যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব চ্যালেঞ্জ করে করা মামলার শুনানি করবেন সুপ্রিম কোর্ট
Published: 6th, December 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া কিছু শিশুর জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার আছে কি না—সেই প্রশ্নে হওয়া একটি মামলার শুনানি করতে সম্মত হয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই তিনি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী দম্পতিদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া বন্ধে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি নিম্ন আদালত একের পর এক রায় দিয়ে সে সিদ্ধান্তকে আটকে দেন।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব চ্যালেঞ্জ করে করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য এখনো কোনো তারিখ ঠিক করা হয়নি। মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব ঠেকাতে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ দেওয়ার পরপরই তা আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। এ সময় ফেডারেল আদালতের কয়েকজন বিচারক রায় দেন যে এটি সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। একই সময়ে দুটি ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত ওই আদেশ কার্যকর করার ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন।যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর আওতায় প্রায় ১৬০ বছর ধরে এ নীতি প্রতিষ্ঠিত যে দেশটিতে জন্মগ্রহণকারী যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে বিবেচিত হবে। তবে শুধু কূটনীতিক ও বিদেশি সামরিক বাহিনীর সন্তানদের ক্ষেত্রে এ নীতিটা আলাদা।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে কিংবা অস্থায়ী ভিসায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের সে দেশে জন্ম নেওয়া সন্তানদের নাগরিকত্ব না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দেশের অভিবাসনব্যবস্থায় সংস্কার আনতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিস্তৃত চেষ্টার অংশ হিসেবে এটি করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার ওপর উল্লেখযোগ্য হুমকি মোকাবিলা করাই এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য।
মামলায় বাদীপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) নামের সংগঠন। এর জাতীয় আইনি পরিচালক সেসিলিয়া ওয়াং বিবিসির মার্কিন সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিবিএসকে বলেন, ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে নাগরিকত্বের যে মৌলিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা কোনো প্রেসিডেন্ট বদলে দিতে পারেন না।
এক বিবৃতিতে ওয়াং বলেন, ‘আমাদের আইন এবং জাতীয় ঐতিহ্য অনুসারে ১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্মানো প্রত্যেকেই জন্মসূত্রে নাগরিক বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। আমরা আশা করছি, এ দফায় সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টির চূড়ান্ত সমাধান হবে।’
গৃহযুদ্ধ শেষে মুক্তি পাওয়া দাস ও তাঁদের সন্তানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী আনা হয়েছিল। সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা বিদেশিদের সন্তান বা অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্য এটি আনা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মালেই নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে—এ ধারণা ভুল।ডি জন সাওয়ার, যুক্তরাষ্ট্রের সলিসিটর জেনারেলবিশ্বে প্রায় ৩০টি দেশ আছে, যারা নিজেদের সীমানার মধ্যে জন্ম নেওয়া যেকোনো শিশুকে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেয়। যুক্তরাষ্ট্র তেমনই একটি দেশ।
অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব ঠেকাতে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ দেওয়ার পরপরই তা আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। এ সময় ফেডারেল আদালতের কয়েকজন বিচারক রায় দেন যে এটি সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। একই সময়ে দুটি ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত ওই আদেশ কার্যকর করার ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন।
এরপর ট্রাম্প এ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান। গত জুনে সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়ে বলেন যে নিম্ন আদালতগুলো যে স্থগিতাদেশ জারি করেছেন, তা তাঁদের এখতিয়ারের সীমা ছাড়িয়েছে। তবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের মূল প্রশ্নে আদালত কোনো মন্তব্য করেননি।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন২১ জানুয়ারি ২০২৫১৪তম সংশোধনী পাস হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের পর। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মানো সাবেক দাসদের নাগরিকত্বের প্রশ্ন চূড়ান্তভাবে সমাধান করার জন্য এ সংশোধনী আনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সলিসিটর জেনারেল ডি জন সাওয়ার বলেন, গৃহযুদ্ধ শেষে মুক্তি পাওয়া দাস ও তাঁদের সন্তানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই সংশোধনীটি আনা হয়েছিল। সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা বিদেশিদের সন্তান বা অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্য এ সংশোধনী আনা হয়নি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মালেই নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে—এ ধারণা ভুল।
গত মে মাসে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট ও পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করা হলে ২০৪৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা ২৭ লাখ ও ২০৭৫ সালের মধ্যে তা ৫৪ লাখ বাড়তে পারে।গত মে মাসে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট ও পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করা হলে ২০৪৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত মানুষের সংখ্যা ২৭ লাখ ও ২০৭৫ সালের মধ্যে তা ৫৪ লাখ বাড়তে পারে।
আরও পড়ুনজন্মসূত্রে নাগরিকত্বের ইতি টানতে চান ট্রাম্প, অন্যান্য দেশের কী অবস্থা১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র দ র সন ত ন র জন য এ র জন ম জন ম ন
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রশ্নে মামলা শুনবে সুপ্রিম কোর্ট
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার সীমিত করে দেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা, এ বিষয়ে শুনানি হবে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট এখনো শুনানির দিন ঠিক করেনি। রায় পেতে কয়েক মাস সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মামলার রায় ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতি এবং কে মার্কিন নাগরিক, এই মৌলিক প্রশ্নে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। খবর বিবিসির।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই অবৈধ অভিবাসী বা অস্থায়ী ভিসাধারী অভিভাবকদের সন্তানদের জন্মগত নাগরিকত্ব বন্ধে নির্বাহী আদেশে সই করেছিলেন। তবে নিম্ন আদালত আদেশটি আটকে দিলে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর প্রথম বাক্যেই 'জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের' নীতির বিষয়টি বলা হয়েছে।
অভিবাসন কট্টরপন্থিরা অনেক সময় বলে থাকেন, এই নীতিই অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং এটিই গর্ভবতী নারীদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যারা স্থায়ী বা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে নেই, তাদের সন্তান নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য নন। এটি তাদের বৃহত্তর অভিবাসন সংস্কার ও জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের অংশ বলেও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) বলেছে, কোনো প্রেসিডেন্টই ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে দেওয়া জন্মগত নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি বদলাতে পারেন না।
প্রতিষ্ঠানের জাতীয় আইনি পরিচালক সিসিলিয়া ওয়াং বলেন, “১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নিলেই জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়, এটাই আইন ও জাতীয় ঐতিহ্য।”
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ চ্যালেঞ্জ করা হলে কয়েকজন ফেডারেল বিচারক রায় দেন যে এটি সংবিধানবিরোধী। পাশাপাশি দুটি ফেডারেল সার্কিট কোর্ট আদেশটি কার্যকর হওয়া আটকে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে। পরে সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বাতিল করে।
ট্রাম্প যখন এ বিষয়ে নির্বাহী আদেশে সই করেন তখনও বেশিরভাগ আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাহী আদেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সুবিধার সমাপ্তি টানতে পারেন না।
সংবিধানের একটি সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুবিধা বাতিল করা যায়, কিন্তু তার জন্যও দরকার হবে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট এবং তিন চতুর্থাংশ রাজ্যকে সেটি অনুমোদন করতে হবে।
পিউ রিসার্চ অনুযায়ী ২০১৬ সালে অবৈধ অভিবাসী বাবা মায়ের মোট সন্তান জন্ম নিয়েছিলো আড়াই লাখ, যা ২০০৭ সালের চেয়ে ৩৬ শতাংশ কম ছিলো।
কিন্তু ২০২২ সালে এমন ১২ লাখ মার্কিন নাগরিকের জন্ম হয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের ঘরে।
এসব সন্তানদের সন্তানও হবে মার্কিন নাগরিক। ২০৫০ সাল নাগাদ অবৈধ অভিবাসীদের সন্তান সংখ্যা ৪৭ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে দ্যা মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউট নামের একটি সংস্থা।
ঢাকা/ইভা