স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয়ের প্রত্যক্ষ বয়ান
Published: 5th, December 2025 GMT
শতাব্দীকাল ধরে বাংলার মুক্তিসংগ্রামের প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ থেকে শুরু করে গত শতকে পাকিস্তান আন্দোলন, অতঃপর ১৯৭১ সালে এ মাতৃকায় চূড়ান্ত বিজয়ের নিশান ওড়ে। পাকিস্তান আন্দোলনে এদেশবাসী একাত্ম হয়েছিল দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শোষণের হাত থেকে মুক্তির অন্বেষায়। ১৯৪৭ সালে সেই আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই দেশবাসী অনুধাবন করে ব্রিটিশ উপনিবেশের পরিবর্তে এবার তারা পশ্চিম পাকিস্তানের নতুন উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। যার ফলে সদ্য স্বাধীন এ ভূখণ্ডে ক্রমে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন নানা রূপে দানা বাঁধতে শুরু করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সেই আন্দোলন ষাটের দশকে গণ–আন্দোলনে রূপ নেয়। গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের রাজনীতির দুর্বোধ্য পাঠ কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর ইতিহাস গ্রন্থ ‘স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর’–এর মধ্য দিয়ে সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন। লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও তাঁর কাজের পরিধি এ গ্রন্থের বয়ানকে সত্য ও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
কামরুদ্দীন আহমদ গত শতকের চল্লিশের দশকে, প্রাক্–স্বাধীনতা পর্বে সক্রিয়ভাবে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছেন আলোচ্য গ্রন্থটিতে।কামরুদ্দীন আহমদ এ দেশের সর্বজনস্বীকৃত ও নির্ভরযোগ্য ইতিহাসপ্রণেতাদের একজন। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, রাজনীতিক, আইনজ্ঞ, শ্রমিকনেতা ও কূটনীতিক হওয়ার কারণে তাঁর ইতিহাস বর্ণনা আর সব ঐতিহাসিকের মতো নয়। ক্ষেত্রবিশেষে এ বয়ান বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। গত শতকের চল্লিশের দশকে, প্রাক্–স্বাধীনতা পর্বে, তিনি সক্রিয়ভাবে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছেন আলোচ্য গ্রন্থটিতে।
স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর
কামরুদ্দীন আহমদ
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রকর্ম অবলম্বনে মাসুক হেলাল
পৃষ্ঠা: ২৫৬; মূল্য: ৫৭৫ টাকা
বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন
১৯৫৮ সালে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ দেশের রাজনীতিতে এক করুণ অধ্যায়ের সূচনা হয়। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমলে এ দেশে প্রভূত উন্নতি, বিশেষ করে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হলেও গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে। কামরুদ্দীন আহমদ এই বইয়ে আইয়ুব খানের পুরো শাসনকাল বিশ্লেষণ করেছেন তাঁর সুনিপুণ লেখনীর মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতা–পরবর্তী বাংলাদেশের ঘটনাবলি তিনি পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে। বঙ্গবন্ধুর বিতর্কিত বাকশাল গঠনের বিষয়টিও উঠে এসেছে তাঁর বর্ণনে।
গত শতকের শুরু থেকে বাংলার অভ্যুদয়ের যে পটভূমি রচিত হয়েছে, তার পরিচিতি পর্ব দিয়ে গ্রন্থটির সূচনা। এরপর ক্রমে বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের রূপরেখা মূর্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে তিনি তুলে ধরেছেন অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে। ব্যক্তিজীবনে পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ করার সুবাদে তিনি ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান–ভারত যুদ্ধ ও তৎকালীন পূর্ববঙ্গে সেই যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর লেখায়। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট রচিত হওয়ার সন্ধিক্ষণকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনকে তুলে এনেছেন একজন দক্ষ পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিকোণ থেকে।
কামরুদ্দীন আহমদ এই বইয়ে আইয়ুব খানের পুরো শাসনকাল বিশ্লেষণ করেছেন তাঁর সুনিপুণ লেখনীর মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতা–পরবর্তী বাংলাদেশের ঘটনাবলি ও বঙ্গবন্ধুর বিতর্কিত বাকশাল গঠনের বিষয়টিও উঠে এসেছে তাঁর বর্ণনে।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়কাল এবং স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবের প্রত্যাবর্তন তিনি তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তুলে ধরেছেন। সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্রের বর্ণনা বইটির একটি অনন্য বিশেষত্ব। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে আবির্ভাব পর্বের মধ্য দিয়ে ‘স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর’ গ্রন্থটির যবনিকা টানা হয়।
মুখবন্ধে লেখক দাবি করেছেন তিনি পেশাগত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নন, দীর্ঘদিন রাজনীতি ও কিছুদিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে কিছুটা বাতিকগ্রস্ত হয়েই এ ধরনের বিশ্লেষণে হাত দিয়েছেন। তবে গ্রন্থটি পাঠ শেষে লেখকের এ দাবিকে নিছক বিনয় বলেই মনে হয়। তাঁর ক্ষুরধার বিশ্লেষণ আর বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণে বইটি বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিলে পরিণত হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইয় ব খ ন র ল র র জন ত র র জন ত ত স ব ধ নত র জন ত ক কর ছ ন ত হয় ছ গ রন থ র দশক
এছাড়াও পড়ুন:
ভোট পেছাতে কয়েকটি দল ষড়যন্ত্র করছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
ভোট পেছাতে কয়েকটি দল ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘তারা কারা—আপনারা জানেন। কিন্তু আপনারা কি সে সুযোগ দেবেন? বাংলাদেশের মানুষ কি সে সুযোগ দেবে? গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়াবে, জনগণই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত পথসভায় সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথাগুলো বলেন। পাঁচ দিনের সফরে আজ তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকা কক্সবাজার-১ আসনে (চকরিয়া-পেকুয়া) আসেন।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কুতুবউদ্দিনের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক এম মোবারক আলী, চকরিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার, বিএনপি নেতা এম আবদুর রহিম, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাছিমা আকতার প্রমুখ।
২০০৮ সালের নির্বাচন ও ওয়ান–ইলেভেন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ওয়ান–ইলেভেনের সরকার কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনে। সেই নির্বাচনে গণতন্ত্রের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গণতন্ত্র ফিরে পেতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জনগণকে অপেক্ষা করতে হয়েছে—রক্ত দিতে হয়েছে, শহীদ হতে হয়েছে, গণ–অভ্যুত্থান করতে হয়েছে। এখন আমরা ভোটাধিকার ফেরত পেয়েছি, কিন্তু প্রয়োগ করতে পারিনি।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আপসহীন নেত্রী হিসেবে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এ দেশের গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতার প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া। এ দেশের জনগণের ঐক্যের প্রতীক তিনি। আজ তিনি অসুস্থ। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। তাঁর শরীরে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁকে বিদেশে চিকিৎসায় যেতে দেওয়া হয়নি, দেশে চিকিৎসাও ঠিকমতো নিতে পারেননি। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে একাকিত্বে দিন কাটাতে হয়েছে। এত অত্যাচার সত্ত্বেও তিনি দুঃশাসনের সঙ্গে আপস করেননি, শেখ হাসিনার সঙ্গেও আপস করেননি। গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই–সংগ্রাম করে গেছেন।’
জামায়াতকে ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন অমুক মার্কায় ভোট দিলে বেহেশতে যাবে—এটা কেমন কথা? ইসলাম কি ভোটে দাঁড়িয়েছে? দুনিয়ার স্বার্থে ধর্মকে বিক্রি করা নাজায়েজ। আমাদের মা–বোনদের বিভ্রান্ত করতে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এটা সহ্য করা হবে না।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘এখন যারা জান্নাতের টিকিট বিক্রি করছে, তারা নিজেরাই কোথায় যাবে আল্লাহ জানেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে—এমন বক্তব্য স্বাধীনতার নামে ছড়ানো যাবে না।’
সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছে সালাহউদ্দিন আহমদ খুটাখালীতে পীর হাফেজ আবদুল হাইয়ের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর খুটাখালী ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন, খুটাখালী ও ডুলাহাজারার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করেন। বিকেল পাঁচটার দিকে ডুলাহাজারার পীর হাফেজ আবদুর রশিদের কবর জিয়ারত করেন তিনি।