এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা দিচ্ছেন না সোয়া ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী
Published: 17th, June 2025 GMT
আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী গতবারের চেয়ে ৮১ হাজার ৮৮২ জন কমেছে। তিন বছরের মধ্যে এবারই পরীক্ষার্থী সবচেয়ে কম। আরও আশঙ্কার বিষয়, দুই বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির পর রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করেও সোয়া চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন না। শতাংশের হিসাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এই হার বেশি। আর সংখ্যায় তা এইচএসসিতে বেশি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা না দেওয়াটা উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, এমনিতেই দেখা যায় পর্যায়ক্রমে ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়ে। এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে এই ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য এবং শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে যাওয়া। এসএসসি পাসের পর অনেক শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এটাও ঝরে পড়ার আরেকটি বড় কারণ। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের ওপর একটি জরিপ করতে গিয়ে তাঁরা এ রকম তথ্য পেয়েছেন। এখন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও প্রকৃত কারণ জানার জন্য এ রকম একটি জরিপ করা হবে।
২৬ জুন শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি। গতবারের তুলনায় এ বছর এইচএসসিতে প্রায় ৭৩ হাজার পরীক্ষার্থী কমেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন আলিমে পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় দুই হাজার। আলিমে এবার পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজারের বেশি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। কমেছে সাত হাজারের মতো।
এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশোনা নানা কারণে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে, যেটা অনেক অভিভাবকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী কর্মে প্রবেশ করছে, অনেকেই কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যাচ্ছে। বিয়েও আরেকটি বড় কারণ। এস এম হাফিজুর রহমান, অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সোয়া ৪ লাখের বেশি পরীক্ষা দিচ্ছেন নাআন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসা-কারিগরিসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছিলেন ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৯ জন। তাঁদের মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন ১০ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। অবশ্য নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অনিয়মিত শিক্ষার্থী মিলিয়ে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী আরও বেশি।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রমতে, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আওতায় একাদশ শ্রেণিতে (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬৭ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮
লাখ ৭৬ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন। নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ লাখ ২০ হাজারের মতো (প্রায় ২৭
শতাংশ) পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেননি। এ রকম শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে, ৭৫ হাজারের বেশি। এই বোর্ডে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর নিবন্ধন করেছিলেন সোয়া তিন লাখের মতো শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন আড়াই লাখের মতো শিক্ষার্থী।
একই শিক্ষাবর্ষে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় আলিম প্রথম বর্ষে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৫৯ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৭৯ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন। নিবন্ধন করা প্রায় ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেননি।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় একাদশ শ্রেণিতে (ভোকেশনালে) প্রায় ১ লাখ ৫৯ হাজার শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৯৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন। নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে সাড়ে ৬৩ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেননি। ফরম পূরণ না করা শিক্ষার্থীর হার প্রায় ৪০ শতাংশ।
বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এসএসসি পাসের পরও এইচএসসি পরীক্ষা না দেওয়ার বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ধারণা করা যায়, দারিদ্র্য একটি অন্যতম কারণ। এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশোনা নানা কারণে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে, যেটা অনেক অভিভাবকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী কর্মে প্রবেশ করছে, অনেকেই কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যাচ্ছে। বিয়েও আরেকটি বড় কারণ।
এগুলোর প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, এসএসসি পাসের পর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মাঝপথে হোঁচট খেল, এটা জাতির জন্য বিরাট ক্ষতি। এমনটা যেন না হয়, সে জন্য সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ট পর ক ষ র থ কর ছ ল ন পর ক ষ য় পর য য়
এছাড়াও পড়ুন:
এইচএসসি ডিপ্লোমা–ইন–কমার্স পরীক্ষার সময়সূচি, কোন বিষয় কবে
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২৫ সালের এইচএসসি (ডিপ্লোমা–ইন–কমার্স) শিক্ষাক্রমের দ্বাদশ ও একাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা নিচের সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এই সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা শুরু হবে ২৬ জুন। বিশেষ প্রয়োজনে বোর্ড কর্তৃপক্ষ সময়সূচি পরিবর্তন করতে পারবে।
পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার কক্ষে নিজ আসন গ্রহণ করতে হবে।
*কোন পরীক্ষা কবে হবেলিখিত পরীক্ষা: দ্বাদশ শ্রেণি
# ২৬ জুন: বাংলা–২ (সময়: সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা)
# ২৯ জুন: ইংরেজি–২ (সময়: সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা)
# ১ জুলাই: কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন–২ (সময়: সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা)
# ৩ জুলাই: বিজনেস ইংলিশ অ্যান্ড কমিউনিকেশন (সময়: সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা)
# ৭ জুলাই: অর্থনীতি (সময়: সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা)
# ১০ জুলাই: ব্যবসায় সংগঠন (সময়: সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা)
# ১৩ জুলাই: উচ্চতর হিসাববিজ্ঞান (সময়: সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা)
# ১৫ জুলাই: শর্টহ্যান্ড–২ (ইংরেজি) (সময়: সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা)
লিখিত পরীক্ষা: একাদশ শ্রেণি
# ২৬ জুন: বাংলা–১ (সময়: বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা)
# ২৯ জুন: ইংরেজি–১ (সময়: বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা)
# ১ জুলাই: কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন–১ (সময়: বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা)
# ৩ জুলাই: হিসাববিজ্ঞান (সময়: বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা)
# ৭ জুলাই: ব্যাংকিং ও বীমা (সময়: বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা)
# ১০ জুলাই: অফিস ম্যানেজমেন্ট ও অটোমেশন (সময়: বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা)
# ১৩ জুলাই: বাণিজ্যিক ভূগোল (সময়: বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা)
# ১৫ জুলাই: শর্টহ্যান্ড–১ (বাংলা) (সময়: বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা)
# ১৭ জুলাই: প্রোডাকশন প্লানিং কন্ট্রোল অ্যান্ড কস্টিং (সময়: বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা)
ব্যবহারিক পরীক্ষা (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা)
১. ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ: ১৮ থেকে ২৪ জুলাই।
২. অনলাইনে বোর্ডে নম্বর প্রেরণ: ২৬ থেকে ২৯ জুলাই।
বাস্তব প্রশিক্ষণ (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা)
১. বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ। সময়: ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের চার সপ্তাহের জন্য শিল্পকারখানায় বাস্তব প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে হবে।
২. অনলাইনে বোর্ডে নম্বর পাঠানোর সময়: ২৭ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
* এইচএসসি ডিপ্লোমা–ইন–কমার্স পরীক্ষার সময়সূচি দেখতে ওয়েবসাইট: