বঙ্গবন্ধুর ‘মুক্তিযোদ্ধা’ মর্যাদা বাতিল হয়নি: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ
Published: 4th, June 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুজিবনগর সরকারের নেতৃবৃন্দের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা হয়নি, বরং তাদের ভূমিকা ইতিহাসে স্বীকৃত।
বুধবার (৪ জুন) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুসহ মুজিবনগর সরকারের কেউ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি হারাননি। বরং অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, এই সরকার এবং এর দ্বারা স্বীকৃত বাহিনীই মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি বলেছেন, অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা ইতিহাসভিত্তিক ও সুস্পষ্ট। যারা সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন এবং যুদ্ধ পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। আর যারা অস্ত্র হাতে না নিয়ে যুদ্ধে সহায়তা করেছেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। এতে তাদের মর্যাদা খাটো হয়নি, বরং তাদের ভূমিকাও যথাযোগ্যভাবে স্বীকৃত।
ফারুক-ই-আজম বলেন, মুজিবনগর সরকারই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈধ সরকার ছিল। এই সরকারই সেক্টর কমান্ডারদের দায়িত্ব দিয়েছে, রণাঙ্গনে রসদ ও অস্ত্রের ব্যবস্থা করেছে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে।
তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, মুজিবনগর সরকার যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, সরাসরি রণাঙ্গনে না গেলেও সেই যুদ্ধের প্রতিটি পদক্ষেপের নকশা এ সরকার করেছে। এই যুক্তিতে যদি কেউ বলেন, তারা যুদ্ধ করেননি, তাহলে সেক্টর কমান্ডারদের ক্ষেত্রেও একই কথা দাঁড়াবে। অথচ, তারা যুদ্ধ পরিচালনায় ছিলেন। সুতরাং, মুজিবনগর সরকার যুদ্ধ পরিচালনার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত ছিল।
শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা মর্যাদা বাতিল হয়েছে এমন খবরকে ‘মিসলিডিং’ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এটি সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্তিকর তথ্য। বঙ্গবন্ধুর মতো নেতৃত্বের অবদান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো মানে ইতিহাস বিকৃতি।
তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীদের অর্থাৎ যারা বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন, তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু, সরকার বা এর মন্ত্রীরা কখনোই সহযোগীর তালিকায় পড়েন না। তাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতিই বহাল আছে।
সংজ্ঞা পরিবর্তনের কারণে কেউ মর্যাদাহীন হয়ে পড়বেন না, জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, মর্যাদায় হয়ত পার্থক্য আছে, তবে রাষ্ট্রীয় ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য নেই। মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীরাও যথেষ্ট সম্মানিত।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা ১৯৭২ সালে যা ছিল, বর্তমানে আমরা সেটিই ফিরিয়ে এনেছি। ২০১৮ ও ২০২২ সালে যে পরিবর্তন করা হয়েছিল, সেটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। তাই, আমরা আগের সংজ্ঞায় ফিরে গেছি, ইতিহাসকে ইতিহাসের জায়গায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য।
ফারুক-ই-আজম বলেন, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা টুইস্ট করতে চায়, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু, আমাদের দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কমুক্ত রাখা। আমরা সেই ইতিহাসকে ভিত্তি করেই অধ্যাদেশ করেছি, যাচাই-বাছাই ও ভেটিং শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বারবারই আহ্বান জানান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। কে মুক্তিযোদ্ধা, কে সহযোগী, এসব তথ্য জনগণের জানা। সেগুলো নিয়ে অহেতুক রাজনীতি বা বিভ্রান্তি কাম্য নয়।
ঢাকা/এএএম/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম জ বনগর সরক র সরক র র উপদ ষ ট সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫