মন বলছিল, ভালোবাসা আর যত্ন পেলে পাখিটা বাঁচবে
Published: 7th, June 2025 GMT
স্কুল থেকে ফিরছিলাম। এমন সময় ডোবার মধ্য থেকে টিয়া পাখির ডাক কানে এল। অল্প বয়স, রাজ্যের কৌতূহল। পাখি পোষার ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু বাসার কেউ রাজি হচ্ছিল না। বলত, বনের পাখি পালা যাবে না। তাই ডোবায় যদি পাখি পেয়েই যাই, মন্দ হয় না।
পাখিটিকে কাদার মধ্যে পেলাম। এক পা ভাঙা। রক্ত ঝরছিল। টিউবওয়েলের কাছে নিয়ে পাখিটিকে পরিষ্কার করলাম। একজনের বুদ্ধিতে পায়ে চুন মেখে বেঁধে দিলাম। আর রোদে রাখলাম। পাখিটির এই অবস্থা দেখে বাসার সবার হয়তো করুণা হলো। কেউ কিছু বলল না। তবে আশপাশের অনেকেই বলল, এই পাখি বাঁচবে না।
কাছেই ছিল পশু হাসপাতাল। পাখিটিকে নিয়ে গেলাম। সবার সে কী তুচ্ছতাচ্ছিল্য। ভাবখানা এমন, পাখির জীবন কোনো জীবনই না। সে মরলেই কী আর বাঁচলেই কী, কারও কিছুই যায়–আসে না। অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখল তারা। তারপর কী করতে হবে বলে দিল। সেই সঙ্গে তারাও বলল, এই পাখি বড়জোর দুই দিন বাঁচতে পারে।
বাসায় এনে আলো জ্বালিয়ে গরম জায়গায় পাখিটিকে রাখলাম। এরপর একজন একটি খাঁচাও জোগাড় করে দিল। আমার মন বলছিল, ভালোবাসা আর যত্ন পেলে ও বাঁচবে। সৃষ্টিকর্তা নিখাদ ভালোবাসা ফেরান না। ভাত, চাল, ধান, যা পাই তাই খেতে দিই। একটু একটু খায়। একসময় বন্ধ হয় রক্ত পড়া। এক দিন দুই দিন করে ২২ দিন চলে যায়। একটু একটু করে সুস্থ হয় সে। নড়েচড়ে বসে। খায়। আমার সে কী আনন্দ।
৪০ দিন চলে গেল। এবার পাখিটি ডাকাডাকি শুরু করে। ভাঙা পা নাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই। ওড়ার চেষ্টা করে। আশপাশের মানুষ হাঁ করে দেখে। মৃতপ্রায় পাখি বাঁচল কীভাবে! চোখেমুখে তাদের নানা প্রশ্ন।
সবাই ভেবেছিল পাখিটি পোষ মেনে গেছে। ও আর যাবে না। একদিন সবার সামনে খাঁচা থেকে পাখিটিকে বের করলাম। সে উড়ে চলে গেল। একবার পেছন ফিরেও তাকাল না। যে মানুষটা মনপ্রাণ উজাড় করে তাকে ভালোবাসল, তার দিকেও তাকাল না। আমি নীরবে কাঁদলাম কিছুক্ষণ। আমি যে তার মায়ার পড়ে গিয়েছিলাম। তাকে ভালোবেসেছিলাম।
এর বহুদিন পরের ঘটনা। ঘরের চালে একটি টিয়া পাখি দেখা গেল। সেই পাখিটি। চালে বসেই ডাকছিল। সবাই খুব অবাক হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন মাঝেমধ্যে সে চালে এসে বসত। কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে চলে যেত। হয়তো ডেকেই সে কৃতজ্ঞতা জানাত।
আমার চোখ ভিজে যায়। একটা অবলা পাখি তার প্রতি ভালোবাসা, যত্নের কথা মনে রেখেছে। এই নশ্বর জীবনে এই প্রাপ্তি নেহাতই কম নয়।
আরও পড়ুনশহরে ফ্ল্যাট আমি ঠিকই নিয়েছি, কিন্তু মা আর কোনো দিন এলেন না১০ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নিউ ইয়র্কে নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল ম্যানহাটনে একটি বহুতল অফিসে বন্দুক হামলায় নিহত হয়েছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬)। জানা গেছে, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসী ছিলেন। খবর রয়টার্সের।
নিহত কর্মকর্তা দিদরুল ইসলামকে একজন ‘বীর বাংলাদেশি অভিবাসী’ হিসেবে উল্লেখ বর্ণনা করেছেন নিউ ইয়র্কের মেয়র এবং নিউ ইয়র্কের পুলিশ কমিশনার। তারা বলেছেন, ওই কর্মকর্তা নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে অন্যদের জীবন রক্ষা করেছিলেন।
সোমবার ম্যানহাটনের মিডটাউন অফিস টাওয়ারের ভেতরে এক বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬) সহ চারজনকে হত্যা করে। হামলাকারী পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
পুতিনকে এবার ১২ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ৪
নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ভয়াবহ একটি বন্দুক সহিংসতার ঘটনায় আমরা চারটি প্রাণ হারিয়েছি, যার মধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের একজন সদস্য ‘অফিসার ইসলাম’ রয়েছেন।
অ্যাডামস জানান, নিহত অফিসার তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে নিউ ইয়র্ক পুলিশে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশ থেকে আসা একজন অভিবাসী।
মেয়র বলেন, “হামলার সময় অফিসার ইসলাম অন্যদের জীবন রক্ষা করছিলেন, তিনি নিউ ইয়র্কবাসীদের রক্ষা করছিলেন। তিনি এই শহরকে ভালোবাসতেন এবং আমরা যাদের সাথে কথা বলেছি তারা সবাই বলেছেন যে, তিনি একজন সৎ মানুষ ও ঈশ্বরে বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন।”
মেয়র আরো জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তিনি অফিসর ইসলামের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন।
মেয়র আরো বলেন, “আমি তাদেরকে বলেছি, অফিসার ইসলাম একজন একজন বীর এবং আমরা তার ত্যাগের প্রশংসা করি।”
নিউ ইয়র্কের পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ সংবাদ সম্মেলনে জানান, অফিসার ইসলাম বিবাহিত ছিলেন এবং তার দুটি সন্তান ছিল। তার স্ত্রী তৃতীয় সন্তানের মা হতে চলেছেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “অফিসার ইসলাম নিজেকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন। তিনি চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, তাকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।”
ঢাকা/ফিরোজ