জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ
Published: 10th, June 2025 GMT
ভারতসহ কয়েকটি দেশে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া না যাওয়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এলো এমন নিদের্শনা। সংস্থাটির রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পক্ষ থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা.
নির্দেশনায় বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভেরিয়েন্ট, বিশেষ করে অমিক্রন এলএফ. ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সব স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবিলায় কিছু কার্যক্রম নিতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক না হলেও দেশে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্তের কথা বলছেন। এর নাম এক্সএফজি। এর পাশাপাশি এক্সএফসি ধরনটিও পাওয়া গেছে। দুটোই করোনার শক্তিশালী ধরন অমিক্রনের জেএন-১ ভ্যারিয়েন্টের উপধরন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনা হলো
সাতবার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোবেন (অন্তত ২৩ সেকেন্ড)।
নাক-মুখ ঢাকায় জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।
আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে
অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না
হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু, কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন।
দেশে প্রবেশের পথের জন্য নির্দেশনা
দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ, বিমান বন্দরসমূহে আইএইচআর (IHR-2005) স্বাস্থ্য ডেস্কসমূহে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেল্যান্স জোরদার করুন।
দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রি সমূহে থার্মাল স্কান্যার, ডিজিটাল হেন্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করুন।
চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক, গ্লাভস এবং রোগ প্রতিরোধী পোশাক মজুত রাখুন (পিপিই)।
ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রোগ প্রতিরোধ নির্দেশনা সমূহ প্রচার করুন।
জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশসমূহে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়
অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, মারাত্মক অসুস্থ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন।
প্রয়োজন হলে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন (০১৪০১-১৯৬২৯৩)।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ভ ড ১৯ স ক রমণ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নজরদারি বৃদ্ধিসহ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে
দীর্ঘদিন ধরে মৎস্যজীবীদের দাবি ছিল, সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় কমিয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হোক। তা না হলে এই সুযোগে ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকার মৎস্যজীবীদের সে দাবি মেনে নিষেধাজ্ঞার সময় কমিয়ে এনেছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, মৎস্যজীবীরাই সেই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। এতে নিষেধাজ্ঞার সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দেশের সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় সরকার প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উদ্দেশ্য একটাই—মাছের প্রজনন, বৃদ্ধি ও টেকসই আহরণ নিশ্চিত করা। এ বছরও সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের এ নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, মাঠপর্যায়ে এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নানা দুর্বলতা দেখা গেছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, তালতলীসহ বরিশালের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের অসাধু ব্যবসায়ী ও জেলেরা অভিনব কৌশলে সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করছেন। এরপর এসব মাছ ছোট ট্রলারে করে বন্দরে এনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করা হচ্ছে। এমনকি যাত্রীবাহী বাসে করেও ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে নিষিদ্ধ সময়ে ধরা এসব মাছ।
এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত মৎস্যজীবী ও সচেতন ব্যবসায়ীরা নিষেধাজ্ঞার সুফল নিয়ে সন্দিহান। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতির বক্তব্যে উঠে এসেছে হতাশা। তিনি বলেছেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনার পেছনে তাঁরা অনেক শ্রম দিয়েছেন, আন্দোলন করেছেন। সরকার তাঁদের দাবি মেনে নিষেধাজ্ঞার সময় কয়েক দিন কমিয়ে দিলেও অনেক ট্রলারমালিক ও জেলে নিষেধাজ্ঞা মানছেন না।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাঁদের কোনো ঢিলেমি নেই। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু জনবলসংকট থাকায় সব কাজ তাঁদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সড়কপথে মাছ পাচার রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তাঁরা জানান।
প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন অবাধ শিকারে মৎস্যসম্পদ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ারই কথা। এ মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা প্রায় শেষ হয়ে গেলেও আগামী বছরগুলো থেকে এ ব্যাপারে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ ও কঠোর নজরদারি জরুরি। নৌ ও সড়কপথে মাছ পাচার প্রতিরোধে আন্তবিভাগীয় সমন্বিত অভিযান চালাতে হবে। নজরদারিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সচেতনতা ও বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে তাঁদের নিষেধাজ্ঞা মানতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি সহায়তা থেকে কোনো জেলে যেন বঞ্চিত না হন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যাঁরা নিষেধাজ্ঞা ভাঙবেন, তাঁদের সতর্কীকরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে শাস্তি দিতে হবে।