চাল বরাদ্দের তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম
Published: 19th, June 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মামলার কারণে আত্মগোপনে যান গাংনীর রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন সেপু। এর পর প্রভাব খাটিয়ে অন্য ইউপি সদস্যদের চাপে ফেলে প্যানেল চেয়ারম্যান বনে যান ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সারগিদুল ইসলাম। শুরু হয় তাঁর দাপট। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা প্রকল্পের বরাদ্দ চাল নয়ছয়সহ উঠতে থাকে নানা অভিযোগ।
সম্প্রতি সারগিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে– ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি চাল উপহারের তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম ঢুকিয়ে দেওয়া এবং ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) প্রোগ্রামের আওতায় নারীদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ। এমনকি মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড ও কৃষি প্রণোদনা বিতরণে অনিয়মের বিষয়েও নানা জল্পনা আছে।
ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার দরিদ্র অসচ্ছল ব্যক্তিদের মাঝে ঈদ উপহার দেওয়ার জন্য ১০ কেজি করে তিন হাজার ২০০ জনের জন্য চাল বরাদ্দ দেয়। বিতরণ শেষে প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে চাল পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা জমা দেন। ওই তালিকার ২৯৭১ নম্বরে আছে গোপালনগর গ্রামের মৃত মোফাজ্জেল হকের নাম।
মোফাজ্জেল হক ২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন ছেলে মিনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাবার নামে চাল বরাদ্দ হয়েছে কিনা, জানেন না। তবে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একজনের মাধ্যমে ১০ কেজি চাল পেয়েছেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভিডব্লিউবি প্রকল্পের আওতায় অসচ্ছল নারীরা প্রতি পাঁচ মাস পরপর মাসে ৩০ কেজি করে চাল পান। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের বরাদ্দ চাল রায়পুরের নারীরা পেয়েছে ৫ জুন। তাদের কেউ তিন মাসের, কেউ চার মাসের চাল পেয়েছেন। বাকি চাল প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।
চাঁদপুর গ্রামের মো.
ভুক্তভোগী অন্যরা নাম প্রকাশে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, কোথাও অভিযোগ দিলে তাদের কার্ড বাতিল হবে। নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে।
কয়েকজন ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সারগিদুল ইসলাম মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের জিম্মি করে ফেলেন। পরে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড ও কৃষি প্রণোদনা বিতরণে অনিয়ম শুরু করেন। খাজনা আদায়ের টাকা ব্যাংকে না রেখে ইচ্ছেমতো খরচ করছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যদি তদন্ত করলে সব অভিযোগের সত্যতা মিলবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম বলেন, ‘লেখেন, সমস্যা নেই। জেল-ফাঁসি যা হয় তাই হবে। কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে। আমি সচ্ছতার সঙ্গে পরিষদ চালানোর চেষ্টা করছি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর দ দ
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।