চলছে বর্ষা মৌসুম। বর্ষা ও জোয়ারের পানিতে টইটম্বুর কিশোরগঞ্জের হাওর-বাওর। মিঠামইন ও বালিখলায় চোখ যতদূর যায় কেবই জলরাশি। স্বচ্ছ জলের চোখ-জুড়ানো দৃশ্য উপভোগ করতে ভিড় করছেন হাজারো পর্যটক। ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন অনেকে। পর্যটকের স্রোত এখনো বাড়ছেই। তীব্র গরম উপেক্ষা করে প্রতিদিন দেশের নান প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন এই অঞ্চলে।

রোববার বালিখলা ও মিঠামইন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পর্যটকদের প্রাণবন্ত ভিড়। অনেকে পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুবান্ধব মিলে বেড়াতে এসেছেন। বর্ষার পানি বাড়তে থাকায় হাওরের সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে নবরূপে। স্থানীয় মাঝি, দোকানি, হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের মুখে হাসির ঝিলিক। পর্যটকদের আগমনে জমে উঠেছে তাদের ব্যবসা।

পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে মিঠামইন-নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকা। ২০২০ সালে এই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর থেকে এটি ধীরে ধীরে দর্শনার্থীদের প্রধান গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসে। ছাতিরচর এলাকায় ভাঙন রোধে রোপণ করা হয়েছে হাজার হাজার করচগাছ, যা হাওরের পরিবেশকে আরও শোভাময় করে তুলেছে।

স্থানীয় মাঝি সুমন মিয়া বলেন, বর্ষা এলে আমাদের রোজগার বাড়ে। তাই সারাবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি। পর্যটকদের ঘুরিয়ে বেড়ানো আমাদের মূল জীবিকা। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হাওরের পানি বাড়ছে, ফলে নৌভ্রমণের চাহিদাও বাড়ছে, যোগ করেন তিনি।

ঈদের ছুটিতে ১০টি বাইকে ২০ বন্ধুর টিম এসেছেন হাওর দেখতে। নরসিংদী থেকে আসা পর্যটক দলটির একজন হাসানুল শুভ। তিনি বলেন, নতুন পানি এসেছে হাওরে। ট্রলারে ঘুরেছি। খুব ভালো লেগেছে।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষাকালে এই অঞ্চলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ পর্যটনকেন্দ্রিক আয়-রোজগারে যুক্ত থাকেন। ফলে পর্যটকদের উপস্থিতি শুধু বিনোদন নয় বরং অনেকের জীবিকার উৎসও বটে। হাওরের সৌন্দর্য রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সজাগ দৃষ্টি রাখছে বলেও জানান তারা।

মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবির জানান, ঈদের পর থেকেই হাওরে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় জিরো পয়েন্ট এলাকায় পোশাকধারী ও সিভিল পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া হাওরের পথে দুটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে যাতে দর্শনার্থীরা নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন।

হাওরের জলে যখন প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি পড়ে, তখন যেন মানুষ নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়—কিশোরগঞ্জের হাওর আজ শুধুই আর জলাভূমি নয়, এটি হয়ে উঠেছে স্বস্তির এক নৈসর্গিক ঠিকানা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ ওর ক শ রগঞ জ হ ওর র প ম ঠ মইন

এছাড়াও পড়ুন:

বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার

বান্দরবানের আলীকদমে পর্যটক ভ্রমণ পরিচালনাকারী পর্যটন সংস্থা ট্যুর এক্সপার্টের প্রধান বর্ষা ইসলাম ওরফে বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পর্যটকদের নিয়ে ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড় ভ্রমণ শেষে আলীকদমে ফিরে আসার পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আলীকদম থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে। এরপর পাহাড়ি ঢলে নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমানের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আজ শনিবার সকালে হাবিবুর রহমান স্মৃতি আক্তারের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় বেশ কয়েকজনকে আসামি করে আলীকদম থানায় মামলা করেন। মামলায় নিয়মকানুন অনুসরণ না করে ঝুঁকিপূর্ণ দুর্গম এলাকায় ভ্রমণ আয়োজনের অভিযোগ আনা হয়েছে বর্ষা ইসলামের বিরুদ্ধে।

গত বুধবার আলীকদমের দুর্গম ক্রিস্টং পাহাড় এলাকায় ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে একটি পাহাড়ি ঝরনায় তিনজন পর্যটক ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার জুবাইরুল ইসলাম ও শুক্রবার স্মৃতি আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। হাসান চৌধুরী নামে একজন পর্যটক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এর আগে গত ৮ জুন ট্যুর এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনায় দুই দলে ভাগ হয়ে ৩৩ জন পর্যটক আলীকদমের দুর্গম ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পর্যটকদের প্রথম দলটি ফিরে আসার পথে স্মৃতিসহ তিনজন শামুক তৈরির ঝরনায় পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমান মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, বর্ষা ইসলামের পরিচালিত ট্যুর এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড়ে ভ্রমণের ওপর আকর্ষণীয় পোস্ট করেন। ওই পোস্ট দেখে তাঁর মেয়ে স্মৃতি আক্তার আলীকদম যান। বৈরী আবহাওয়ায় ঝুঁকির বিষয়টি না জানিয়ে বিপজ্জনক জায়গায় পর্যটকদের নিয়ে গিয়ে বর্ষা ইসলাম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তা ছাড়া স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড পর্যাপ্ত সংখ্যায় সঙ্গে নিয়ে যাননি তাঁরা। স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড ছাড়া পাহাড়ি পরিবেশে তাঁর অনভিজ্ঞ মেয়ে স্মৃতি আক্তারসহ পর্যটকেরা আলীকদমের দিকে ফিরছিলেন। শামুকঝিরি ঝরনা এলাকায় এসে প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে স্মৃতি আক্তার ও সঙ্গে থাকা হাসান চৌধুরী এবং জুবাইরুল ইসলাম ভেসে যান। ট্যুর এক্সপার্টের প্রধান বর্ষা ইসলাম ও তাঁর সহযোগীদের অবহেলা, দায়িত্বহীন ও অদক্ষতায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন জানিয়েছেন, কোনো পর্যটক উপজেলা সদরের বাইরে ভ্রমণে গেলে উপজেলা পর্যটন সেবাকেন্দ্রে নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। প্রতি ১০ জনের জন্য একজন করে নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ট্যুর এক্সপার্টের বর্ষা ইসলাম ১২ জন পর্যটকের নাম ও ঠিকানা দিয়ে ৩৩ পর্যটকের জন্য মাত্র একজন ট্যুরিস্ট গাইড নিয়েছিলেন সঙ্গে। ১২ জন ট্যুরিস্ট একজন গাইড নিয়ে আরও দূরে ভ্রমণে গেছেন। ২২ জন পর্যটককে কোনো গাইড ছাড়া ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ জন্য দুর্ঘটনায় পড়ে তিন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন। এখনো একজনের কোনো হদিস মিলছে না।

আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা জহির উদ্দিন জানিয়েছেন, বর্ষা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপের অন্য ব্যক্তিদেরও অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার বর্ষা ইসলামকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, বিপাকে ৪০ হাজার পর্যটক
  • সীতাকুণ্ডে ঝরনায় ২ বছরে ৮ পর্যটকের মৃত্যু, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ
  • বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা
  • বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার