শেফিল্ডে সর্বোচ্চ বেতনভোগী হামজা, এবার কি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে?
Published: 12th, June 2025 GMT
বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন প্রাণ সঞ্চার করা ইংলিশ প্রবাসী তারকা মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী এখন কোথায় খেলবেন, তা নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মনে কৌতূহল তুঙ্গে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর তিনি ইংল্যান্ডে ফিরেছেন। শেফিল্ড ইউনাইটেডের সাথে ধারের চুক্তি শেষ হওয়ায় ২৭ বছর বয়সী এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে তার মূল ক্লাব লেস্টার সিটিতে ফিরতে হচ্ছে।
তবে গুঞ্জন বলছে, তিনি গ্রিসের অন্যতম সফল ক্লাব অলিম্পিয়াকোসে নাম লেখাতে পারেন, যার ফলে আগামী মৌসুমে তাকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে দেশটির রেডিও স্টেশন স্পোর্ট এফএম। ক্লাবটির বর্তমান কোচ হোসে লুইস মেন্দিলিবার ইতোমধ্যেই হামজার খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এই দলটি এবার গ্রিক লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সরাসরি জায়গা পেয়েছে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। ফলে হামজার ইউরোপীয় শীর্ষ আসরে খেলার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
গবেষণাধর্মী ফুটবল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠান ক্যাপোলজির তথ্য অনুযায়ী, শেফিল্ড ইউনাইটেডে ধারে খেলতে গিয়ে হামজার সপ্তাহিক আয় ছিল ৪১ হাজার ৪৭৩ ইউরো—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৭ লাখ টাকা। প্রতিদিন আয় করেছেন প্রায় ৮ লাখ টাকা। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১২৪ দিনের চুক্তিতে তিনি পেয়েছেন আনুমানিক ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা দলটির সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত খেলোয়াড় হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে তাকে।
তবে লেস্টারে থাকা অবস্থায় তার বেতন ছিল এর প্রায় অর্ধেক, প্রতি সপ্তাহে ১৭ হাজার ৭৭৪ ইউরো। সেখানে তার সঙ্গে আরও দুই বছরের চুক্তি থাকলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। শেফিল্ড ইউনাইটেড তাকে স্থায়ীভাবে দলে নেওয়ার সুযোগ পেলেও সেই পথে এগোয়নি ক্লাবটি।
হামজার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় রয়েছেন তিনিও। তার বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী জানিয়েছেন, হামজা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি পরবর্তী ক্লাব নিয়ে। তবে গ্রিক দৈনিকের রিপোর্টে উঠে এসেছে, অলিম্পিয়াকোসে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
বর্তমানে হামজার বাজারমূল্য ৪৫ লাখ ইউরো (প্রায় ৬৩ কোটি টাকা)। লেস্টার তাকে বিক্রি করলে কত দামে ছাড়বে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ পেলে তার বাজারমূল্য ও ক্যারিয়ার, দুটিই নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।
হামজার দেখানো পথে আরও দুই প্রবাসী ফুটবলার ফাহামিদুল ইসলাম এবং শমিত সোমেরও সম্প্রতি বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে। সিঙ্গাপুরের কাছে হারলেও তারা দুর্দান্ত খেলেছেন। হামজা ও শমিত একই ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়েছেন, হামজা ইংল্যান্ডে এবং শমিত কানাডায়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।