চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ঈদগড় বাজার থেকে ঈদগড় সড়ক ধরে চার কিলোমিটার এগোলে ভোমরিয়াঘোনা সংরক্ষিত বন। কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় অবস্থিত এই বন এশিয়ান হাতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি চলাচলের ক্ষেত্র (করিডোর)। ২০২৩ সাল পর্যন্ত শতবর্ষী গর্জন, বৈলাম, চাপালিশগাছে ভরপুর বনটিতে ঘন ঝোপঝাড়, লতাগুল্মের প্রাচুর্য ছিল। দেখা যেত হাতির পালের বিচরণ। তবে টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের (এসইউএফএএল বা ‘সুফল’) আওতায় বনায়ন করতে গিয়ে ঝোপঝাড়-লতাগুল্ম কেটে ফেলা হয়েছে। এতে বনের এই অংশে হাতির খাদ্য কমে গেছে। ফলে প্রাণীগুলোর বিচরণও কমে গেছে।

১৪ মে ভোমরিয়াঘোনায় গিয়ে ঈদগড় সড়কের পাশেই বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের একটি ফলক চোখে পড়ল। তাতে লেখা আছে, এখানে ১০ হেক্টর জায়গায় ১৫ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। ফলকে এই বনায়নকে এএনআর (অ্যাসিস্টেড ন্যাচারাল রিজেনারেশন) বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো চারাকে বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য এই বনায়ন। তবে বনের ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, সম্প্রতি নিষিদ্ধঘোষিত আকাশমণিগাছের চারা। এই প্রতিবেদক বনের আধা কিলোমিটারের মতো ভেতরে যান। পুরো পথে আকাশমণির চারা দেখতে পাওয়া যায়। বনের আন্ডারগ্রোথ অর্থাৎ গাছের নিচে জন্ম নেওয়া নানা ধরনের লতাগুল্ম, ছোট উদ্ভিদ—সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।

কোথায় কোন ধরনের বনায়ন করতে হবে, তা বলা আছে সুফল প্রকল্পের ‘বন পুনরুদ্ধার ও বিভিন্ন বনায়ন পদ্ধতির নির্দেশিকা’য়। এতে এএনআর, এফজিএস (ফাস্ট গ্রোয়িং স্পেসিজ বা দ্রুত বর্ধনশীল প্রজাতি), এসজিএস (স্লো গ্রোয়িং স্পেসিজ বা দীর্ঘ মেয়াদে বর্ধনশীল প্রজাতি) চারা রোপণের মতো ৩২ রকমের বনায়নের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি হেক্টরে চারার সংখ্যা কত হবে, তা–ও নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। যেমন এএনআর বনায়ন করতে হবে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো চারাকে সুরক্ষা দিয়ে। অথচ ভোমরিয়াঘোনায় বনের ঈদগড় সড়ক লাগোয়া অংশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো চারার দেখা পাওয়া গেল না। বন কেটে লাগানো হয়েছে ১৫ প্রজাতির গাছের ১৫ হাজার চারা। নির্দেশিকা অনুযায়ী এএনআর বনায়নে হেক্টরপ্রতি ৫০০ চারা রোপণের কথা; এখানে লাগানো হয়েছে ১ হাজার ৫০০ করে।

প্রাকৃতিক বনে হস্তক্ষেপ করলে হাতি কেন, অন্যান্য বন্য প্রাণীও সংকটে পড়ে যাবে। প্রকৃতিই আসলে নির্ধারণ করবে কে কীভাবে বেঁচে থাকবে। মানুষের হস্তক্ষেপ যত কমানো যায়, তত ভালো। অধ্যাপক এম এ আজিজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোমরিয়াঘোনার সংরক্ষিত বনের এক পাশে পুরোটাই কেটে নতুন বনায়ন করা হয়েছে। অন্য পাশে রয়ে গেছে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ঘন বন। বন রক্ষার মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা (ফরেস্টার) নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রচণ্ড রোদে হাতিরা বনের এই অংশের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। রোদের তেজ কমলে বের হয়ে বনের ডোবায় পানি আর নলখাগড়া খায়।

অথচ সুফল প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে বৃক্ষশূন্য ও অবক্ষয়িত বনাঞ্চলে বনায়নের জন্য। অর্থাৎ বনের যে অংশে গাছপালা নেই এবং যেসব অংশে গাছপালা কমে যাচ্ছে, সেসব অংশে নতুন করে গাছের চারা লাগানো হবে।

প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বনায়নে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী বৃক্ষশূন্য বা অবক্ষয়িত বনাঞ্চল নেই বন বিভাগের অধীনে। তাই বনের গহিনে এসব বনায়ন করেছে কেউ কেউ। তিনটি জেলা থেকে এফজিএস (দ্রুত বর্ধনশীল প্রজাতি) বনায়নের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভোমরিয়াঘোনা বনের কিছুটা ভেতরে লাগানো আকাশমণিগাছের চারা। ১৪ মে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র জন ম ন

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ