সংস্কার প্রশ্নে ভিন্নমত এলে প্রস্তাব সংশোধন করছে ঐকমত্য কমিশন: আলী রীয়াজ
Published: 7th, July 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্নমত জানালে প্রস্তাব সংশোধন করে আবার উপস্থাপনের চেষ্টা করছে কমিশন।
আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে আসার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দলগুলো যেহেতু কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে জোর দিচ্ছে, তাই কমিশন চেষ্টা করছে দলগুলোর সঙ্গে থাকার।
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের দশম আলোচনার শুরুতে এ কথা বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আজকের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও নারী প্রতিনিধিত্ব।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সে বিষয়গুলো দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় আনেনি কমিশন।
ঐকমত্যের স্বার্থে কমিশনের নমনীয় অবস্থান ব্যক্ত করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, কমিশন জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব করলে ভিন্নমত জানায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। পরে এ প্রস্তাবকে সংশোধন করে আবার উপস্থাপন করে করা হয়।
রাষ্ট্রের মূলনীতির প্রস্তাবের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় কমিশনের পক্ষ থেকে বহুত্ববাদের প্রস্তাবে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের আপত্তি ছিল। তাই পরবর্তী সময়ে কমিশন এ প্রস্তাব আর রাখেনি।
ঐকমত্যের আলোচনা শেষ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ের স্বল্পতা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোরও নিজস্ব কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ, যত বেশি সম্ভব আলোচনায় অংশ নিয়ে অমীমাংসিত আলোচনা সম্পন্ন করবেন।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজকের আলোচনায় আরও উপস্থিত আছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর য য় র প রস ত ব র আল চ র প রস
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বামধারার চার দল
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগেই সংশোধনের দাবি জানিয়েছে বাম ধারার চারটি দল। জুলাই জাতীয় সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংশোধিত খসড়া তাদের দিতে হবে, না পেলে সনদে সই করবে এই দলগুলো।
দলগুলো হলো-বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিপিবির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে দলগুলোর শীর্ষনেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ কাফী রতন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ঐকমত্য কমিশনের যাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বলেছিলেন, সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে শুধু সেগুলোই ঐকমত্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একমত পোষণ করেছিলাম এবং ঐকমত্য কমিশনের সব সভায় উপস্থিত থেকে আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি। কিন্তু জুলাই সনদের যে চূড়ান্ত কপি গত ১৪ অক্টোবর আমাদের কাছে পাঠিয়েছে, সেখানে দেখলাম সর্বসম্মত বিষয় ছাড়াও নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া প্রস্তাবগুলো সনদে যুক্ত করেছে। আমাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্টগুলোর কারণও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি।”
দলগুলো কেন জুলাই সনদে সই করবে না, তার কারণগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
বলা হয়, “জুলাই সনদের প্রথম অংশে পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি, বারবার সংশোধনী দিলেও সেগুলো সন্নিবেশিত করা হয়নি।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ষষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ এবং ৭ম তফসিলে থাকা ‘প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। অথচ জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে; পটভূমিতে অভ্যুত্থান–পরবর্তী সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার কথা আগে পাঠানো খসড়া সনদে উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত সনদে ১০৬ অনুচ্ছেদের কথা বাদ দেওয়া হয়েছে।”
এসব বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাদের পক্ষে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান বজলুর রশীদ ফিরোজ।
তিনি বলেন, “সংবিধানে বিদ্যমান চার মূলনীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এবং ১৫০(২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানের তফসিল পরিবর্তনে সম্মতি প্রদান ও আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না এমন বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হয়—এমন কোনো সনদে ভিন্নমত দিয়ে আমরা স্বাক্ষর করতে পারি না।”
তাছাড়া জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার ৩ নম্বর-এ ‘জুলাই সনদ নিয়ে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে না’ বলে যে কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এটি নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে মনে করে দলগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এত দিনের আলোচনায় যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়েছে কেবল সেসব বিষয়েই সবার স্বাক্ষর নেওয়া যেতে পারে।”
ভিন্নমতগুলো অতিরিক্ত (এনেক্স) প্রতিবেদন হিসেবে সনদে সংযুক্ত থাকতে পারে বলে মনে করে তারা।
ভিন্নমত থাকলে জুলাই সনদের অঙ্গীকার কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ।
তিনি বলেন, “অঙ্গীকারনামার ২ নম্বর ধারায় জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে বা যথোপযুক্ত স্থানে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। আমরাও সর্বসম্মত জুলাই সনদ সংবিধানে যুক্ত করার পক্ষে। কিন্তু নোট অব ডিসেন্টসহ কীভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ