কুষ্টিয়া সদর উপজেলার এক গ্রামে বৃদ্ধের বিরুদ্ধে (৫৮) পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার বিচারে সালিশ বৈঠক করেন গ্রামের মাতবরেরা। সালিশে ওই বৃদ্ধকে চড়-থাপ্পড় মেরে মীমাংসা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার। 

তবে মাতবরেরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও পরিবারটি তা করেনি।

ভুক্তভোগী শিশু বর্তমানে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সে বেডে খেলা করছে। তার পাশেই বসে আছেন মা-বাবা। তারা শিশুটির এ অবস্থায় ভেঙে পড়েছেন।

ভুক্তভোগীর মা জানান, গত ১১ জুন শিশুটিকে ধর্ষণ করে একই এলাকার বিশা মন্ডল নামের বৃদ্ধ। ঘটনার দিন সকালে ওই শিশুর নানিকে এগিয়ে দিতে বাড়ির বাইরে যান তার মা। এর কিছুক্ষণ পর শিশুটি বিশার বাড়ি থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আসতে দেখে সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, বিশা তার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে। বিষয়টি গ্রামের মুরুব্বিদের জানালে তারা পরদিন রাতে বাড়িতে সালিশ বসান। সালিশে বিশাকে চর-থাপ্পড় দিয়ে মাতবররা বলেন, সালিশ শেষ। এর পরদিন শুক্রবার ভুক্তভোগী শিশু পেট ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা।

শিশুটির মা বলেন, মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে থানায় যাইনি। মেম্বার ও সমাজ প্রধান বলেছেন, আগে চিকিৎসা করিয়ে আনো, তারপর মামলা করতে পারবা। এখন থানায় মামলা করবো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসা করতে বসা সালিশে সমাজপ্রধান রহিম মন্ডল ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মতিউর রহমান লিটন উপস্থিত ছিলেন। সালিশে অভিযুক্ত বৃদ্ধকে চর-থাপ্পড় মেরে মীমাংসা করা হয়ে। সেখানে এলাকার লোকজন ছিলেন।

সালিশে উপস্থিত মতিউর রহমান বলেন, ঘটনাটি জানার পর ভুক্তভোগী পরিবারকে মামলা করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা থানায় যায়নি। আর সালিশে চর-থাপ্পড় মেরে মীমাংসা করেছিল অভিযুক্ত বৃদ্ধর ভাই-ভাতিজারা। আমি শুধু উপস্থিত ছিলাম। এভাবে বিচার করা ঠিক হয়নি।

ধর্ষণের মতো ঘটনার বিচার সালিশ বৈঠকে করা যায় কি-না জানতে চাইলে রহিম মন্ডল বলেন, আমি ভুক্তভোগীর পরিবারকে মামলা করতে বলেছিলাম। কিন্তু তা করেনি।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হোসেন ইমাম বলেন, শিশুটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তার চিকিৎসা চলছে। এখন ভালো আছে। তবে মানসিকভাবে একটু দুর্বল।

কুষ্টিয়ার ইবি থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, মামলা করার জন্য শিশুটির পরিবারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত বৃদ্ধকে আটকে কাজ করছে পুলিশ। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ