প্রথমবারের মতো সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহের সরাসরি ছবি তুলেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ
Published: 27th, June 2025 GMT
মহাকাশে পাঠানো এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপ হচ্ছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)। মহাজাগতিক রহস্য অনুসন্ধানের পাশাপাশি মহাবিশ্বের প্রান্তে কী আছে, তা নিয়ে আশ্চর্যজনক ছবি প্রকাশ করে চলেছে টেলিস্কোপটি। এবার প্রথমবারের মতো সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহ বা বহির্গ্রহের সরাসরি ছবি তুলেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। টিডব্লিউএবি নামের উজ্জ্বল বহির্গ্রহটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১১১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। পৃথিবীর চেয়ে ১০০ গুণ বড় বিশালাকার বহির্গ্রহটি তরুণ লাল বামন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সৌরজগতের বাইরে থাকা নতুন গ্রহটি এখন পর্যন্ত সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সবচেয়ে ছোট বহির্গ্রহ। এর আগে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে শত শত বহির্গ্রহ আবিষ্কার করা হয়েছে। সাধারণত বহির্গ্রহগুলোর প্রদক্ষিণ করা নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণ করে সেগুলোর উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়ে থাকে। এবারই প্রথম সরাসরি কোনো বহির্গ্রহের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে বহির্গ্রহটির তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
বহির্গ্রহ যেহেতু খুব বেশি নিজস্ব আলো নির্গত করে না তাই গ্রহগুলোর ছবি তোলা অত্যন্ত কঠিন। আর তাই বিজ্ঞানীরা সাধারণত ট্রানজিট পদ্ধতি ব্যবহার করে বহির্গ্রহের সন্ধান করেন। এ পদ্ধতিতে নক্ষত্র প্রদক্ষিণ করার সময় আলো কতটা কমে তা পরিমাপ করে বহির্গ্রহগুলোর অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে প্যারিস অবজারভেটরির বিজ্ঞানী অ্যান-মেরি ল্যাগ্রেঞ্জ জানিয়েছেন, সাধারণভাবে বহির্গ্রহ শনাক্ত করা সহজ নয়। এগুলোর ছবি তোলা আরও কঠিন। স্পষ্টভাবে বলা যায়, বহির্গ্রহটি লাখ লাখ বছর আগে তৈরি হয়েছে। গ্রহটির কক্ষপথের চারপাশে পদার্থের একটি পাতলা বলয় রয়েছে। একে ট্রোজান রিং বলে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ রহ র
এছাড়াও পড়ুন:
মরুর খেজুর চাষে সফলতা, বছরে আয় ৩০ লাখ
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সৌদি আরবের খেজুর চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কুয়েত প্রবাসী জাকির হোসেন। তার বাগানে ছয় প্রজাতির খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। বর্তমানে খেজুর ও চারা বিক্রিকরে বছরে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা উপার্জন করছেন প্রাক্তন এই প্রবাসী।
ফুলবাড়ীর স্বজনপুকুর এলাকায় তিন বিঘা জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাকির হোসেনের খেজুর বাগান। তার বাগানে বর্তমান প্রায় ৮০টি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি গাছে পর্যাপ্ত ফল ধরেছে। মরিয়ম, আজওয়া, খলিজি, মেডজুল, বাহির ও আম্বার জাতের গাছ আছে। প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত ফল এসেছে। এসব খেজুর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে পাক ধরবে। সুস্বাদু এই খেজুর প্রতিকেজি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
বাগানের পাশে আরও এক একর জমিতে জাকির হোসেন তৈরি করেছেন খেজুর গাছের নার্সারি। নার্সারিতে তৈরি করেছেন প্রায় ১২ হাজার চারা। এখান থেকে সাধারণ চারা বিক্রি করছেন তিনি ১০০০ টাকা করে এবং কলমি চারা বিক্রি করছেন প্রতিটি ১৫ হাজার টাকা করে।
খেজুর চারার নার্সারি
১৯৯৯ সালে কাজের উদ্দেশ্যে কুয়েতে যান জাকির হোসেন। প্রায় ২০ বছর থাকেন তিনি প্রবাসে। সেখানে সৌদি আরবের বিভিন্ন জাতের খেজুরের বাগান দেখে উৎসাহিত হন তিনি। ২০১৭ সালে তিনি ১২ কেজি পাকা খেজুর দেশে আনেন। সেই খেজুর থেকে চারা তৈরিতে সফল হন জাকির। প্রথমে ১৯টি চারা তৈরি করে তার পরিচর্যা করেন। চার বছর ধরে গাছগুলোর যত্ন নেওয়ার পর ২০২২ সালে তিনটি গাছে প্রথমবারের মতো ফল আসে। পরের বছর আরও নয়টি গাছে ফল আসে।
প্রথম তিনটি গাছে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি করে খেজুর ধরেছিল। পরে নয়টি গাছে গড়ে ৮০-৯০ কেজি করে খেজুর ধরে। বর্তমান প্রতিটি গাছে ১৫০ থেকে ২০০ কেজি খেজুর ধরেছে। বর্তমানে বাগানটিতে তিন জন শ্রমিক কাজ করেন।
এলাকাবাসী জিল্লুর রহমান বলেন, “আমাদের এলাকায় এই প্রথম সৌদি আরবের সুমিষ্ট খেজুর চাষ হচ্ছে। আমাদের দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। আমি জাকির ভাইয়ের কাছ থেকে কয়েকটি চারা সংগ্রহ করেছি। গাছগুলো অনেকটা বড় হয়েছে। আশা করছি খেজুর চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারব।”
কাঁদি ভরা খেজুর
বাগানশ্রমিক রেজাউল করিম বলেন, “জাকির ভাইয়ের খেজুর বাগান তৈরির শুরু থেকে আমি কাজ করছি। গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি খেজুর ধরেছে। খেজুর খুবই সুস্বাদু এবং মিষ্টি। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন এই বাগান দেখতে। আমরা এই বাগানে তিন জন কাজ করি। এখান থেকে যা দিন হাজরা পাই তা দিয়ে সংসার ভালই চলে।”
খেজুর বাগানমালিক জাকির হোসেন বলেন, “আমি ১৯৯৯ সাল থেকে কুয়েতে ছিলাম। সেখানে সৌদি আরবের বিভিন্ন জাতের খেজুর চাষ করতে দেখেছি। অনেক বাগান আছে। তখন চিন্তা করি, কেন আমার দেশে এই খেজুর হবে না? দেশে ফিরে প্রথমে পরিত্যক্ত ২০ শতক জমিতে চারা তৈরি করে আবাদ শুরু করি। ভাল ফলনও হয়। বর্তমান তিন বিঘা জমিতে বাগান করেছি। আমি এখানে খেজুরের চারার নার্সারি তৈরি করছি। সাধারণ চারা এক হাজার টাকা এবং কলমি চারা ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। বর্তমান আমি বছরে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার খেজুর ও চারা বিক্রি করছি।”
ফুলবাড়ী উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মো. শাহানুর রহমান বলেন, “ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রথমবারের মতো জাকির হোসেন নামে একজন কুয়েত ফিরত ব্যক্তি সৌদি আরবের সুমিষ্ট খেজুর চাষ করছেন। এটা এলাকাবাসীর জন্য গৌরবের। এই জেলা ধান ও লিচুর জন্য বিখ্যাত। আশা করছি, খেজুরের জন্যও বিখ্যাত হবে। আমরা নিয়মিত ওই খেজুরের বাগান পরিদর্শন করছি এবং মালিককে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি।”
ঢাকা/এস