মা যখন ভাত খেতে ডাকছিলেন, তখন পুকুরে ভাসছিল ফাহিয়ার নিথর দেহ
Published: 11th, June 2025 GMT
ঈদের রেশ তখনো কাটেনি। গ্রামের বাড়িতে চলছে আনন্দ–আড্ডা। এর মধ্যে দুপুরের খাবারের সময় ছোট্ট ফাহিয়াকে ডাকলেন মা। কোথাও পাওয়া গেল না তাকে। ঘণ্টাখানেক আগেই বাড়ির অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল। তারপর আর তার দেখা পাওয়া যায়নি। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে এ ঘর–ও ঘুর খুঁজতে থাকেন মা। হঠাৎ বাড়ির বাইরে থেকে চিৎকার। পাওয়া গেছে ফাহিয়াকে। পুকুরে নিথর ভাসছে তার দেহ।
আজ বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ঠান্ডারপাড়া এলাকায় বসতঘর–সংলগ্ন পুকুরে ডুবে মারা গেছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিয়া আকতার (৯)। সে সোনালী বাজার সাজেদা বেগম বিদ্যাপীঠের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও নুরুল আমিনের মেয়ে।
শিশুটির মামা চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নুরুল ইসলামের কাছ থেকে জানা গেল মর্মান্তিক এ ঘটনার বিবরণ। শোকার্ত নুরুল ইসলাম বলেন, আজ দুপুরে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসা ৮–৯ শিশু একসঙ্গে খেলছিল। ফাহিয়াও তাদের সঙ্গে ছিল। প্রচণ্ড গরমের কারণে তারা বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে যায়। ঘণ্টা দেড়েক পরে শিশুরা যে যার মতো গোসল সেরে পুকুর থেকে উঠে যায়। এ সময় ফাহিয়া যে পুকুরে ডুবে গেছে, তা কারও খেয়াল ছিল না। পরে মা যখন তাকে ভাত খেতে খুঁজছিলেন, তখন ফাহিয়ার মরদেহ পুকুরে ভাসতে দেখেন সবাই।
নুরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দ্রুত তাকে উদ্ধার করে পেকুয়া বাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ফাহিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি