নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পেশাদার ছিনতাইকারী বাবু ওরফে কিলার বাবুর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি ছিনতাই চক্র ড্রোন ব্যবহার করে নতুন কৌশলে অপরাধ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এলাকাবাসী জানায়,চক্রটি প্রথমে ড্রোন উড়িয়ে আশপাশে পুলিশি টহল বা সন্দেহজনক অবস্থান আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়। পরিস্থিতি ‘নিরাপদ’ মনে হলে তারা রাস্তায় নেমে ছিনতাই সংঘটিত সটকে পরে।চক্রটির এই নতুন কৌশলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক।

তথ্য মতে, ফতুল্লার ছাত্রলীগ ক্যাডার ৫ টি হত্যা সহ একাধিক বৈষম্যবিরোধী মামলার আসামী বাবু ওরফে কিলার বাবু প্রতি রাতেই বিসিক নতুন সড়কে অবস্থিত একটি গার্মেন্টেসের ছাদে অবস্থান করে ড্রোন উড়িয়ে পুলিশের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সময় সুযোগ বুঝে একাধিক দলে বিভিক্ত হয়ে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়কের পঞ্চবটী বাস স্ট্যান্ড মোড় থেকে পুলিশ লাইন লোহার মার্কেট পর্যন্ত ছিনতাই করে নিরাপদে পালিয়ে যায়।

ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়কের পঞ্চবটী বাস স্ট্যান্ড, বিসিক নতুন রাস্তা,পাচঁতলা, কলোনী,লোহার মার্কেট  এবং পুলিশ লাইন এলাকায় সম্প্রতি এ ধরনের ড্রোন দেখার ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় বাসিন্দারা। কয়েকজন পথচারী জানিয়েছেন, ড্রোন দেখার কিছুক্ষণ পরই একাধিক মোটরসাইকেল আরোহী এসে মোবাইল, টাকা-পয়সা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে অজানা ড্রোন উড়তে দেখা যায়। ড্রোনটি প্রথমে এলাকার আশপাশে পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি আছে কিনা, রাস্তায় মানুষের চলাচল কেমন—সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ চালায়। পরিস্থিতি ‘ঝুঁকিমুক্ত’ মনে হলেই কিছুক্ষণ পরেই একই এলাকায় ছিনতাই সংঘটিত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী আকাশে একটি ড্রোন উড়তে দেখতে পেয়ে তারা আতংকিত হয়ে পরে। এক পর্যায়ে তারা সংঘটিত হয়ে ড্রোনের উৎস খুজতে গিয়ে দেখতে পায় যে বিসিক নতুন রাস্তার এস,কে টাওয়ারের উপর থেকে শির্ষ যুবলীগ ক্যাডার বাবু ওরফে কিলার বাবু ড্রোন উড়িয়ে সেখানে অবস্থান করছে।

এমন সংবাদ পেয়ে সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী এস,কে টাওয়ারের সামনে এগিয়ে গেলে টাওয়ারটির নিচে অপেক্ষামান কিলার বাবুর সহোযোগিরা দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। স্থানীয় জনতা তখন এস,কে টাওয়ার চতূর্দিক ঘিরে রাখে এবং কিলার বাবুর কে গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকে।

পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে এস,কে টাওয়ারের ভবনে থাকা গার্মেন্টসের ভিতরে পুলিশ প্রবেশ করতে চাইলে কতৃপক্ষ গেইট খুলতে অস্বীকার করে। পরে স্থানীয় জনতার বিক্ষোভের মুখে গার্মেন্টস কতৃপক্ষ প্রায় দেড়ঘন্টা পর গেইট খুলে দিলে পুলিশ ভিতরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালায়। তবে কিলার বাবুকে তারা পায়নি।

কিলার বাবুকে না পেলেও তার সহোযোগি ফেলে যাওয়া বেশ কিছু দেশীয় তৈরি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। নাম প্রকাশ করার না শর্তে অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের এক সদস্য জানায়, আমরা গার্মেন্টসের বিভিন্ন কক্ষে খুঁজেছি কিন্ত পাইনি।

এই গার্মেন্টেসে একজন, দুইজন লোক ফেব্রিক্স ও কোন কার্টনের ভিতরে লুকিয়ে থাকলে কারো পক্ষে সম্ভব নয় খুজে বের করা। তিনি আরো বলেন আমরা গার্মেন্টসের ভিতরের সিসি ক্যামেরা দেখতে চেয়েছিলাম কিন্ত তারা সেটা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে। 

সোহান নামের এক  ভুক্তভোগী বলেন, গত কয়েক দিন পূর্বে রাত তিনটার দিকে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে  পঞ্চবটী বন বিভাগের সামনের রাস্তায় মিশুক করে যাওয়ার পথে ন, আকাশে ড্রোন উড়তে দেখি।ড্রোন দেখে ভাবলাম কেউ হয়তো ভিডিও করছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিনজন এসে আমার ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।”

স্থানীয়দের দাবি—এটি কোনো সাধারণ ছিনতাই নয়, পরিকল্পিত এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচালিত একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা দ্রুত পুলিশের টহল বৃদ্ধি এবং ড্রোন শনাক্ত করতে বিশেষ নজরদারি চাইছেন।

ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান,“বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। ড্রোন ব্যবহার করে অপরাধের চেষ্টার ঘটনার বিষয়ে তিনি অবগত নন।

আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞরা বলছেন—ড্রোন এখন কেবল বাণিজ্যিক নয়, অপরাধীদের হাতেও পৌঁছে গেছে। তাই নজরদারি, রেজিস্ট্রেশন ও মনিটরিং আরও কঠোর করা জরুরি।

এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, ড্রোন নজরদারি চালিয়ে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ আরও বেড়ে যেতে পারে যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ অপর ধ গ র ম ন টস এল ক ব স অবস থ ন ব যবহ র ছ নত ই অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সমালোচনার মুখে স্মার্টফোনে ‘সঞ্চার অ্যাপ’ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করল ভারত সরকার

ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকার তীব্র সমালোচনার মুখে ‘সঞ্চার সাথি’ অ্যাপ নিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। ভারতের স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সব প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনের সময় মুঠোফোনে সরকারি সাইবার নিরাপত্তা অ্যাপ ‘সঞ্চার সাথি’ ইনস্টল করার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তীব্র সমালোচনার মুখে আজ বুধবার ভারতের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞাপ্তিতে সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সঞ্চার সাথির ব্যবহার ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত হলো মুঠোফোন প্রস্তুতকারকদের জন্য এই অ্যাপ ইনস্টল করা বাধ্যতামূলক করা হবে না।’

ভারতের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) প্রাথমিক এক নির্দেশনায় স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারকদের নতুন ফোনে ‘সঞ্চার সাথি’ অ্যাপ ইনস্টলের পাশাপাশি সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে পুরোনো ফোনগুলোতেও অ্যাপটি যুক্ত করতে বলা হয়েছিল। নির্দেশটি গত সোমবার প্রকাশ্যে আসে। নির্দেশে আরও উল্লেখ ছিল, অ্যাপটির কোনো কার্যকারিতা নিষ্ক্রিয় বা সীমাবদ্ধ করা যাবে না।

‘সঞ্চার সাথি’ ভারত সরকারের তৈরি একটি সাইবার নিরাপত্তা অ্যাপ, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা প্রতারণামূলক কল, বার্তা এবং চুরি হওয়া মুঠোফোনের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন।

আজ বুধবার সকালে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া পার্লামেন্টে বলেন, ‘...সংগৃহীত প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে সরকারি নির্দেশে পরিবর্তন আনতে হলে আমরা তা করব।’ নজরদারি–সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গোপনে নজরদারি করা সম্ভব নয়। আর তা করাও হবে না।’

এর আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছিল, স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক অ্যাপল ও গুগল ভারত সরকারের নির্দেশনার বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রযুক্তি কোম্পানি দুটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি অপারেটিং সিস্টেম আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েডের মালিক। গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগ তাদের মাথাব্যথার বড় কারণ ছিল।

কোম্পানিগুলোর অবস্থান সম্পর্কে অবগত কিছু সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলছে, মুঠোফোন প্রস্তুতকারকদের বিশ্বের কোথাও রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো অ্যাপ নিজেদের ডিভাইসে আগেভাগে ইনস্টল করার নজির নেই। এটা করতে গেলে কোম্পানিগুলোকে ভারতে ব্যবহারের জন্য আলাদাভাবে আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড কাস্টমাইজ করতে হতে পারে, যা তাদের কার্যক্রমে জটিলতা তৈরি করবে।

আরও পড়ুনস্মার্টফোনে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাপ বাধ্যতামূলক করেছে মোদি সরকার, এ নিয়ে কেন এত উদ্বেগ২২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সমালোচনার মুখে স্মার্টফোনে ‘সঞ্চার অ্যাপ’ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করল ভারত সরকার