ঢাকার আগারগাঁওয়ে একটি বাসায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের ছয় জন দগ্ধ হয়েছেন।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। 

আরো পড়ুন:

টেকনোলজিস্ট-ফার্মাসিস্টদের দ্রুত কাজে ফেরার আহ্বান 

রাজশাহীতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কর্মবিরতি

দগ্ধরা হলেন—মোহাম্মদ জলিল মিয়া (৫০), আনেজা বেগম (৪০), আসিফ মিয়া (১৯), সাকিব মিয়া (১৬), ইভা (৬) ও মনিরা (১৭)।

তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা মেয়ে জামাই আফরান মিয়া বলেন, “আমার শ্বশুর জলিল মিয়া আগারগাঁওয়ের পাকা মার্কেট ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বাম পাশের একটি বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। আজ ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আকস্মিক গ্যাসের লাইন বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আমার শ্বশুরের পরিবারের ছয়জন দগ্ধ হয়। পরে আমরা খবর পেয়ে সকাল পৌনে ৮টার দিকে তাদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসি।”

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো.

ফারুক বলেন, “আজ সকালে আগারগাঁও এলাকা থেকে নারী ও শিশুসহ ছয়জনকে দগ্ধ অবস্থায় ঢামেকের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের ড্রেসিং চলছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানিয়েছি।”

ঢাকা/বুলবুল/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন ব্লক তৈরির চেষ্টা পাকিস্তানের, কিন্তু কতটা সফল হবে

বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান নিয়ে সম্প্রতি একটি ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এটা এ অঞ্চল এবং এ অঞ্চলের বাইরের অন্যান্য দেশকে নিয়ে আরও সম্প্রসারিত হয়ে পারে। গত বুধবার ‘ইসলামাবাদ কংক্লেভ’ ফোরামে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এ মন্তব্য করেছেন।

ফোরামে ইসহাক দার বলেন, ‘আমরা ‘‘একজন জিতলে, অন্যজন হারবে’’—এমন নীতির পক্ষে নই। আমরা সবসময় সংঘাতের বদলে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছি।’

পাকিস্তান মূলত চীনকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বিকল্প ব্লক তৈরি করতে চায়। এমন এক সময়ে তারা এটা করতে চাচ্ছে, যখন এ অঞ্চলের প্রধান আঞ্চলিক জোট দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনার কারণেই সংস্থাটি প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে।

গত জুনে চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং শহরে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের কূটনীতিকেরা ত্রিপক্ষীয় আলোচনা করেন। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান উন্নত করা ছিল আলোচনার বিষয় ছিল। তবে তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, ‘তৃতীয় কোনো পক্ষকে নিশানা করে এ আলোচনা করা হয়নি।’

গত জুনে চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং শহরে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের কূটনীতিকেরা ত্রিপক্ষীয় আলোচনা করেন। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান উন্নত করা ছিল আলোচনার বিষয় ছিল। তবে তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, ‘তৃতীয় কোনো পক্ষকে নিশানা করে এ আলোচনা করা হয়নি।’

কিন্তু গত বুধবার এমন এক পরিস্থিতিতে ইসহাক দারের মন্তব্য এল, যখন দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক উত্তেজনা সম্প্রতি বেড়েছে। গত মে মাসে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত এবং পাকিস্তান চারদিনের পাল্টাপাল্টি বিমান ও ড্রোন হামলায় জড়িয়ে পড়ে। এটা এ অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

অন্যদিকে গত বছরের আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এর পর ঢাকা ও নয়াদিল্লির সম্পর্কে বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গতমাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। কিন্তু ঢাকার বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়নি নয়াদিল্লি।

এমন একটি পটভূমিতে ভারতকে বাদ দিয়ে বা অন্তত তার প্রভাব সীমিত করার লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ নিয়ে পাকিস্তান নতুন ব্লক তৈরির যে চেষ্টা করছে, তা কি সফল হবে? বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান ছাড়া সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলো হলো-শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান ও আফগানিস্তান।

আমাদের নিজেদের জাতীয় উন্নয়ন প্রয়োজন। তা ছাড়া আঞ্চলিক অগ্রাধিকার কোনো দেশের অনমনীয় মনোভাবের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না এবং তা উচিতও নয়। আমি কোন দেশের কথা বলছি, তা আপনারা হয়তো বুঝতে পারছেন।ইসহাক দার, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীপাকিস্তানের প্রস্তাবে কী আছে

ইসলামাবাদ কংক্লেভে ইসহাক দার বলেন, নিজেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য। আরও দেশ ও অঞ্চলকে যুক্ত করতে এ উদ্যোগ সম্প্রসারিত করা হতে পারে।

ইসহাক দারের ভাষায়, ‘আমি আগেও যেমন বলেছি, অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তি ও সংযোগের মতো বিষয়গুলোতে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী বা সংগঠন তৈরি করা যেতে পারে।’

পাকিস্তানের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের নিজেদের জাতীয় উন্নয়ন প্রয়োজন। তা ছাড়া আঞ্চলিক অগ্রাধিকার কোনো দেশের অনমনীয় মনোভাবের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না এবং তা উচিতও নয়। আমি কোন দেশের কথা বলছি, তা আপনারা হয়তো বুঝতে পারছেন।’ ইসহাক দার এখানে স্পষ্টত ভারতের কথা ইঙ্গিত করেছেন।

ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে একটি ‘গঠনমূলক সংলাপ’ প্রক্রিয়া ১১ বছরের বেশি সময় ধরে স্থবির হয়ে আছে উল্লেখ করে ইসহাক দার বলেন, ভারতের সঙ্গে অন্যান্য আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশেরও ‘দোদুল্যমান সম্পর্কের’ অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ইসহাক দার বলেন, পাকিস্তান এমন একটি দক্ষিণ এশিয়া কল্পনা করে যেখানে বিভাজনের পরিবর্তে সম্পর্ক ও সহযোগিতা থাকবে, সমন্বিতভাবে অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিদ্যমান বিতর্কের শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হবে এবং মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে শান্তি বজায় থাকবে।

লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি রিসার্চের (সিএসএসপিআর) পরিচালক রাবিয়া আখতারের মতে, পাকিস্তানের প্রস্তাবটি এখন পর্যন্ত ‘যতটা না কার্যকর, তার চেয়ে বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ বলে মনে হচ্ছে।

আল–জাজিরাকে রাবিয়া বলেন, ‘সার্ক স্থবির থাকার এ কালে এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান আঞ্চলিক সহযোগিতা নতুনভাবে গড়ে তোলা ও বৈচিত্র্য আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।’

উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও গত চার দশকে সার্ক তার উদ্দেশ্য পূরণে সফল হয়নি। এর বড় কারণ, ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের টানাপোড়েন। প্রতিবেশী এ দুই দেশ ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের বিভক্তির মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতালাভ করে। পরে তিনটি পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ জড়িয়েছে তারা।সার্ক কী

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ১৯৮৫ সালে এক শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে সার্ক আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পরে ২০০৭ সালে আফগানিস্তান এতে যোগ দেয়।

সার্কের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কল্যাণ ও জীবনমানের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটানোই এ সংস্থার মূল লক্ষ্য।

কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও গত চার দশকে এ সংস্থা এসব উদ্দেশ্য পূরণে সফল হয়নি। এর বড় কারণ, ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের টানাপোড়েন। প্রতিবেশী এ দুই দেশ ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের বিভক্তির মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতালাভ করে। পরে তিনটি পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ জড়িয়েছে তারা।

২০১৬ সালে ইসলামাবাদে সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের অংশগ্রহণ না করার ঘোষণার পর সেই শীর্ষ সম্মেলন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়। ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক প্রাণঘাতী হামলার পর ইসলামাবাদের শীর্ষ সম্মেলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল নয়াদিল্লি। দেশটির দাবি, এ হামলার পেছনে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

রাবিয়া আখতার বলেন, ‘সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সর্বসম্মতি প্রয়োজন। আঞ্চলিক সহযোগিতাকে দ্বিপক্ষীয় বিরোধ থেকে আলাদা রাখার বিষয়ে বড় দুই সদস্যের রাজনৈতিক ইচ্ছা ছাড়া সার্ক এগোতে পারবে না।’

২০১৪ সালে আঞ্চলিক এ সংস্থার সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। বিশ্লেষকদের মতে, সার্ক বর্তমানে নিষ্ক্রিয় থাকলেও ভারত ও পাকিস্তান চাইলে সংস্থাটি এ অঞ্চলের জন্য অনেক কিছুই করতে পারে।

পাকিস্তানের প্রস্তাব এখন পর্যন্ত যতটা না কার্যকর, তার চেয়ে বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলে মনে হচ্ছে। সার্ক স্থবির থাকার এ কালে এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান আঞ্চলিক সহযোগিতা নতুনভাবে গড়ে তোলা ও বৈচিত্র্য আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।রাবিয়া আখতার, লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি রিসার্চের পরিচালকসার্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ

২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা ২০০ কোটির বেশি। এত বেশি জনসংখ্যা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য খুব সীমিত। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বার্ষিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ হয়ে থাকে, যার পরিমাণ মাত্র ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। অন্যদিকে, ১১ সদস্যের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোটের (আসিয়ান) বাণিজ্য এ অঞ্চলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ২৫ শতাংশের সমান। অথচ এসব দেশে বাস করেন মাত্র ৭০ কোটির মতো মানুষ। এটি সার্কভুক্ত দেশের অনেক কম।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা কমালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বছরে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সমান পণ্যের লেনদেন হতে পারে, যা দেশগুলোর বর্তমান বাণিজ্যের প্রায় তিন গুণ।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ খুব নগণ্য। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ২৪১ কোটি ডলার। ২০২৪ সালে তা কমে প্রায় অর্ধেক, তথা ১২০ কোটি ডলারে নেমে আসে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দুই দেশের মধ্যে তৃতীয় দেশ হয়ে অনেক বেশি অঙ্কের বাণিজ্য হয়ে থাকে। ২০২৪ সালে তা ছিল ১ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য কম হওয়ার জন্য আঞ্চলিক সংযোগের অভাবকে অন্যতম বড় কারণ বলে ধরা হয়।

২০১৪ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলো একটি মোটরযান চলাচল চুক্তি (এমভিএ) স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ চুক্তির আওতায় ইউরোপের আদলে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে গাড়ি ও ট্রাক চলাচলের কথা ছিল। একটি আঞ্চলিক রেলওয়ে সহযোগিতা হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার কারণে পাকিস্তান চুক্তি দুটি ঠেকিয়ে রেখেছে।

তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, উল্লিখিত অচলাবস্থার পর থেকে খুব কম হলেও সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কোনো বিশেষ উপলক্ষে দু-একবার একযোগে কাজ করা সম্ভব হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে করোনা মহামারি সময়ের কথা বলা যায়। তখন সংস্থাটির সদস্য দেশগুলো জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় একটি জরুরি তহবিল গঠন করে ৭৭০ কোটি ডলার সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল।

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের (এএসপিআই) দক্ষিণ এশিয়া উদ্যোগের পরিচালক ফারওয়া আমের আল–জাজিরাকে বলেন, ‘বৃহত্তর আঞ্চলিক স্বার্থে দুই দেশ (ভারত ও পাকিস্তান) যদি সীমিত পরিসরে হলেও সহযোগিতার উপায় খুঁজে বের করতে পারত, তবে অন্তত নীতিগতভাবে হলেও সার্ক পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হতো।’

আমের আরও বলেন, ‘কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা নিলে এমন অগ্রগতির সম্ভাবনা সুদূরপরাহত বলে মনে হয়।’

তবে পাকিস্তানের আগে অন্যান্য সদস্যও সার্ককে পাশ কাটিয়ে আঞ্চলিক অংশীদারত্ব গড়ার চেষ্টা করেছে। এমভিএ চুক্তির উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন) নিজেদের মধ্যে অনুরূপ একটি চুক্তি করেছে।

সিএসএসপিআরের পরিচালক রাবিয়া আখতার বলেন, বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট বিমসটেক– এর মতো অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থার সদস্য ভারত। ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড এ জোটের সদস্য।

ফারওয়া আমের বলেন, সামগ্রিকভাবে দেখলে বলতে হয় বিদ্যমান পরিস্থিতি সত্ত্বেও এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ‘স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদে বহুপক্ষীয়ের বদলে দ্বিপক্ষীয় ও ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাগুলোই আধিপত্য বিস্তার করবে।’ এ প্রবণতার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এক সময়ে মাত্র এক বা দুই দেশের সঙ্গে কাজ করায় সাধারণত ‘অধিক নমনীয়তা, স্পষ্ট প্রণোদনা ও বাস্তব ফলাফল অর্জনের সম্ভাবনা বেশি’ থাকে।

পাকিস্তানের প্রস্তাব কি কাজ করবে

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীন দন্ঠি আল–জাজিরাকে বলেন, তত্ত্বগতভাবে দেখলে মনে হয়, একটি নতুন আঞ্চলিক ব্লক তৈরির সুযোগ রয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘ভারত ও পাকিস্তানের শীতল সম্পর্কের কারণে সার্ক নীরবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় আরেকটি আঞ্চলিক ফোরাম তৈরির জন্য শূন্যতা তৈরি হয়েছে।’

এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির কারণে চীনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার দরজা খুলে গেছে।’

কিন্তু রাবিয়া আখতার মনে করেন, ‘প্রস্তাবটি আদৌ কার্যকর হবে কি না, তা দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে।’

প্রথমত, প্রচলিত কাঠামোগুলো স্থবির হয়ে পড়ার এ সময়ে (নতুন ব্লকে যুক্ত হতে যাওয়া) সম্ভাব্য দেশগুলো ছোট ও সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গোষ্ঠীবদ্ধ হওয়া নিয়ে কী–এমন কার্যকর মূল্য দেখতে পাচ্ছে, তা বোঝা দরকার। দ্বিতীয়ত, (নতুন ব্লকে) অংশ নিলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে (সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে) রাজনৈতিক মূল্য চুকাতে হবে কি না, তা-ও দেখতে হবে।

রাবিয়া আখতার মনে করেন, পাকিস্তানের প্রস্তাবিত আঞ্চলিক উদ্যোগের বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ প্রাথমিকভাবে আগ্রহ দেখাতে পারে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়ার বিষয়টি সীমিত পর্যায়ে থাকবে বলেও মনে হয়।

রাবিয়া আখতার বলেন, ‘আমার মনে হয়, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ এবং সম্ভবত ভুটানের মতো দেশগুলো পরীক্ষামূলক আলোচনায় আগ্রহী হতে পারে। প্রধানত যোগাযোগ, জলবায়ু অভিযোজন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো বিষয়ে এসব দেশ আগ্রহ দেখাতে পারে।’

বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা কমালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বছরে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সমান পণ্যের লেনদেন হতে পারে, যা দেশগুলোর বর্তমান বাণিজ্যের প্রায় ৩ গুণ।

তবে লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক বলেন, ভারতের আঞ্চলিক সংবেদনশীলতা এবং পাকিস্তান-চীনের সঙ্গে দেশটির বিস্তৃত ভূ–রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অর্থ হলো, (নতুন জোটে) সদস্য হওয়ার বিষয়ে (দেশগুলো) খুবই সতর্ক থাকবে।

প্রবীন দন্ঠি বলেন, পাকিস্তানের প্রস্তাব যদি সামনে এগোয়, তবে তা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে (সম্পর্কের) ব্যবধান আরও বাড়াতে পারে এবং একই সঙ্গে আঞ্চলিক পর্যায়ে চীনের সঙ্গে ভারতের প্রতিযোগিতাও বাড়তে পারে।

এসব জটিলতা সত্ত্বেও ফারওয়া আমের পাকিস্তানের প্রস্তাবটি ‘কৌশলগতভাবে সুসংগত’ বলে মনে করেন। পাকিস্তান বর্তমানে কূটনৈতিকভাবে ক্ষিপ্রগতিতে এগোচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশটি চীনের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে নতুন ও উন্নত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।’

এই বিশ্লেষক বলেন, ‘এ দ্বৈত-পথের সম্পৃক্ততা ইসলামাবাদের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। এটি দেশটির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে দেশটি এখন আঞ্চলিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আবারও নিজের অবস্থান দাবি করছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ