সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ: এক ব্যক্তির ক্ষমতার মেরুদণ্ড
Published: 18th, June 2025 GMT
বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হচ্ছে ৭০ অনুচ্ছেদ। বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়নের কাল থেকেই এই অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা চলে আসছে। ‘লোভে পড়ে ব্যক্তিস্বার্থে’ সংসদ সদস্যরা তাঁদের ভোট বিক্রি করতে পারেন—এমন আশঙ্কা এবং ‘গণতন্ত্রের সঙ্গে স্থিতিশীল সরকার দরকার’—এমন বাসনা দিয়ে এই অনুচ্ছেদের পক্ষে অজুহাত দেওয়া হয়।
কিন্তু গত ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দাবি করতে পারি, স্থিতিশীল সরকারের বাসনা থেকে যে অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছিল, তা স্থিতিশীল সরকার গঠনে ভূমিকা রাখা দূর কি বাত, উল্টো গণতন্ত্রকে একেবারে কাঠামগত ধ্বংস করতেই অধিক ভূমিকা পালন করেছে।
সংসদের ভেতর গণতান্ত্রিক চর্চাকে গলা টিপে হত্যা করে আদৌ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম সম্ভব কি না, যে শঙ্কা বাহাত্তরেই দেখা দিয়েছিল, আমরা গত ৫০ বছরে অজস্র জীবনের বিনিময়ে সেই সত্য উপলব্ধি করার সক্ষমতা অর্জনের কথা ছিল। কিন্তু এখনো ৭০ অনুচ্ছেদের পক্ষে অনেকেই অবস্থান নিচ্ছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য। তাঁরা এখনো বুঝতে পারছেন না, যে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতাকাঠামো শেখ হাসিনার মতো ভয়াবহ স্বৈরাচারের জন্ম দিয়েছে, এর মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে ৭০ অনুচ্ছেদ।
তৈরির প্রেক্ষাপটমুক্তিযুদ্ধের পরপর স্বাধীন বাংলাদেশে গণপরিষদ শুরুই হয়েছিল ‘সদস্যপদ খারিজ আদেশ-১৯৭২’ জারির মাধ্যমে। সেই আদেশে বলা হয়, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হয়ে এবং ওই দলের সদস্যপদ লাভ করে কোনো ব্যক্তি গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা ওই দল থেকে বহিষ্কৃত হন, তবে তাঁর মেয়াদকালের অসমাপ্ত সময়ের জন্য তিনি আর পরিষদ সদস্যপদে থাকবেন না।’
আবার সেই আদেশের মাধ্যমে সংগঠিত কর্মের রক্ষাকবচ হিসেবে যুক্ত করা হয়, ‘এই আদেশের অধীন প্রণীত কোনো আদেশ বা গৃহীত কোনো ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো আদালত কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবেন না।’
বিষয়টি পরে ৭০ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল ১৯৭২ সালেই। একদিকে শেখ মুজিব এর পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছিলেন, ‘অনেকেই লোভে পড়ে ব্যক্তিস্বার্থে এদিক-ওদিক করে। সুষ্ঠুভাবে দেশ চালাতে গেলে গণতন্ত্রের সঙ্গে স্থিতিশীল সরকার দরকার। অন্যদিকে খোদ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের অনেকেই বলেছিলেন, ‘এ ব্যবস্থা সর্বপ্রকার গণতান্ত্রিক নীতির পরিপন্থী।’
অর্থাৎ সংসদ সদস্যরা যে রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে নির্বাচিত হয়েছেন, সেই দলের প্রস্তাবিত যেকোনো নীতি বা সিদ্ধান্ত অকপটে মেনে নিতে বাধ্য করে ৭০ অনুচ্ছেদ। কেউ যদি এর ব্যত্যয় ঘটান, তাহলে এর পরিণাম খুব কঠোর, তাঁদের আসনই শূন্য হয়ে যায়।
এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে যে সংবিধানের ক্ষমতাকাঠামো এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে এবং প্রধানমন্ত্রী যে অসীম ক্ষমতা পেয়ে যান, সেটা নিয়ে ১৯৭২ সাল থেকেই তীব্র সমালোচনা চলে আসছে।
দীর্ঘ উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের পথ ধরে রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান যাঁরা তৈরি করেছেন, সেই গণপরিষদের সদস্যদের যে রকম মতামত প্রকাশের ‘স্বাধীনতা’ থাকার কথা ছিল, শুরুতেই তা দেওয়া হয়নি।
পুরো গণপরিষদের কর্তৃত্ব আওয়ামী লীগের আয়ত্তে থাকার পরও গণপরিষদের (নিজ দলের পরিষদ মেম্বার) কাছ থেকে তার স্বাভাবিক মতামত দেওয়ার অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধারা শাসনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করে সংসদীয় গণতন্ত্রকে অকার্যকর করা এবং অনুশীলনের শুরু হয় একদম প্রথম দিন থেকেই।
ব্যবহারের ফলাফলসংসদ সদস্যরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে যান প্রধানত আইন তৈরির উদ্দেশ্যে। নির্বাহী বিভাগ কোন আইনের আওতায় দেশ চালাবে, সেটা ঠিক করে দেওয়া, অর্থাৎ আইন তৈরি করাই তাঁদের প্রধান কাজ। পাশাপাশি সরকার চালাতে যে টাকাপয়সা দরকার, তা জনগণের কাছ থেকে কতটুকু ও কীভাবে আদায় করা হবে এবং কোন কোন খাতে সেগুলো ব্যয় করা হবে, অর্থাৎ বাজেট প্রণয়ন করাও সংসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেই সঙ্গে নির্বাহী বিভাগ আইন মেনে কাজ করছে কি না, মন্ত্রণালয়গুলো বাজেট ঠিকভাবে খরচ করছে কি না, কোথাও দুর্নীতি–লুটপাট–অপচয় হচ্ছে কি না, তার ওপর নজরদারি করবে এবং সরকারের কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বিপথে গেলে জবাবদিহি করবে—এগুলোও সংসদের কাজ।
কিন্তু বাংলাদেশের সাংবিধানিক বন্দোবস্তে একই সঙ্গে দলের প্রধান, সরকারপ্রধান ও সংসদনেতা হতে বাধা নেই। তাই ৭০ অনুচ্ছেদ থাকার ফলে দলের কোনো সিদ্ধান্তের (আদতে দলের প্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর) বিরোধিতা করার সুযোগ কোনো সংসদ সদস্যের নেই। তাই সংসদে কী আইন বানানো হবে, বাজেট কেমন হবে, বাজেটের খরচের জবাবদিহি করা যাবে কি না, এমনকি লুটপাট–অপচয় করলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে কি না—সবই নির্ভর করে একজনের, মানে প্রধানমন্ত্রীর, ওপর। জনগণের সরাসরি ভোটে ‘নির্বাচিত’ বাকি সংসদ সদস্যদের শুধু আজ্ঞাবহ হিসেবে ‘হ্যাঁ-না’–এর বাইরে কিছু বলার বা করার সুযোগ থাকে না। এমনকি সংসদ সদস্যদের তাঁদের নির্বাচনী এলাকার স্বার্থের প্রতিনিধিত্বও করতে বাধা প্রদান করে এই অনুচ্ছেদ। অতএব ৭০ অনুচ্ছেদসহ ওই পার্লামেন্টকে ‘রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট’ বলাই যায়!
সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাগত ৫৪ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাহাত্তরের সাংবিধানিক বন্দোবস্তে যে দল নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতবে, সেই দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান হবেন। আবার তিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সংসদনেতাও হবেন।
৭০ অনুচ্ছেদের বলে তিনি একক সিদ্ধান্তে আইন বানাবেন, বাজেট তৈরি করবেন, বাজেট ইচ্ছেমতো খরচ করবেন, রাষ্ট্রপতি নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা পাবেন, রাষ্ট্রপতির হাত দিয়ে বিচারক ও বিচারপতি এবং সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা পাবেন।
আবার তাঁর কাছে যদি দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য থাকে, তাহলে তিনি সংবিধান পরিবর্তনেরও ক্ষমতার অধিকারী হবেন। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যাঁরা সংসদে যাবেন, ওই সংসদ পরিচালনা করার জন্য দিনে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে যে জনগণ; তাদের প্রতিনিধিদের আইন তৈরি, বাজেট প্রণয়ন, সরকারের ওপর নজরদারি, সরকারের জবাবদিহিসহ সব ক্ষেত্রে স্বাধীন মতামত দিতে পারার সুযোগ থাকতে হবে।
আবার এটাও ঠিক, স্বাধীন মতামতের সুযোগ নিয়ে যেন হরহামেশা সরকার পরিচালনায় অচলায়তন এবং অনাস্থা ভোটের নামে হর্স ট্রেডিং না হয়। পাশাপাশি হর্স ট্রেডিংয়ের দোহাই দিয়ে সংসদে একনায়কতন্ত্র বহাল রাখার চেষ্টা করাও হবে সময়ের বহু বহু পেছনে হাঁটা। তাই বর্তমান সময়ের উপযোগী মধ্যবর্তী সমাধান খুঁজতে হবে আমাদের।
সম্ভাব্য সমাধান৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করে সংসদ কার্যকর ও গণতান্ত্রিক করার সমাধান দুনিয়াতে রয়েছে। এর একটা সমাধান বা সংস্কার প্রস্তাবনা সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাবও করেছে। তারা বলেছে, ‘অর্থবিল ব্যতীত নিম্নকক্ষের সদস্যদের তাঁদের মনোনয়নকারী দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।’
অর্থাৎ অর্থবিল বাদে সব ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারবেন; এমনকি নিজ দলের বিপক্ষেও। যেহেতু নিজ দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ভোট দিলে দলের ভেতর চাপে পড়ার বা কোণঠাসা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই ভোটদানের পদ্ধতি প্রকাশ্যে মৌখিক ‘হ্যাঁ-না’–এর পরিবর্তে গোপন ব্যালট বা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে করা যেতে পারে।
শেষ কথাবাংলাদেশের ১৯৭২ সালের যে সংবিধান, তার ক্ষমতাকাঠামোর বাকি সবকিছু ঠিক রেখে শুধু ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করলেই রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হবে না। রাষ্ট্রের সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা একটা সামগ্রিক কাজ। বিচ্ছিন্ন দু–একটা কাজ করে কোনোভাবেই রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করা যাবে না। তবে যেসব জায়গায় অবশ্যই সংস্কার করতে হবে, তার মধ্যে প্রধান প্রধান জায়গার অন্যতম ৭০ অনুচ্ছেদ। কারণ, এই অনুচ্ছেদ হচ্ছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতার মেরুদণ্ড!
ফরিদুল হক যুগ্ম সদস্যসচিব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ত শ ল সরক র ন র ব চ ত হয় গণত ন ত র ক অন চ ছ দ র গণতন ত র দল র প র র ক ষমত ব যবস থ সরক র র প রণয়ন জনগণ র অর থ ৎ ক ত কর হয় ছ ল কর র স মত মত র সদস
এছাড়াও পড়ুন:
‘জুলাই ঘোষণাপত্রকে’ সংবিধানের মূল নীতিতে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপের নিন্দা রিজভীর
সংবিধানের মূল নীতি হিসেবে জুলাই ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বানকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি ইতিমধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের অনেক বিষয় মেনে নিয়েছে। কিন্তু কেন এটিকে সংবিধানের মৌলিক নীতির অংশ করা হবে?’
আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জায়নামাজ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সংস্কার সারা দেশে এবং সব সময় অব্যাহত থাকবে। সংস্কার কোনো পর্বতমালার মতো স্থির কিছু নয়। এটি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, রাষ্ট্র বা জনগণের স্বার্থে যখন প্রয়োজন হয়, তখন সংস্কার করা উচিত এবং উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা উচিত।
রিজভী বলেন, ‘এটাই একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সংস্কার আগে করতে হবে এবং এটি (জুলাই ঘোষণাপত্র) সংবিধানের মৌলিক নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, এই দাবি বিভ্রান্তিকর। এটি মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। কেন আপনারা এভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন?’
বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার পরিবর্তে জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দিকে মনোনিবেশ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্রের দরজা বন্ধ করে জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের এখন সেই বন্ধ দরজা আবার খুলতে হবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন করে জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’
বিএনপি কখনো সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলেনি এবং বাস্তবে সর্বদা এটিকে সমর্থন করেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘আপনি সংস্কারের নামে যে বিষয়গুলোর কথা বলছেন, তার অনেকগুলো ইতিমধ্যেই বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার রূপরেখায় প্রতিফলিত হয়েছে।’
রিজভী বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে একটি বৃহত্তর আদর্শের জন্য লড়াই করে আসছে—ন্যায়বিচার, সাম্য, আইনের শাসন এবং প্রকৃত গণতন্ত্র। ‘এই লড়াই রাষ্ট্রের ওপর জনগণের মালিকানা পুনরুদ্ধারের জন্য। যখন সেই মালিকানা অস্বীকার করা হয়, তখন এটি ফ্যাসিবাদের পথ খুলে দেয়।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণের সরকারকে প্রতিটি পদক্ষেপে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সেই জবাবদিহি এখন নেই। আমরা বিশ্বাস করি যে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সমর্থন এবং সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে গঠিত হয়েছে— আওয়ামী লীগ ও তার কয়েকটি মিত্র ছাড়া।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা সবাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করে চলেছি। কিন্তু এটাও সত্য যে আমরা যদি দুর্ভিক্ষের লক্ষণ দেখতে এবং শুনতে শুরু করি, তাহলে জনগণ আমাদেরও ছাড় দেবে না।’
অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে মানুষ বেকার হয়ে পড়ছে। মানুষ যদি খাবার কিনে খেতে না পারে, তাহলে এটি দুর্ভিক্ষের স্পষ্ট লক্ষণ। যদি এ ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না—তখন পতিত ফ্যাসিস্টরা আনন্দে হাততালি দেবে।
রিজভী বলেন, সরকার চাইলে আওয়ামী লীগের যেসব সহযোগী দেশ ছেড়ে বিপুল অর্থ পাচার করে পালিয়ে গেছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে এবং কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া বন্ধ করতে পারে।
‘অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থার কারণে কারখানা বন্ধ করা উচিত নয়। এটি কেবল একটি বক্তব্যই নয়, মানুষ এখন গুরুত্বসহকারে ভাবছে যে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে দেশ দুর্ভিক্ষে পতিত হয় কি না,’ সতর্ক করেন রিজভী।