হাসারাঙ্গাকে সামলানোর যে পরিকল্পনা বাংলাদেশের
Published: 5th, July 2025 GMT
বিকেলে পিচে রোল দেওয়ার সময় কিউরেটর বল ফেলে দেখছিলেন ২২ গজ জুড়েই বল বাউন্স করে কিনা। পিচিং স্পটগুলোতে বল ভালোই লাফাচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কী বার্তা নিতে পারলেন, তা জানা নেই। ভুল বার্তা নিয়ে থাকলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও কামিন্দু মেন্ডিস কিন্তু উইকেট শিকারের উৎসবে মেতে উঠতে পারেন।
কারণ প্রেমাদাসায় ওয়ানডে ক্রিকেটটা ট্রিপিক্যাল উইকেটে খেলা হয়। সফরকারী দলকে পরাজয়ের স্বাদ দিতে এই কৌশল নেয় স্বাগতিকরা। রোহিত শর্মারাও কলম্বোর এই মাঠে হেরে গেছেন গত বছর। সেখানে ট্রানজেকশনে থাকা বাংলাদেশের মতো দলের পক্ষে অলআউট ক্রিকেট খেলা কঠিন। এটা জেনেবুঝেই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড তিন ম্যাচ সিরিজের দুটিই রেখেছে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে।
তাই বলে এই কন্ডিশন একেবারে অজেয় নয়। এই মাঠেই ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের সেই জয় প্রেরণা জোগাতে না পারলেও গুছিয়ে ভালো ক্রিকেট খেলা গেলে স্বাগতিকদের বিপক্ষে কলম্বো জয়ের সম্ভাবনা থাকবে।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার খেলোয়াড় ও নির্বাচক হিসেবে প্রেমাদাসার কন্ডিশন দেখেছেন। তিনি জানান, এই মাঠের পিচ দ্রুত ভাঙে। যে কারণে পরে ব্যাট করা দলের পক্ষে ম্যাচ জেতা কঠিন হয়ে পড়ে। টস জিতে দলগুলো তাই আগে ব্যাটিং নেয়। কলম্বোর এই শুষ্ক মৌসুমে দাঁড়িয়ে থাকাই যেখানে কঠিন, সেখানে ৮ ঘণ্টার ওয়ানডে ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ধরে রাখা খুবই কঠিন বলে মনে করেন বাশার।
একজন সাবেক ব্যাটার হিসেবে মিরাজদের জন্য তাঁর পরামর্শ উইকেটে গিয়ে সেট হয়ে হওয়ার চেষ্টা করা। প্রথম ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও একই কথা বলেছেন ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে, ‘এখানে যে রকম উইকেট, যারা সেট হবে তাদের লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। আমি শান্ত ভাই যেহেতু সেট ছিলাম আর ৫ থেকে ১০ ওভার থাকতে পারলে ম্যাচটি বের হয়ে আসত। পরবর্তী ব্যাটারদের জন্য তা ভালো হতো।’
বাংলাদেশের জন্য সিরিজ বাঁচিয়ে রাখতে আজকের ম্যাচটি একপ্রকার ফাইনাল। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে চাপহীন খেলা গেলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। টসে জিতে আগে ব্যাটিং করতে পারলে ভালো। সেদিক থেকে মিরাজের টস ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। ওপেনার তামিমও জয়ে ফেরার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, ‘অবশ্যই পরের ম্যাচে ফেরার সুযোগ আছে আমাদের। কারণ তিন ম্যাচের সিরিজ, এক ম্যাচ শেষ হয়েছে। পরের ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ফিরতে পারলে টুর্নামেন্ট জিততে পারব।’
দুই বাঁহাতি ব্যাটার তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত জুটি গড়ায় ১৭ ওভারেই ১০০ রানে পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। টার্গেট রানরেট কমে এসেছিল চারে। ছোট ছোট দুটি জুটি হলেই ম্যাচ নিজেদের হাতে থাকত বলে জানান তামিম। আগের ম্যাচের ব্যাটিং কলাপস ভুলে গিয়ে ইতিবাচক স্মৃতি নিয়ে মাঠে নামতে চান আজ তিনি, ‘নেতিবাচকের চেয়ে ইতিবাচক অনেক কিছু ছিল। আমরা বোলিংয়ে ভালো একটা শুরু পেয়েছি। বোলিংয়ের শেষটা অনেক ভালো ছিল। ফিল্ডিং ভালো ছিল। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ভালো ছিল। ১৭ ওভারের পর একটি কলাপস হয়েছে। সেখান থেকে আর ফিরতে পারিনি। যেটা হয়েছে, সেটা অপ্রত্যাশিত। আর বাঁহাতি ব্যাটারদের চেষ্টা করতে হবে হাসারাঙ্গাকে খেলার।’
জেতা ম্যাচ হারের হতাশায় ডুবে থাকা বাংলাদেশ গতকাল ঐচ্ছিক অনুশীলন করেছে; যেখানে ছিলেন না লিটন কুমার দাস, তানজিম হাসান সাকিব ও মুস্তাফিজুর রহমান। বিশ্রামে সতেজ হয়ে আজ মাঠে নামবেন তারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি