হবিগঞ্জে এনসিপির সমন্বয় কমিটিতে জুলাইয়ের হত্যা মামলার আসামি
Published: 24th, June 2025 GMT
হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমন্বয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় করা হত্যা মামলার এক আসামি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরাও আছেন কমিটিতে। এ নিয়ে আপত্তি উঠেছে দলের ভেতর থেকে।
এনসিপি সূত্র জানায়, ১৫ জুন হবিগঞ্জ জেলার আংশিক সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। নাহিদ উদ্দিন তারেককে প্রধান সমন্বয়কারী ও মো.
এনসিপি সূত্র জানায়, গণ অধিকার পরিষদ থেকে বহিষ্কৃত নেতা মাহবুবুল বারী চৌধুরীকে কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী কামাল আহমেদ, চুনারুঘাট সদর ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয়ী চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান চৌধুরী নোমান, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন ও মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চুনারুঘাটের মির দুলাল। তাঁদের মধ্যে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা একটি হত্যা মামলার আসামি। আর নাসির উদ্দিনের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা আছে।
তা ছাড়া নতুন কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন হারুন আল রশিদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমাকে না জানিয়ে কমিটিতে রাখা হয়েছে।’
হবিগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক পলাশ মাহমুদ বলেন, ‘এই কমিটি জুলাই চেতনার পরিপন্থী। এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের ভুল বুঝিয়ে এ কমিটি করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ২৩ সদস্যের এ কমিটির মধ্যে ১০ জনকে নিয়ে বিতর্ক আছে। তাঁদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় হত্যা মামলার আসামি আছেন; আছেন মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিও।
তবে এনসিপির হবিগঞ্জ জেলা কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক নাহিদ উদ্দিন তারেক বলেন, ‘যাঁদের নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তাঁরা হয়তো আগে বিভিন্ন দলে ছিলেন। কিন্তু তাঁরা দীর্ঘদিন কোনো দলে সক্রিয় ছিলেন না। তাঁরা এনসিপির জুলাই চেতনা মেনে দলে যুক্ত হয়েছেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় হত্যা মামলার আসামি, চাঁদাবাজি ও মাদক মামলার আসামি কীভাবে কমিটিতে স্থান পেলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার হত্যা মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলক। বাদী নিজেও জানেন না কারা আসামি। এ ছাড়া মাদক ও চাঁদাবাজির মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁরাও নানা সময় নানা পরিস্থিতির কারণে আসামি হয়েছেন। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তাঁরা যাচাই করে দেখেছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমন বয়ক এনস প র কম ট র য় কম ট ম হব ব কম ট ত সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
চা খেতে এক লাখ টাকা করে চাওয়া শুরু করেছে দুদক, অভিযোগ হাসনাতের
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতুর কাছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তা ঘুস চেয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদের এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?’
মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি করেন হাসনাত। ওই পোস্টের সঙ্গে তিনি তিনটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করেছেন।
‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা’ শিরোনামে পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘আপনার নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে এক লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তার ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয় আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকা-পয়সার অভাব থাকার কথা না। আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।’
তিনি লেখেন, ‘দুদকের সর্বনিম্ন রেট নাকি এক লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকতার আবার ফোন দিয়ে জানতে চান টাকা দেবে কি না? টাকা না দিলে নাকি খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টে মাহমুদা মিতু যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পরে। দুদক এখন তদন্ত করছে আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অথচ হাস্যকরভাবে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে তখনকার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এখনকার লোকজনের ওপর। এখানে বড় অঙ্কের টাকার লেনদেনের সমূহ সম্ভাবনা আছে। কিছু না করাদের কাছে থেকেই যদি এক লাখ করে নেয়, আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তাদের থেকে তাহলে কত করে নিয়েছে?’
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘দুদকের এসব কাজকারবার এই প্রথম না। শেখ হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসেনি। বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য এক লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে। মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুস দেন নাই। কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার- মাহমুদা মিতু কেন, যদি আমার নামেও এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিন। কাউকে ফোন করারও দরকার নেই, দুর্নীতি পেলেই সেগুলো প্রকাশ করে মামলা করে দেন। আইনের হাতে তুলে দেন। তা না করে নিরীহ লোকজনের ওপরে এই চাঁদাবাজি কেন করছেন? কেন চা খাওয়ার বিল চান, কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন? ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই।’
হাসনাত বলেন, ‘শেখ হাসিনার করে যাওয়া দুর্নীতির পথে যেন আর কেউ না যেতে পারে সেজন্য দুদককেও আমরা নতুন রূপে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও দুদক সেই পুরোনো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র আবারও বিষদাঁত নিয়ে কামড় বসাতে হাজির হয়েছে। এই বিষদাঁত ভাঙতে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হেরে যাবে, আমরাও হেরে যাবো। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদের এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?’