাহ করতে না পারায় কাজ শেষ করা যায়নি।
জানা গেছে, সেতুটি ২০২০ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই পথে রেল চলাচল সচল রাখতে ও ঝুঁকিমুক্ত করতে একই বছর রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সেতুটি পুনর্নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কাজ পায় এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড সেন্টার নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণের জন্য ৯ মাস সময় দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের শুরুতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। কিন্তু চার বছর শেষ হতে চললেও শেষ হয়নি সেতুটির সংস্কার।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন দেওয়ানগঞ্জ। এই পথে প্রতিদিন তিস্তা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ও জামালপুর কমিউটার নামে চারটি ট্রেন চলে। যাওয়া-আসায় প্রতিবারই ট্রেনগুলোকে নির্মাণাধীন সেতুর ওই স্থানে দাঁড়াতে হয় এবং দায়িত্বরত রেলকর্মীর অনুমতিপত্র নিয়ে সেতুটি পার হতে হয়। সেতুটিতে এখনও বসানো হয়নি স্টিলের গার্ডার, ওয়াল ক্যাপ। সেতুটির ওপর রেললাইনে স্লিপারে কাঠের বিটের পাত লাগানো হলেও তা নড়বড়ে। মৃদুগতিতে ট্রেন চলাচলের সময়ও সেতুটি নড়েচড়ে ওঠে। তা ছাড়া দুই পাশের ওয়াল, ব্লক ও মাটিকাটা, ঢালাইয়ের কাজসহ অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। ফলে প্রতিদিনই ট্রেনগুলোকে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে।
সরদারপাড়া গ্রামের ট্রেনযাত্রী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মাঝে মাঝে জামালপুর-ময়মনসিংহসহ ঢাকায় যাতায়াত করি। সেতুর ওপর ট্রেন উঠলে নড়েচড়ে ওঠে, তখন ভয় লাগে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
মধ্যেরচরের ট্রেনযাত্রী সাইফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে রেলসেতুটির নির্মাণকাজ চলছে। এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন ট্রেনযাত্রীরা। যাতায়াতের সময় ওই স্থানে ট্রেন থেমে যায়। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেখানে মাঝে মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে।
চরভবসুর পূর্বপাড়ার সুরুজ মিয়ার ভাষ্য, অনেক দিন ধরে দেখছেন রেলসেতুটির কাজ চলছে। 
মাঝে মধ্যে কাজ চলে আবার বন্ধ থাকে। সেতুর ওই স্থানে এসে প্রতিটি ট্রেন থামে। মৃদুগতিতে সেতু পার হয়। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে কথা হয় সেতুটির নির্মাণকাজের ঠিকাদার সোহাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কাজ করতে সময় লাগে। সে কারণে সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। দুবার নকশা বদল হয়েছে। গার্ডার পাওয়া যাচ্ছিল না, সে কারণে রেল কর্তৃপক্ষ গার্ডার দিতে বিলম্ব করেছে। তবে এখন কাজ চলছে। শিগগিরই শেষ হবে।’
দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেন জানান, রেলসেতুটি নির্মাণ করা খুব জরুরি। সেতুর ওই স্থানে একজন রেলকর্মী রাখা হয়েছে। তিনি ট্রেন চলাচলের সময় ঝুঁকির বিষয়টি দেখেন। তাতেও ঝুঁকি থেকে যায়। দ্রুত গতিতে সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ করা প্রয়োজন।
রেলওলের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী সিরাজ জিন্নাত সমকালকে বলেন, ওই রেলসেতুর কাজ দ্রুতই শেষ হবে। সেতু নির্মাণ করতে আনুষঙ্গিক যে উপকরণ প্রয়োজন, তা ওই স্থানে নেওয়া হয়েছে। ৬০ ফুট একটি গার্ডার ওই সেতুতে প্রয়োজন, যা রেলপথে বহন করতে না পারায় কাজটি বিলম্বিত হলো। গার্ডারটি কেটে ছোট করে সেতুর ওই স্থানে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সময় স্বল্পতার জন্য ঈদের আগে গার্ডারটি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঈদের পর ওই স্থানে নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ত র ওই স থ ন র লস ত ট সময় দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তরে প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের পরে চব্বিশে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছি

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের পরে আমরা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছি। মানুষের ওপর মানুষের গোলামি খতম করে আল্লাহর গোলামি কায়েম করার জন্য আমাদের আবার তৃতীয়বার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। জাতীয় সংসদে আল্লাহর আইন পাস করতে হবে।’

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘জুলাই ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে দলের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।

মানুষের রচিত কোনো মতবাদ দিয়ে মানুষের মুক্তি আসবে না উল্লেখ করে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এ জন্য এ দেশে আল্লাহর আইন চালু করতে হবে। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সব ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মেনে চলতে হবে।’

সেমিনারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু আজকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, হাসিনার আমলে সংঘটিত সব হত্যার বিচার করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

অনুষ্ঠানে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যাঁরা’ বইয়ের ইংরেজি ও আরবি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন এবং শহীদদের স্মৃতি-তথ্যসংবলিত ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতের এই সেমিনারে আরও কয়েকটি দলের নেতারাও বক্তব্য দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘ইসলাম কায়েম করা ছাড়া লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বন্ধ হবে না। দেশে দুর্নীতিমুক্ত সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন চালু করতে হবে। তা না হলে ভোট ডাকাতি, কারচুপি, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হবে না।’

শহীদদের তালিকা করার জন্য জামায়াতকে ধন্যবাদ জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুসলমানদের জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করে তাঁদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। বর্তমানে একটি দলের মহাসচিব বলেছেন, দেশে দক্ষিণপন্থার উদ্ভব হয়েছে। দক্ষিণপন্থার উদ্ভব হলে তাতে তাঁদের সমস্যা কী? দক্ষিণপন্থার ভয় দেখিয়ে আবার জুলুম-নির্যাতন চালানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, দলের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও রেজাউল করিম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ