ইশরাকের ‘মেয়র আন্দোলনে’ ভুগছে সোয়া কোটি নাগরিক
Published: 19th, June 2025 GMT
নিজেকে মেয়র দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার সোয়া কোটি মানুষকে গাড্ডায় ফেলেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ৩৫ দিন ধরে সংস্থাটির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নাগরিক সেবা এক রকম শিকেয় উঠেছে। সমস্যা সমাধানে সরকারের তরফেও রা নেই। এ পটভূমিতে দক্ষিণ নগর ভবনের নাগরিক সেবায় হযবরল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নগর ভবনে অচলাবস্থার কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক নিধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে পুরোপুরি ভাটা পড়েছে। মশককর্মীদের ওষুধ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। সড়কবাতি সংযোজন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ডিএসসিসির বেশির ভাগ এলাকায় রাত হলেই নেমে আসে ঘুটঘুটে আঁধার। ওইসব এলাকার মানুষ পথ চলতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ভারী বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে কঙ্কালসার। সেগুলো মেরামত না করায় মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এদিকে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মনে করছেন, নাগরিক সেবা বিঘ্নিত করে ইশরাক হোসেন ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। ইশরাক পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, ফৌজদারি অপরাধ করলে সরকার আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? দু’জনই ফেসবুকে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে যাচ্ছেন।
গত সোমবার ইশরাক ডিএসসিসির কর্মচারী নিয়ে নগর ভবন মিলনায়তনে বৈঠক করেন। সেখানে ব্যানারে ইশরাকের পদবি লেখা হয় ‘মাননীয় মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’।
গতকাল বুধবার আরেকটি বৈঠক হয়। সেখানে ব্যানারে লেখা ছিল ‘নির্বাচিত মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’। বৈঠক শেষে তিনি কর্মী নিয়ে মশক নিধন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। নিজেও ফগার মেশিন নিয়ে কার্যক্রমে নামেন।
সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় ইশরাকের মেয়র পদে শপথ পড়ানোর প্রসঙ্গটি উঠে আসে। তখন সিদ্ধান্ত হয়, ইশরাকের আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিএনপি কোনো অবস্থান নেবে না। পাশাপাশি বিএনপি সরাসরি আন্দোলনে সম্পৃক্তও হবে না। এ অবস্থায় চাকরিবিধি অমান্য করে নগর ভবনের কিছু কর্মচারী ও ইশরাক সমর্থকরা নগর ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।
ভোগান্তিতে নগরবাসী
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ঢাকা দক্ষিণে এখন অন্তত সোয়া কোটি মানুষের বাস। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষ ডিএসসিসির প্রধান ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে যান ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ সেবাসহ ২৮ ধরনের সেবা পেতে। ৩৫ দিন ধরে বন্ধ এই সেবা কার্যক্রম।
আগে নাগরিকরা ভবনে গিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন। এখন হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় প্রায় বন্ধ। নতুন ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন, জন্মমৃত্যু, ওয়ারিশ সনদসহ সব কাজই বন্ধ। এ ছাড়া ডিএসসিসি পরিচালিত হাসপাতালের কার্যক্রম, নর্দমা-ফুটপাত মেরামত, বাজার, ব্যায়ামাগার, কমিউনিটি সেন্টার, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, রাস্তার গাড়ি পার্কিং, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা, গ্রন্থাগার, সংগীত এবং স্কুল, বাস টার্মিনাল, পাবলিক টয়লেট, পার্ক এবং খেলার মাঠবিষয়ক সেবার ক্ষেত্রেও বিঘ্ন ঘটছে। নতুন হোল্ডিং নম্বর ইস্যু, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ, হোল্ডিংয়ের নামজারি, কবরস্থান ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি সেন্টার বুকিং, বহুতল ভবনের অনাপত্তিপত্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের বাসিন্দা তাহেরা খাতুন বলেন, ‘এক মাস ধরে ওয়ারিশ সনদের জন্য ঘুরছি। প্রতিদিনই নগর ভবন বন্ধ থাকছে। এ নিয়ে আমাদের পরিবারে অনেক অশান্তি সহ্য করছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার ছোট শিশু গুরুতর অসুস্থ। পাসপোর্ট করে দেশের বাইরে নিতে হবে। এ জন্য জন্মসনদ লাগবে। ২৫ দিন ধরে জন্মসনদ নিতে না পারায় পাসপোর্টের আবেদনই করতে পারছি না। অথচ দিন দিন আমার মেয়ের অবস্থার অবনতি হচ্ছে।’
একাধিক প্রকৌশলী বলেন, নগর ভবন অবরুদ্ধ থাকায় চলমান রাস্তাঘাটের উন্নয়নকাজ তদারিক করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে ডিএসসিসির প্রশাসক মো.
আন্দোলনের চোটে কার্যালয় বদল
আন্দোলনের কারণে নগর ভবনে ঢুকতে না পারায় ৩৫ দিন ধরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বসছেন ক্রীড়া পরিষদ ভবনে। আর স্থানীয় সরকার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী সচিবালয়ে পুড়ে যাওয়া ৭ নম্বর ভবনের একটি কক্ষে বসে অফিস করছেন। আর সংস্থাটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনে বসেন। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বেও আছেন তিনি। আর ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান বঙ্গবাজার-সংলগ্ন সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের একটি কক্ষে বসে অফিস করেন। নগর ভবনের ওপরের তিনটি তলায় এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমও বন্ধ করে রেখেছেন ইশরাক সমর্থকরা।
ইশরাক-সজীব বাহাস
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘এই বিএনপি নেতা নগর ভবনের মিলনায়তন ও অফিস দখল করে নাগরিক সেবাদানে বাধা দিচ্ছেন। প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই ইশরাক হোসেনের। এটা একটি ক্রিমিনাল অফেন্স বা ফৌজদারি অপরাধ। উনি ওনার নেতাকর্মী নিয়ে নগর ভবনের মিলনায়তন, অফিস দখল করেছেন।’
বিপরীতে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমাকে মেয়র পদে শপথ না পড়িয়ে সরকার আইন ভঙ্গ করছে। সরকার ও তার উপদেষ্টা আদালতের আদেশকে অপব্যাখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। আমি ক্রিমিনাল অফেন্স করে থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার কথা। কিন্তু সরকার তা করছে না কেন।’ ইশরাকের এ প্রশ্নে সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘নাগরিক সেবা বিঘ্নিত করা বাড়ালে অবশ্যই আমাদের বাধ্য হয়ে কোনো কঠোর ব্যবস্থায় যেতে হতে পারে।’
কয়েকদিন ধরে নগর ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ইশরাকের সভায় অংশ নিচ্ছেন। গতকালও নগর ভবনে বৈঠক শেষে তিনি মশক নিধন কর্মসূচিতে অংশ নেন। এর আগে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন উপায়ে নগরবাসীর সেবায় বাধা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কাজ করতে নিষেধ করেছেন বলে শুনতে পেরেছি। আপনাদের মতো শিশু উপদেষ্টা যদি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়, সেই কথা বলাও আমাদের জন্য অবমাননাকর। আজকে যা কিছু হচ্ছে সবকিছুর জন্য বর্তমান সরকার দায়ী।’
শপথ না নিয়ে ‘মেয়র ঘোষণা’ বেআইনি
আইনানুযায়ী শপথ না নিয়ে ইশরাক হোসেন এভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ সমকালকে বলেন, আইনিভাবে তিনি মেয়র হতে পারেননি। কারণ আদালতের যে রায় ছিল, সেটার সময়সীমাও শেষ হয়ে গেছে। কারণ গত ২ জুনেই পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন নতুন করে ইশরাক হোসেনের আর মেয়রের শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন তারাও আইন লঙ্ঘন করছেন। তাঁর পদবি হিসেবে ‘মাননীয় মেয়র’ বা ‘নির্বাচিত মেয়র’ যা লেখা হচ্ছে সেটারও সুযোগ নেই। বুঝতে পারছি না, সরকার এখানে কী করছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যে নির্বাচনই ছিল অবৈধ, সেই নির্বাচনে উনি কীভাবে আবার মেয়র হতে চান। অবৈধ নির্বাচন হওয়ার কারণেই তো বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সব সিটি করপোরেশনের পর্ষদ বাতিল করে দিল। তারপরও আদালতের যে রায় ছিল, সেই মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তাহলে তো তাঁর মেয়র হওয়ার আর সুযোগ নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন স থ ন য় সরক র ইশর ক হ স ন নগর ভবন র ড এসস স র কর মকর ত ইশর ক র উপদ ষ ট ব যবস থ আম দ র ন ত কর পর চ ল শপথ ন অবস থ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
জাহিদ হাসানের কান্না পায় কখন
তানিম নূর পরিচালিত ‘উৎসব’ ছবিটি দিয়ে বিরতির পর বড় পর্দায় আসেন জাহিদ হাসান। নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই অভিনেতা ‘উৎসব’ ছবিতে জাহাঙ্গীর চরিত্রে অভিনয় করে মানুষকে মুগ্ধতায় ভাসাচ্ছেন। প্রেক্ষাগৃহফেরত দর্শকেরা জাহিদ হাসানের অভিনয়ের মুগ্ধতার কথা জানাচ্ছেনও। এদিকে প্রেক্ষাগৃহে যখন ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে, ঠিক তখন হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলেন এই অভিনয়শিল্পী। পবিত্র ঈদুল আজহার আগের দিন তিনি অসুস্থ হয়ে হাসাপাতালে ভর্তি হন। তবে এই সময়ে ছবির অন্য অভিনয়শিল্পীরা এক প্রেক্ষাগৃহ থেকে আরেক প্রেক্ষাগৃহে ছুটেছেন। গতকাল বুধবার ‘উৎসব’ ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে আসেন জাহিদ হাসান। সবার সঙ্গে ছবিটি দেখেন, একই সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নিজে কেঁদেছেন, উপস্থিত সবাইকে আবেগতাড়িত করেছেন।
জাহাঙ্গীর ও জেসমিনের দুই বয়সের চরিত্রে অভিনয় করছেন সৌম্য জ্যোতি, জাহিদ হাসান এবং সাদিয়া আয়মান ও আফসানা মিমি। সাদিয়া আয়মানের ফেসবুক থেকে