যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজে সহযাত্রীর ওপর আক্রমণের অভিযোগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণ গ্রেপ্তার
Published: 4th, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে একটি উড়োজাহাজের ভেতরে সহযাত্রীর ওপর আক্রমণের অভিযোগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ জুন। ফ্রন্টিয়ার এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি ফিলাডেলফিয়া থেকে মায়ামি যাচ্ছিল।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ২১ বছর বয়সী ইশান শর্মা যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের নিউয়ার্ক শহরের বাসিন্দা। একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, উড়োজাহাজে কিয়ানু ইভানস নামে এক যাত্রীর সঙ্গে তিনি মারামারি করছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, ইশান শর্মা ও ইভানস একে অপরের গলা চেপে ধরার চেষ্টা করছেন এবং আশপাশের যাত্রীরা তাঁদের দুজনকে থামানোর চেষ্টা করছেন।
ইভানস পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, ‘বিনা উসকানিতে’ ইশান তাঁর ওপর আক্রমণ করেন। ইশান শর্মা নিজের নির্ধারিত আসনে ফিরে যাওয়ার সময় হঠাৎ তাঁর গলা চেপে ধরেন।
ইভানস আরও অভিযোগ করেন, ইশান তাঁর গলা চেপে ধরে অদ্ভুতভাবে হাসি দিচ্ছিলেন। ইভানস বলেন, ‘এ সময় ইশান আমাকে বলেছিলেন, “তুমি একজন দুর্বল, সাধারণ মানুষ। আমাকে চ্যালেঞ্জ করলে তোমার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।”’
উড়োজাহাজে ইশান শর্মার এক আসন সামনে বসা ছিলেন ইভানস। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর তিনি টয়লেটে যান এবং বিষয়টি কেবিন ক্রুদের জানান। তাঁরা তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, সমস্যা হলে যেন তিনি সহায়তা চেয়ে বোতাম চাপেন।
পরে ইভানস অভিযোগ করেন, শর্মা বারবার তাঁকে ‘মেরে ফেলার হুমকি’ দিতে থাকলে তিনি বোতাম চাপেন।
এরপরই পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়।
ইভানস বলেন, ‘বোতাম চাপার পর ইশান আমার দিকে খুব রাগান্বিতভাবে তাকাচ্ছিলেন। আমরা একে অপরের চোখে চোখ রাখছিলাম, মাথা একে অপরের দিকে ছিল। হঠাৎ তিনি আমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেন। তখন আমার শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া কাজ করে, লড়াই বা পালানোর মতো। কিন্তু উড়োজাহাজের ভেতরে জায়গা খুব অল্প। তাই আমি শুধু নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি।’
উড়োজাহাজ অবতরণ করলে পুলিশ ইশানকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে অন্যের ওপর শারীরিকভাবে আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার আদালতে ইশান শর্মার আইনজীবী বলেন, তাঁর মক্কেল ধ্যান করার সময় ঘটনাটির শুরু হয়েছিল।
একটি সংবাদমাধ্যমে ওই আইনজীবী দাবি করেন, ‘আমার মক্কেল এমন একটি ধর্মের অনুসারী, যেখানে ধ্যান করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, তাঁর পেছনে বসা যাত্রীটি সেটা পছন্দ করেননি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
হাসিনার আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপন ৭ জুলাই
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করেছে প্রসিকিউশন। পরে গতকাল মঙ্গলবার শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তি উপস্থাপনে ৭ জুলাই দিন ধার্য করেন বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মামলার অন্য আসামি হলেন কারাবন্দি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ট্রাইব্যুনালে তাঁর পক্ষে ছিলেন জায়েদ বিন আমজাদ।
গতকালও ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করে বিটিভি। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দাখিল করা পাঁচটি অভিযোগ পড়ে শোনান এবং অভিযোগ গঠনের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে হত্যা, নির্যাতন ও আক্রমণ চালানো হয়েছিল নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। পরিমাণ, সংখ্যা ও স্থানের ব্যাপকতায় এ অপরাধ ছিল বিস্তৃত এবং ব্যাপক।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশসহ অন্যান্য সহযোগী বাহিনী চেইন অব কমান্ড মেনে সব জায়গায় একই পদ্ধতিতে গণহত্যা চালায়। সারাদেশে একই পদ্ধতিতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধের ঘটনায় যেসব অভিযোগ আমরা জমা দিয়েছি, তার পুরোটা ছিল বিস্তৃত ও পদ্ধতিগত, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে প্রতীয়মান। আমাদের আবেদন, অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক।
প্রসিকিউশনের বক্তব্য উপস্থাপনের পর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন প্রস্তুতির জন্য দুই সপ্তাহ সময় আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল সময় দিয়ে ৭ জুলাই তাঁর যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন।
এদিকে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন আমির হোসেন। ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে আর কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এমন মামলা হয়নি। এটি অতি গুরুতর অভিযোগের মামলা। এ কারণে ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়েছি। আদালত যে সময় দিয়েছেন, তার মধ্যেই প্রস্তুতি নিতে পারব আশা করছি। আসামিদের খালাস করার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।
গত ২৪ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার ‘নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে।
হাসিনাসহ ২৩ জনের হাজিরে বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের পাঁচ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৩ আসামিকে আদালতে হাজিরে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ বিষয়ে আগামী ২০ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
অন্য আসামি হলেন– শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য কবির আল আসাদ, সদস্য তন্ময় দাস, সদস্য নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, প্লট বরাদ্দে অনিয়মের ছয়টির মধ্যে একটি মামলায় গত ১৭ জুন আদালত নির্দেশ দিলেও গেজেট হয়নি। অন্য পাঁচ মামলার ২৩ আসামি পলাতক। আমরা তাদের আদালতে হাজিরে গেজেট প্রকাশের আবেদন করি। আদালত বিজি প্রেসের মাধ্যমে আসামিদের হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।