ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মামলার কারণে আত্মগোপনে যান গাংনীর রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন সেপু। এর পর প্রভাব খাটিয়ে অন্য ইউপি সদস্যদের চাপে ফেলে প্যানেল চেয়ারম্যান বনে যান ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সারগিদুল ইসলাম। শুরু হয় তাঁর দাপট। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা প্রকল্পের বরাদ্দ চাল নয়ছয়সহ উঠতে থাকে নানা অভিযোগ।

সম্প্রতি সারগিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে– ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি চাল উপহারের তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম ঢুকিয়ে দেওয়া এবং ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) প্রোগ্রামের আওতায় নারীদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ। এমনকি মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড ও কৃষি প্রণোদনা বিতরণে অনিয়মের বিষয়েও নানা জল্পনা আছে।

ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার দরিদ্র অসচ্ছল ব্যক্তিদের মাঝে ঈদ উপহার দেওয়ার জন্য ১০ কেজি করে তিন হাজার ২০০ জনের জন্য চাল বরাদ্দ দেয়। বিতরণ শেষে প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে চাল পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা জমা দেন। ওই তালিকার ২৯৭১ নম্বরে আছে গোপালনগর গ্রামের মৃত মোফাজ্জেল হকের নাম।

মোফাজ্জেল হক ২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন ছেলে মিনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাবার নামে চাল বরাদ্দ হয়েছে কিনা, জানেন না। তবে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একজনের মাধ্যমে ১০ কেজি চাল পেয়েছেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভিডব্লিউবি প্রকল্পের আওতায় অসচ্ছল নারীরা প্রতি পাঁচ মাস পরপর মাসে ৩০ কেজি করে চাল পান। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের বরাদ্দ চাল রায়পুরের নারীরা পেয়েছে ৫ জুন। তাদের কেউ তিন মাসের, কেউ চার মাসের চাল পেয়েছেন। বাকি চাল প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।

চাঁদপুর গ্রামের মো.

আবুছুদ্দীনের স্ত্রী আছিয়া খাতুনের নামে ভিডব্লিউবির একটি কার্ড আছে। পাঁচ মাস পরপরই মাসে ৩০ কেজি করে চাল পান তারা। আবুছুদ্দীনের ভাষ্য, জানুয়ারি-মে মাসের চাল জুনের শুরুতে পেয়েছেন। এ চাল একবারে বরাদ্দ হলেও পেয়েছেন তিন মাসের চাল। একই রকম ভাষ্য, ওই গ্রামের আব্দুল রহিমের। তাঁর পুত্রবধূ হেনা খাতুন ও শিমুলতলা গ্রামের রেক্সোনা খাতুনও তিন মাসের চাল পেয়েছেন।

ভুক্তভোগী অন্যরা নাম প্রকাশে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, কোথাও অভিযোগ দিলে তাদের কার্ড বাতিল হবে। নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে। 

কয়েকজন ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সারগিদুল ইসলাম মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের জিম্মি করে ফেলেন। পরে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড ও কৃষি প্রণোদনা বিতরণে অনিয়ম শুরু করেন। খাজনা আদায়ের টাকা ব্যাংকে না রেখে ইচ্ছেমতো খরচ করছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যদি তদন্ত করলে সব অভিযোগের সত্যতা মিলবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম বলেন, ‘লেখেন, সমস্যা নেই। জেল-ফাঁসি যা হয় তাই হবে। কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে। আমি সচ্ছতার সঙ্গে পরিষদ চালানোর চেষ্টা করছি।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মিশ্রণে দায়িত্ব পালনে এসএসএফের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে বরং জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘প্রধান উপদেষ্টার দরবার’ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যদের সকল রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসএসএফ-এর ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ করার জন্য ধন্যবাদ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও এসএসএফ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় একটি ক্ষুদ্র বাহিনী, তবে এর কাজের গুরুত্ব এবং সংবেদনশীলতা অনেক বেশি। এই বাহিনী আমার নেতৃত্বে এবং তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

তিনি বলেন, এসএসএফ একটি প্রশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল বাহিনী, যারা আমার ও রাষ্ট্রপতির সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বিগত ১০ মাসে এসএসএফ দেশে বিদেশে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছে। আমি এসএসএফ-এর সার্বিক পেশাদারিত্ব এবং আন্তরিকতা নিয়ে সন্তুষ্ট। এজন্য আমি সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসএসএফ বঙ্গভবনসহ আমার বাসস্থান, কার্যালয় এবং সব ধরনের গমনাগমনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এছাড়াও ঢাকার অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি কক্সবাজার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসএসএফ অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সফলভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, দেশের বাইরেও আমার রাষ্ট্রীয় সফরগুলোতে এসএসএফ বিভিন্ন দূতাবাস এবং সংশ্লিষ্ট দেশের প্রটোকল ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাজ করে সফরগুলো সাফল্যমণ্ডিত করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশে আসা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি ও জাতিসংঘের মহাসচিবের রাষ্ট্রীয় সফরের সামগ্রিক নিরাপত্তা এই বাহিনী অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে।

বর্তমান বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্য আদান-প্রদান খুব সহজ হওয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকির ধরন ও প্রকৃতি দ্রুত পরিবর্তনশীল হওয়ার কারণে শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এসএসএফ সুষ্ঠুভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। এসএসএফ নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা হুমকি পর্যালোচনা করবে এবং সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। সম্প্রতি এসএসএফ যমুনার সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করেছে। এসএসএফ একইভাবে এই কার্যালয়েরও সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করবে। এসএসএফ একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে উন্নত প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি এবং উন্নত মনোবলের সন্নিবেশে দিন দিন আরো উন্নতি সাধন করবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুস সামাদ চৌধুরী বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তিন বাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘পথের ইশকুলের’ প্রতিষ্ঠাতা সাকিরের জন্মদিন উপলক্ষে স্মরণ সভা
  • জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মিশ্রণে দায়িত্ব পালনে এসএসএফের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
  • নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র সংস্কারে চার সচিবকে ইসির নির্দেশ