অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুজিবনগর সরকারের নেতৃবৃন্দের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা হয়নি, বরং তাদের ভূমিকা ইতিহাসে স্বীকৃত।

বুধবার (৪ জুন) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুসহ মুজিবনগর সরকারের কেউ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি হারাননি। বরং অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, এই সরকার এবং এর দ্বারা স্বীকৃত বাহিনীই মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি বলেছেন, অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা ইতিহাসভিত্তিক ও সুস্পষ্ট। যারা সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন এবং যুদ্ধ পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। আর যারা অস্ত্র হাতে না নিয়ে যুদ্ধে সহায়তা করেছেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। এতে তাদের মর্যাদা খাটো হয়নি, বরং তাদের ভূমিকাও যথাযোগ্যভাবে স্বীকৃত।

ফারুক-ই-আজম বলেন, মুজিবনগর সরকারই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈধ সরকার ছিল। এই সরকারই সেক্টর কমান্ডারদের দায়িত্ব দিয়েছে, রণাঙ্গনে রসদ ও অস্ত্রের ব্যবস্থা করেছে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে।

তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, মুজিবনগর সরকার যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, সরাসরি রণাঙ্গনে না গেলেও সেই যুদ্ধের প্রতিটি পদক্ষেপের নকশা এ সরকার করেছে। এই যুক্তিতে যদি কেউ বলেন, তারা যুদ্ধ করেননি, তাহলে সেক্টর কমান্ডারদের ক্ষেত্রেও একই কথা দাঁড়াবে। অথচ, তারা যুদ্ধ পরিচালনায় ছিলেন। সুতরাং, মুজিবনগর সরকার যুদ্ধ পরিচালনার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত ছিল।

শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা মর্যাদা বাতিল হয়েছে এমন খবরকে ‘মিসলিডিং’ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এটি সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্তিকর তথ্য। বঙ্গবন্ধুর মতো নেতৃত্বের অবদান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো মানে ইতিহাস বিকৃতি।

তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীদের অর্থাৎ যারা বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন, তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু, সরকার বা এর মন্ত্রীরা কখনোই সহযোগীর তালিকায় পড়েন না। তাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতিই বহাল আছে।

সংজ্ঞা পরিবর্তনের কারণে কেউ মর্যাদাহীন হয়ে পড়বেন না, জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, মর্যাদায় হয়ত পার্থক্য আছে, তবে রাষ্ট্রীয় ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য নেই। মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীরাও যথেষ্ট সম্মানিত।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা ১৯৭২ সালে যা ছিল, বর্তমানে আমরা সেটিই ফিরিয়ে এনেছি। ২০১৮ ও ২০২২ সালে যে পরিবর্তন করা হয়েছিল, সেটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। তাই, আমরা আগের সংজ্ঞায় ফিরে গেছি, ইতিহাসকে ইতিহাসের জায়গায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য।

ফারুক-ই-আজম বলেন, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা টুইস্ট করতে চায়, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু, আমাদের দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কমুক্ত রাখা। আমরা সেই ইতিহাসকে ভিত্তি করেই অধ্যাদেশ করেছি, যাচাই-বাছাই ও ভেটিং শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বারবারই আহ্বান জানান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। কে মুক্তিযোদ্ধা, কে সহযোগী, এসব তথ্য জনগণের জানা। সেগুলো নিয়ে অহেতুক রাজনীতি বা বিভ্রান্তি কাম্য নয়।

ঢাকা/এএএম/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম জ বনগর সরক র সরক র র উপদ ষ ট সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

বঙ্গবন্ধু–তাজউদ্দীনসহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা হবেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’, অন্যরা সহযোগী

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে মুজিবনগর সরকার গঠনে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার এই সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধ্যাদেশটি জারি করে।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার (মুজিবনগর সরকার) শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ।

আরও পড়ুনবীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে অধ্যাদেশ জারি১১ ঘণ্টা আগে

নতুন অধ্যাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারের যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

ফারুক ই আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাইবাছাই করতে গিয়ে দেখা যায়, মুজিবনগর সরকারের কিছু কর্মচারী ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। এখন থেকে তাঁরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে কাউকে বাতিল করা হয়নি। শুধু সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। যিনি যে সুবিধা পাচ্ছেন, তিনি সেই সুবিধা পাবেন। শুধু যাঁরা সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, তাঁরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হবেন। অন্যরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

সংশোধিত অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের’ জন্য পাঁচটি শ্রেণি ঠিক করা হয়েছে। প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যেসব বাংলাদেশি বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) বা এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। পঞ্চমত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ২১ জন সদস্য এত দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হতেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোহাম্মদ জাকারিয়া পিন্টু, কাজী সালাহউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান খান। এখন থেকে তাঁরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সব বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাঁদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল) তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও সেই সরকার স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর
  • নতুন অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারের সব সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধার স্পষ্ট স্বীকৃতি দেওয়া আছে: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল ফেইক নিউজ: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
  • মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্যাখ্যা
  • মুজিবনগর সরকারের যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
  • মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবর ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’
  • বঙ্গবন্ধু–তাজউদ্দীনসহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা হবেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’, অন্যরা সহযোগী
  • মুজিবনগর সরকারের সব সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধার স্পষ্ট স্বীকৃতি দেওয়া আছে: ফারুকী