ভারতসহ কয়েকটি দেশে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া না যাওয়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এলো এমন নিদের্শনা। সংস্থাটির রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পক্ষ থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। 

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা.

হালিমুর রশিদের স্বাক্ষরে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতেও বলা হয়েছে সেখানে।

নির্দেশনায় বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভেরিয়েন্ট, বিশেষ করে অমিক্রন এলএফ. ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সব স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবিলায় কিছু কার্যক্রম নিতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক না হলেও দেশে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্তের কথা বলছেন। এর নাম এক্সএফজি। এর পাশাপাশি এক্সএফসি ধরনটিও পাওয়া গেছে। দুটোই করোনার শক্তিশালী ধরন অমিক্রনের জেএন-১ ভ্যারিয়েন্টের উপধরন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনা হলো
সাতবার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোবেন (অন্তত ২৩ সেকেন্ড)।
নাক-মুখ ঢাকায় জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।
আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে
অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না
হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু, কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন।

দেশে প্রবেশের পথের জন্য নির্দেশনা
দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ, বিমান বন্দরসমূহে আইএইচআর (IHR-2005) স্বাস্থ্য ডেস্কসমূহে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেল্যান্স জোরদার করুন।
দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রি সমূহে থার্মাল স্কান্যার, ডিজিটাল হেন্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করুন।
চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক, গ্লাভস এবং রোগ প্রতিরোধী পোশাক মজুত রাখুন (পিপিই)।
ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রোগ প্রতিরোধ নির্দেশনা সমূহ প্রচার করুন।
জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশসমূহে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।

সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়
অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, মারাত্মক অসুস্থ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন।
প্রয়োজন হলে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন (০১৪০১-১৯৬২৯৩)।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ভ ড ১৯ স ক রমণ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বডি ক্যামেরা পাচ্ছে বিএসএফ

ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের পাঁচ হাজারের বেশি বডি-ওর্ন ক্যামেরা দেওয়া হচ্ছে। এই ক্যামেরাগুলো বিএসএফ সদস্যদের শরীরে লাগানো থাকবে। এর মাধ্যমে সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ, পুশ ব্যাকের দৃশ্যে রেকর্ড করা যাবে। কর্তব্যরত কর্মীদের ওপর অপরাধীদের আক্রমণের ঘটনাও রেকর্ড করা যাবে।

নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সরকারি সূত্র ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু নির্বাচিত সীমান্ত চৌকিতে বায়োমেট্রিক যন্ত্রও বসানো হচ্ছে। এই ডিভাইসগুলোতে অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিস স্ক্যান নেওয়া যাবে। এই তথ্যগুলো পরে ‘ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে’ প্রদান করা হবে।

গত বছর ৫ আগস্ট, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ফ্রন্টে বিএসএফের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দুটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ‘ব্যাপক পর্যালোচনা’ করার পর সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএসএফ সদর দপ্তরের এই দুটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

আরো পড়ুন:

বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘোষণা অভিনেতার স্ত্রীর

ভারতে মন্দিরে পদদলিত হয়ে ৬ জনের প্রাণহানি

সূত্র জানায়, ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত বিএসএফ জওয়ানদের কাছে দুটি ব্যাচে প্রায় পাঁচ হাজার বডি-ওর্ন ক্যামেরা পাঠানো হচ্ছে। এই ক্যামেরাগুলো নাইট-ভিশন সক্ষম এবং প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টার ফুটেজ ধারণ করতে পারে।

তারা বলেন, বিএসএফ বাহিনী যখন অবৈধ বাংলাদেশিদের বিতাড়িত করে অথবা দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়, তখন তথ্য ও প্রমাণ রেকর্ড করতে এই ক্যামেরাগুলো সহায়ক হবে। এর ফলে মানব পাচার এবং অনুপ্রবেশের পাশাপাশি মাদক, গবাদি পশু এবং জাল ভারতীয় মুদ্রা (এফআইসিএন) পাচারের মতো সীমান্তবর্তী অপরাধ বন্ধ করা যাবে।

সূত্র জানিয়েছে, উভয় দেশের অপরাধীরা বিএসএফ সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করলেও রেকর্ডিংগুলো প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। বিএসএফের দাবি বাংলাদেশ এবং তাদের বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দ্বিপাক্ষিক ফোরামে বারবার দাবি করে আসছে যে ভারতীয় পক্ষ তাদের নাগরিকদের অস্বাভাবিক শক্তি প্রয়োগ করে এবং অন্যায্যভাবে হত্যা করছে, অন্যদিকে বিএসএফ সর্বদা বলে আসছে যে তারা সৈন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য শেষ উপায় হিসাবে অ-প্রাণঘাতী বা প্রাণঘাতী গুলি চালায়।

এই ঘটনাগুলো এখন এই দেহ ক্যামেরাগুলো দ্বারা রেকর্ড করা হবে এবং তদন্তের প্রয়োজনে প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে, বলে আশাবাদী বিএসএফ। 

অন্যদিকে দ্বিতীয় অনুমোদিত প্রস্তাব হিসেবে সীমান্ত পারাপারের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু নির্বাচিত এবং ‘দুর্বল’ বিএসএফ বিওপিতে বায়োমেট্রিক্স ডেটা রেকর্ডিং মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে, যা ভারতীয় ফ্রন্টে বিএসএফ কর্তৃক ধরা পড়া অবৈধ বাংলাদেশিদের আঙুলের ছাপ এবং চোখের স্ক্যান ধারণ করবে।

বিএসএফ জানিয়েছে, অনুপ্রবেশকারী এবং অবৈধ বাংলাদেশিদের ভারতে প্রবেশের চেষ্টার বিরুদ্ধে একটি প্রমাণ-ভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করতে এই বায়োমেট্রিক তথ্য এফআরও-এর সঙ্গে ভাগ করা হবে।

পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব রাজ্যকে তাদের অধিক্ষেত্রে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের পরীক্ষা করে তাদের বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত বিএসএফ এই সীমান্ত থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী ১ হাজার ৩৭২ জন বাংলাদেশিকে আটক করেছে। অন্যদিকে, ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার সময় বিভিন্ন রাজ্য পুলিশ বাহিনী ৩ হাজার ৫৩৬ জনেরও বেশি পুরুষ ও নারীকে ধরেছে অথবা তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।

গত বছরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান ছিল ২ হাজার ৪২৫ জন (আগত) এবং ১ হাজার ৪৯ জন (বহির্গামী)।

তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের দুষ্কৃতীদের দ্বারা বিএসএফ সদস্যদের ওপর ৭৭টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এই সীমান্তে ৩৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চীনের রেশম পথের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অন্বেষণে বিদেশি ভ্রমণকারীরা
  • বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বডি ক্যামেরা পাচ্ছে বিএসএফ