স্কুল থেকে ফিরছিলাম। এমন সময় ডোবার মধ্য থেকে টিয়া পাখির ডাক কানে এল। অল্প বয়স, রাজ্যের কৌতূহল। পাখি পোষার ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু বাসার কেউ রাজি হচ্ছিল না। বলত, বনের পাখি পালা যাবে না। তাই ডোবায় যদি পাখি পেয়েই যাই, মন্দ হয় না।

পাখিটিকে কাদার মধ্যে পেলাম। এক পা ভাঙা। রক্ত ঝরছিল। টিউবওয়েলের কাছে নিয়ে পাখিটিকে পরিষ্কার করলাম। একজনের বুদ্ধিতে পায়ে চুন মেখে বেঁধে দিলাম। আর রোদে রাখলাম। পাখিটির এই অবস্থা দেখে বাসার সবার হয়তো করুণা হলো। কেউ কিছু বলল না। তবে আশপাশের অনেকেই বলল, এই পাখি বাঁচবে না।

কাছেই ছিল পশু হাসপাতাল। পাখিটিকে নিয়ে গেলাম। সবার সে কী তুচ্ছতাচ্ছিল্য। ভাবখানা এমন, পাখির জীবন কোনো জীবনই না। সে মরলেই কী আর বাঁচলেই কী, কারও কিছুই যায়–আসে না। অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখল তারা। তারপর কী করতে হবে বলে দিল। সেই সঙ্গে তারাও বলল, এই পাখি বড়জোর দুই দিন বাঁচতে পারে।

বাসায় এনে আলো জ্বালিয়ে গরম জায়গায় পাখিটিকে রাখলাম। এরপর একজন একটি খাঁচাও জোগাড় করে দিল। আমার মন বলছিল, ভালোবাসা আর যত্ন পেলে ও বাঁচবে। সৃষ্টিকর্তা নিখাদ ভালোবাসা ফেরান না। ভাত, চাল, ধান, যা পাই তাই খেতে দিই। একটু একটু খায়। একসময় বন্ধ হয় রক্ত পড়া। এক দিন দুই দিন করে ২২ দিন চলে যায়। একটু একটু করে সুস্থ হয় সে। নড়েচড়ে বসে। খায়। আমার সে কী আনন্দ।

৪০ দিন চলে গেল। এবার পাখিটি ডাকাডাকি শুরু করে। ভাঙা পা নাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই। ওড়ার চেষ্টা করে। আশপাশের মানুষ হাঁ করে দেখে। মৃতপ্রায় পাখি বাঁচল কীভাবে! চোখেমুখে তাদের নানা প্রশ্ন।

সবাই ভেবেছিল পাখিটি পোষ মেনে গেছে। ও আর যাবে না। একদিন সবার সামনে খাঁচা থেকে পাখিটিকে বের করলাম। সে উড়ে চলে গেল। একবার পেছন ফিরেও তাকাল না। যে মানুষটা মনপ্রাণ উজাড় করে তাকে ভালোবাসল, তার দিকেও তাকাল না। আমি নীরবে কাঁদলাম কিছুক্ষণ। আমি যে তার মায়ার পড়ে গিয়েছিলাম। তাকে ভালোবেসেছিলাম।

এর বহুদিন পরের ঘটনা। ঘরের চালে একটি টিয়া পাখি দেখা গেল। সেই পাখিটি। চালে বসেই ডাকছিল। সবাই খুব অবাক হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন মাঝেমধ্যে সে চালে এসে বসত। কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে চলে যেত। হয়তো ডেকেই সে কৃতজ্ঞতা জানাত।

আমার চোখ ভিজে যায়। একটা অবলা পাখি তার প্রতি ভালোবাসা, যত্নের কথা মনে রেখেছে। এই নশ্বর জীবনে এই প্রাপ্তি নেহাতই কম নয়।

আরও পড়ুনশহরে ফ্ল্যাট আমি ঠিকই নিয়েছি, কিন্তু মা আর কোনো দিন এলেন না১০ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন

র‍াস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা

রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।” 

দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।” 

তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” 

পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন